রাজনীতি

চাই সৎ রাজনীতিহীন ব্যক্তিত্ববান

বিশিষ্ঠজনদের ইসি ভাবনা- আগে মিডিয়ায় নাম প্রকাশ

বিশেষ প্রতিনিধি : বিশিষ্ঠজনদের ইসি ভাবনা’য় উঠে এসেছে সৎ রাজনীতিহীন ব্যক্তিত্ববান সম্পন্নদের ইসিতে আনতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠানোর আগে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করতে হবে। যাতে কোনো সুবিধাভোগী ইসিতে ঢুকতে না পারে।ইসি গঠনে গঠিত সার্চ কমিটিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিশিষ্ঠজনরা। আজ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামত নিয়েছে সার্চ কমিটি । সেখানে বিশিষ্টজনদের অধিকাংশই প্রস্তাব করেছেন রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠানোর আগে সেই নামগুলো প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে যাদের নামই প্রস্তাব করা হবে তারা যেন সৎ, নিষ্ঠাবান, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক হয় এবং তারা যেন পেশগত জীবনে রাজনৈতিক দলের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত না হোন। বিশিষ্টজনরা এই প্রস্তাব করলেও আসলে নাম প্রকাশ করা হবে কি না তা পরিস্কার করেনি সার্চ কমিটি। রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আর এক দফা বৈঠক শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সার্চ কমিটি।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাইঞ্জে সকাল সোয়া ১১ টায় প্রথম দফায় বৈঠক শুরু করে সার্চ কমিটি। সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় অংশ গ্রহণ করেন সার্চ কমিটির সদস্য বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। বৈঠকে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। প্রথম বৈঠকে বিশিষ্টজনদের মধ্যে ১৪ জন অংশগ্রহণ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার রোকনুদ্দিন মাহমুদ, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, ড. আসিফ নজরুল, ড. মাকসুদ কামাল, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি মাহফুজা খানম।

দ্বিতীয় দফায় দুপুর ২টা থেকে বৈঠক হয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টির ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বেসরকারি টেলিভিশন ৭১টিভির প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেলক হক বাবু, দৈনিক সমকালের প্রকাশক ও এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, দৈনিক জাগরণ সম্পাদক আবেদ খান, প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।
বৈঠক শেষে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জের সামনে বিশিষ্টজনরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানান সাংবাদিকদের।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির উচিত সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দেয়া। আমরা কিন্তু বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে না। কিন্তু তাদের আন্দোলন যদি সফলও হয়, কিন্তু ভালো ইসি না হলে তো ভালো নির্বাচনও হবে না। আমরা সার্চ কমিটিকেও বলেছি যেন, বিএনপিকে আলোচনায় আনার জন্য আবার চেষ্টা করার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বৈঠকে আমরা প্রত্যেকে বলার সুযোগ পেয়েছি। তারা আমাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। ‘যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তারা যেন কোনো সময় কোনোভাবে রাজনৈতিক দলের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত না হন। কোন সময় কোন টিভি টক শোতেও যদি সরকারের গুণগান গেয়ে থাকেন এরকম নাম যেন না আসে। কোনো সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাভোগীরা যেন ইসিতে না আসে। যারা অবসরগ্রহণের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তারা যেন কোনোভাবেই ইসিতে না আস। নির্বাচন কমিশনে যারা আসবে তাদের যেন অবশ্যই সুস্থ মানসিকতা থাকে ভালো ব্যক্তিত্ব থাকে ভালো নির্বাচন করার সৎ সাহস থাকে। আর যে নামই প্রস্তাব করা হয় সেই নামগুলো যেন প্রকাশ করা হয়।তিনি বলেন, এখানে আমাদের ডাকা হয়েছে আমরা মতামত দিয়েছি। আমরা কারো নাম প্রস্তাব করিনি। সার্চ কমিটির উপর আশা রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান বলেছেন, ‘আমরা মোটামুটি সবাই একমত দিয়েছি যে নামগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগে যেন প্রকাশ করা হয়। যদি কোনো নামে আপত্তি থাকে তাহলে মানুষ জানতে পারবে। পাশাপাশি এমন লোকের নাম প্রস্তাব করতে হবে যার শক্ত মানদণ্ড আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সার্চ কমিটির অনেক বড় দায়িত্ব। তারা যদি ভালো কমিশন গঠন করতে পারে নির্বাচন ভালো হবে। তাই তাদের বলেছি আপনাদের ওপর মানুষের আস্থা আছে আপনারা এমন কাজ করবেন যেন দেশের মানুষ বিশ্বাস রাখতে পারে।’

এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি মাহফুজা খানম বলেন, নির্বাচন কমিশনে যারা যাবেন তাদের প্রধান বৈশিষ্ট হতে হবে তিনি যেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হন। তারা যেন সৎ হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকনেতা অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশনের জন্য যাদের নাম পাঠাবেন তারা যেন সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা সুবিধাভোগী না হন। যারা টিম বিল্ডআপ করে কাজ করতে পারেন, তেমন লোককেই যেন ইসিতে পাঠানো হয়। তাছাড়া সার্চ কমিটি ইসি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর ১০ জনের নাম পাঠানোর চেয়ে ২০ জনের নাম পাঠানোই ভালো হবে বলে মত দেন তিনি।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ইসির জন্য যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তারা যেন কোন দলীয় সরকারের সময়ে সেটা এই সরকারের সময় হোক আর আগের সরকারের সময় হোক বিশেষভাবে দলীয় সুবিধাভোগকারী ব্যক্তি যেন না হয়। যারা রাজনৈতিক সরকারগুলোর আমলে পোস্টিং নিয়েছে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে তারা যেন না আসে।

ড. মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের দাবি ছিল অন্তভুক্তিমূলক নির্বাচন কমিশন যেন হয়। যাদের নিয়োগ করা হবে তাদের চাকরি জীবনের পুরো ইতিহাস দেখতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি সমর্থক এমন কাউকে যেন ইসিতে আনা না হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের জায়গায় ২০ জনের নাম দিয়ে যেন প্রকাশ করা হয়। যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তাদের অবশ্যই সৎ, নিষ্ঠাবান, কমিনিউকেশন স্কিল যাদের আছে এমন লোক থাকতে হবে। যারা দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা রাখে তাদের আনতে হবে। অনেকেই আছে কমিশনে থেকে দলগতভাবে কাজ করতে পারে না।

একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহি মোজাম্মেল বাবু বলেন, দেশে যে ধর্মের লোকসংখ্যা কম ইসিতে যেন যেসব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকে। তাছাড়া ইসিতে যেন নারি প্রতিনিধিত্ব থাকে তা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন তিনি। পাশাপাশি নামগুলো প্রকাশ করার বিষয়ে জোর দেন তিনি। সমকাল পত্রিকার প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, সার্চ কমিটি থেকে যে নাম প্রস্তাব করা হবে, তা যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘সার্চ কমিটির কাছে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব নাম জমা দিয়েছে তা প্রকাশ করতে বলেছি। নামগুলো প্রকাশ করলে জানা যাবে আসলেই রাজনৈতিক দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন চায় কি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সার্চ কমিটি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। আমাদের কথাগুলো রেকর্ড থেকে আবারও শুনবেন।’

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, এই ইসির ওপর অত্যান্ত গুরু দায়িত্ব। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন করতে হলে শক্তিশালী ইসি দরকার। যেটি করার দায়িত্ব এই সার্চ কমিটির। যাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক আছে, যাদের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক আছে তারা যেন আসে না। মাহফুজা খানম, বলেন, যাদের নাম রাস্ট্রপতির কাছে পাঠাবে তাদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট হতে হবে তিনি যেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হয়। তাদের সততা যেন থাকে। যাদের নাম আসবে তাদের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যেন জানতে পারি তাদের সততা আছে, অর্থের প্রতি যেন কোন মোহ না থাকে।

 

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button