একটি কার্টুন শেয়ারের অপরাধ মুশতাকের
ডেস্ক রিপোর্ট : কার্টুনিস্ট কিশোরের আঁকা প্রতিবাদ মূলক একটি কার্টুন ছবি ফেসবুকে নিজের আইডিতে শেয়ার করার অপরাধে লেখক মুশতাককে অন্যায়ভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা নামক কালো আইনে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। বারবার আবেদন করার পরেও তার জামিন মেলেনি। একটি কার্টুন শেয়ারের অপরাধ ও রাষ্ট্রের যারা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলায় জীবন দিতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন বক্তারা। শনিবার দুপুর ১২টায় ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে লেখক মুশতাক হত্যার এক বছরে বিচার নিশ্চিত করা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এক নাগরিক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আলোচকের বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, অনেক বুদ্ধিজীবী আছে যারা সরকারের সঙ্গেও আছে। আবার আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলছে। এখন দরকার রাস্তার আন্দোলন। একটা মানুষকে কি রকম নির্যাতন করে মারা হয়েছে। এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে যেভাবে আমরা একটা দিবস পালন করছি আর কেউ তো করছে না । সবাই কি ভয় পায়। কথা বলতে দেয় না যখন কথাই বলতে হবে। ঘরের মধ্যে বসে কথা বলে লাভ নেই। ঘরে বসে কথা বলে কিছু হচ্ছে না। অতীতেও দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। এখনও হচ্ছে। আমাদেরকে সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে। এটাই মানুষের টিকে থাকার একমাত্র ইতিহাস।মোশতাকের মত মানুষ আছে যারা আদর্শের জন্য জীবন দিয়ে গেছে। কিন্তু দিন দিন এমন মানুষ কমে যাচ্ছে। কতদূর গেছে শাসক গোষ্ঠী। আমি একুশ উপলক্ষে সভা করবো সেটার জন্য থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে থানা কে? একুশ থানার ওসি বেশি বোঝে নাকি আমরা বুঝি। তারপুরে নিয়ম মানার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু অনুমোদন দেয়নি।
বিশিষ্টনাগরিকদের মধ্যে অনলাইনে যুক্ত হয়ে রাখেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, লেখক মোশতাক হত্যা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই হত্যার বিচার হওয়া দরকার। বেঁচে থাকার অধিকার আমাদের মৌলিক অধিকার। এটা হরণ করা হয়েছে ডিজিটাল আইনের মাধ্যমে। বাংলাদেশে অনেকগুলো আইন করা হয়েছে যা জনস্বার্থে করা হয়নি। এগুলো ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য করা হয়েছে। এই আইন সংশোধন করলেই হবে না। এই আইন বাতিল করতে হবে। এই আইন মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। যে আইন মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় সেই আইন রাখার কোনও যথার্থতা নেই। সরকার অনেক বার আইন সংশোধনের কথা বলেছে কিন্তু কোনো রকম প্রতিফলন দেখি নি। এই আইন বাতিলের দাবিতে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও লেখক অধ্যাপক আসিফ নজরুল বৈলৈন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অত্যন্ত একটি খারাপ আইন। একটি খারাপ আইন যখন একটি খারাপ শাসকের হাতে থাকে, কতৃত্ববাদী ও সৈরাচার সরকারের হাতে থাকে তখন সেটা আরো ভয়ংক হয়ে ওঠে। যার সবশেষ আমরা দেখেছি লেখক মুশতাকের মৃত্যুর
মাধ্যমে। এই আইনে মুশতাক, কিশোরদের শুধু গ্রেপ্তার করা হয় নি। তাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। ভয়ংকর বিষয় হলো গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করে সরকার থেমে থাকে না। একজন অসুস্থ মানুষকে সামান্য এক স্বাস্থ্যখাতে ব্যবসায়ীর
দূর্নীতির সমালোচনা করার জন্য তার গ্রেপ্তার হওয়ার পর বারবার জামিন আবেদন করেও জামিন পাইনি। আমাদের সমাজে বড় বড় অপরাধীদের খুন, রাহাজানি ও ব্যাংক লুটপাটাকারীদের জামিনা না রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পেতে দেখি। আর
মুশতাকেরর মত নিরিহ মানুষ ৪-৫ বার জামিন আবেদন করে পান নাই। আমি এই ব্যপারে সরকারকে ধিক্কার জানাই। মুশতাকের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এই ঘটনার এখন পর্যন্ত কিশোরকে অব্যহতি দেওয়া হয় নাই । সাংবাদিক কাজল অব্যহতি পাচ্ছে না। আমরা দেখিছি ডিজিটাল মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তাদের কমপক্ষে ছয় মাস থেকে এক বছর আটকে রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ বিচারের আগেই তাদের বিচার করা হচ্ছে। এই আইনের পক্ষে কিছু লোক আছে। তারা বলে, জনগনের ডিজিটাল রক্ষায় এই আইন করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা সেটা দেখি না। প্রধানমন্ত্রী, সরকার, মন্ত্রী ও সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট বড় বড় পাওয়ার ফুল লোকদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের টু শব্দ না করা
