জাতীয়

টিকা ঘুষ নিয়ে ফাজলামি! মুখোমুখি টিআইবি মুখ্যসচিব


বিশেষ প্রতিনিধি : কোভিড-১৯ টিকা কেনায় গড়ে ৬৯ টাকা ঘুষ দেওয়ার যে বিষয়ের অবতারণা করেছেন সেটি পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর বলে দাবি করেছে টিআইবি।
টিকায় ঘুষ কেনায় দুর্নীতি ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে (টিআইবি) অর্থায়নের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি বিএইচপির নাম জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। বরং এসব তথ্য বিভ্রান্তিকর, ভুল ও ধারণাভিত্তিক বলে দাবি করেছে টিআইবি।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, টিআইবি  যাদের টাকায় প্রপাগান্ডা চালায় তাদের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস।
তিনি বলেছেন, প্রতি ডোজ করোনার টিকা কেনায় ৬৯ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে টিআইবি। এ ধরনের অভিযোগের মানে কি? টিআইবিতে বেশি অর্থায়ন করে পরিবেশ দূষণের দায়ে বিভিন্ন দেশে কালো তালিকাভুক্ত অষ্ট্রেলিয়ান খনন কোম্পানি বিএইচপি। একটি কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত টিআইবি আমাদের দুর্নীতিবাজ বলে যাবে, ফাজলামি নাকি? আমরা কি চুরি করে বসে আছি? প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আক্ষেপ করে বলেন, ইমানের সঙ্গে কাজ করার পর ইমান ধরে টান দিলে বুকে ব্যথা পাই। দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি উভয় পক্ষকেই একে অপরের কাছে স্বচ্ছ হতে হবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (১৭ এপ্রিল) টিআইবি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে টিআইবি বলছে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস তার বক্তব্যে, টিআইবিকে উদ্ধৃত করে কোভিড-১৯ টিকা কেনায় গড়ে ৬৯ টাকা ঘুষ দেওয়ার যে বিষয়ের অবতারণা করেছেন সেটি পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।

টিআইবি দাবি করেছে, ১২ এপ্রিল টিআইবি প্রকাশিত ‘করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন : অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’  শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে ৬৯ টাকা ঘুষ দেবার বিষয়টি এসেছে টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রহীতাদের বুথ ফেরত জরিপের ফলাফলে। যা কোনোভাবেই টিকা কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত নয়। তিন হাজার ৩৯৩ জন টিকাগ্রহীতার দৈবচয়নের ভিত্তিতে ‘এক্সিট-পোল’ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে দুই শতাংশ টিকাগ্রহীতা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হন, যার মধ্যে সময়ক্ষেপণ, টিকাকেন্দ্রে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ও সরকারি কর্মকর্তাদের সুবিধা দেওয়া, দুর্ব্যবহার এবং কিছু কেন্দ্রে টিকা থাকা সত্ত্বেও টিকাগ্রহীতাদের ফিরিয়ে দেওয়া অন্যতম।

এর মধ্যে আবার অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে দ্রুত টিকা পেতে ১০ দশমিক ১ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে গড়ে ৬৯ টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে। এটি কোনোভাবেই টিকা কেনায় কথিত ঘুষ দেওয়ার সাথে সম্পর্কিত নয় বলে টিআইবি জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, মুখ্যসচিব টিআইবির অর্থায়ন নিয়েও ভুল তথ্য বা ধারণার ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ান মাইনিং কোম্পানি বিএইচপির নাম জড়িয়ে ফেলেছেন। টিআইবি কখোনোই বিএইচপির কাছ থেকে কোনো ধরনের তহবিল গ্রহণ করেনি এবং করার প্রশ্নও আসে না।

বিএইচপির সঙ্গে টিআইবির কখনো কোনোভাবেই পরিচিতি বা যোগাযোগও হয়নি। টিআইবিকে মূলত অর্থায়ন করে আসছে ব্রিটিশ ফরেইন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও), সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি (সিডা) ও সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)। এ সংক্রান্ত সব তথ্য টিআইবির ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রয়েছে।
অর্থায়ন ও গবেষণা প্রতিবেদন বিষয়ে যেকোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে টিআইবি সব প্রকার তথ্য বিনিময় ও অধিপরামর্শ কার্যক্রমে আগ্রহী রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button