যায় সে জন্য এই আইন করা হয়েছে।
বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, লেখক মুশতাককে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম। তিনি নির্লোভ মানুষ ছিলেন। এমন একজন মানুষের আত্মসম্মান বোধ ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মুশতাক কে
গ্রেপ্তার ও আটকে রাখার ও মৃত্যু প্রক্রিয়াটায় করা হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের মুখ খুলতে দেওয়া হয় না। এটা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন করতে দেওয়া হয় না। এই সমাজে আমাদের বাকরুদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়। লেখক মুশতাক মারা গিয়েছেন তিনি তো আর কিছু বলতে পারবে না। তবে তার সঙ্গে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা তো বলতে পারনে, যে পুলিশ সদস্যরা তাদের অত্যাচার করা হয়েছে। থানায় কোথায় কোথায় তাদের নির্যাতন করা হয়েছে। কি প্রক্রিয়ায় নির্যাতন করা হয়েছে। যা আইন সিদ্ধ না, সংবিধান সিদ্ধ না। যারা কথায় কথায় সংবিধান সংবিধান করেন তাই তো জানেন সংবিধান লঙ্গণের দৃষ্টান্ত কি না। এই সকল পুলিশদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে পাশাপাশি পুলিশ বিভাগের পরিবর্তন করতে হবে। কারণ পুলিশরা তো নিজেরা করে নাই। একটি সিস্টিম তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই হত্যার বিচার চাই। ফরেন্সিক, ময়নাতদন্ত যাই বলুক আমরা এই হত্যার বিচার চাই। আমরা এমন একটি
আইন চাই, রাষ্ট্র চাই যেখানে সকল নাগরিক রাষ্ট্রের কাছে নিরাপদ। যতই ভয় দেখাক না কেনো চুপ করে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু জুমে বক্তব্যে বলেন, এ একনায়ক ভোট ডাকাত অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হলে সকল বিরোধী দল একসাথে রাস্তায় নামতে হবে। তাহলে লেখক মোস্তাক হত্যার বিচার করা সহজতর হবে। আর দেশে জাতীয় সরকার গঠন করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবো।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধানসমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ডিজিটাল মামলা করার ধরনটি বেআইনি। মানুষের মৌলিক পরিপন্থি। এই মামলায় মধ্যরাতে মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কেউরে পাওয়া যায় আর কেউ একেবারেই গুম হয়ে যায়। একজন মানুষ কত দিন জামিন পাবে না। একজন মানুষ আদালত থেকে জামিন না পেয়ে জীবন থেকেই জামিন নিয়ে গেছেন। তার মৃত্যুর পরেও একই মামলা অন্যদের বিরুদ্দে চার্জশীট দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি স্তরে স্তরে মৌলিক অধিকায় লঙ্গন করা হচ্ছে। যা এখন বাংলাদেশে আইনি প্রক্রিয়া বলা হয়। দেশে যা ঘটছে যা মৌলিক অধিকার
পরিপন্থি। বাংলাদেশের মানুষ এই আইনি ব্যবস্থাকে নিয়ে নানা মুখি হয়রানির মধ্যে আছে। ক্ষমতায় থাকাই নাকি তাদের জীবনের নিরাপত্তা। কাজেই যারা গদি ধরে রাখতে তাদের জীবন রক্ষার্থে এ্ আইন প্রয়োগ করেছে। কাজেই এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে না।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচীব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, ডিজিটাল আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে নুর বলেন, আমরা যখন আন্দোলন শুরু করেছিলাম তখন সরকার সংশোধন করার আশ্বাস দিয়েছিল। সরকার যখন চাপে পরে তখন তাদের সুর নরম হয়। সরকারকে সংগঠিত করে রাজপথে আন্দোলন করতে হবে। কিছু মৌলিক দাবিতে আমাদের সমমনা দলগুলো একত্রিত হয়ে বিবাজনের রাজনীতির বাহিরে গিয়ে কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনাকে হঠাতে হলে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। অনেক হিসেব করে আমাদের আগাতে হবে। যারা আন্তর্জাতিকভাবে কালো তালিকা ভুক্ত হয়েছে তাদের অপসারণ দাবি করে আমরা আন্দোলন করতে পারতাম। কিন্তু সেটা আমরা করতে পারনি। এখন সময় এসেছে একত্রিত হয়েআন্দোলন করতে হবে। না হলে শেখ হাসিনা ১৮ সালের মত গোল দিয়ে চলে যাবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখবো।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জহিাঙ্গীর আলম মিন্টুর সঞ্চলনায় সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধন সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক,অনলাইনে
যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, লেখক মুশতাকের নামে দায়ের করা মামলার আসামী রাষ্ট্র সংস্কার আন্দালনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক দিদারুল ইসলাম ভূইয়া, মামলায় গ্রেপ্তার ও নির্যাতিত
ছাত্র নেতা রবিউল হাসান বাংলাদেশ জাতীয় লীগের চেয়ারম্যান ডা: শাহরিয়ার ইফতেখার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেন, মহিবুল্লা বাহার প্রমূখ।