উপসম্পাদকীয়

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

অলোক আচার্য : গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ছিল দীর্ঘদিনের দাবি বা চাওয়া। এর একটি বড় উদ্দেশ্যই ছিল ছাত্রছাত্রীর ভোগান্তি লাঘব করা। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে যাতে তারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে তাড়াহুড়ো করে ছুটে যেতে না হয় এবং যানজট বা অন্যকোনো কারণে পরীক্ষা দিতে সমস্যায় না পরে। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর দেশে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম গত বছর থেকে শুরু হয়েছে। গত বছর সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি,প্রকৌশল এবং কৃষি ও কৃষি প্রধান- এই তিন গুচ্ছে গত বছর ২৯টি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়। যে নীতিমালা অনুযায়ী প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে কোনো ফি নেওয়া হবে না। এছাড়াও ছিল গত কয়েক বছর ধরেই গুচ্ছপদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া কৃষি বিশ^বিদ্যালয়। একজন শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবক দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে এভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রায় সময়ই নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে একই শিক্ষার্থীর একই তারিখে একাধিক পরীক্ষা থাকে। সেক্ষেত্রে তাকে একটি পছন্দ করতে হয়। তাছাড়া যদি পরপর দুই দিনও পরীক্ষা থাকে সেক্ষেত্রে যাতায়াত পথ দীর্ঘ হলে পরীক্ষার্থী ক্লান্ত হয়ে যায়। এতে তার পরীক্ষার ওপরও প্রভাব ফেলে। ইতিপূর্বে যানজট অনেক ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। এসব কারণে জোর দাবী ছিল সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার। কিন্তু প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় কিছুটা জট রয়ে গেছে। ছয় মাস আগে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো পুরোপুরিভাবে শেষ করা যায়নি। এর মধ্যেই নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজনের চেষ্টা করতে হবে। গত বারের প্রথম প্রচেষ্টায় দেখা গেছে, বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের একাধিক বিশ^বিদ্যালয়ে আবেদন করতে হচ্ছে। আবার কোনো কোনো বিশ^বিদ্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। আবার মৌখিক পরীক্ষা দিলেও সেখানে ভর্তি না হওয়ায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বারবার মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যেহেতু প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল, ফলে কিছুটা সমণ¦য়হীনতা রয়েছে।
সেই সমস্যাগুলো এ বছর কাটিয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। কারণ ভোগান্তি কমাতেই একটি পদ্ধতিতে আসা হয়েছে। নতুন নতুন সমস্যাও সামনে এসেছে। প্রাথমে সমস্যা আসলেও যদি সেসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায় তাহলে শেষ পর্যন্ত গুচ্ছ পদ্ধতিতেই প্রকৃত সমাধান আসবে। এরই ধারাবাহিকতায় এবছর দেশের ৩২টি বিশ^বিদ্যালয়ে ¯œাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি গুচ্ছে হবে এই পরীক্ষা। এর মধ্যে নতুন তিনটি বিশ^বিদ্যালয় এবার প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। তবে এখনো যেসব বিশ^বিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিবে না তারাও যদি ভবিষ্যতে অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে আরও ভালো হয়। গুচ্ছ পদ্ধতির আগে যখন আলাদা আলাদা পরীক্ষা নিতো তখন ছাত্রছাত্রীরা ভোগান্তিতে পরতো। সেখান থেকে তারা মুক্তি পেয়েছে। প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই সময়টা কাটে ছাত্রছাত্রীদের টেনশনের ভেতর। কোথাও ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মধ্যে এই দুঃশ্চিন্তা কাজ করে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন সথানে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া,সেখানে থাকার চিন্তা সবমিলিয়ে বেশ সংগ্রাম করতে হয় এসময়। জীবন যুদ্ধে থেকে কোন অংশে কম না এই ভর্তি যুদ্ধ। প্রতি বছর যে হারে পাসকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা তার থেকে কম। তারপর আবার রয়েছে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়,পছন্দের বিষয় নির্বাচন। সব মিলিয়ে বিশাল চাপ। উচ্চ শিক্ষার জন্য তাই তীব্র প্রতিযোগীতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। এই তীব্র প্রতিযোগীতার মাধ্যমে তারা নিজেদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়। কিন্তু তারা এই তীব্র প্রতিযোগীতার মুখোমুখি হতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়। এইচএসসি পাশের পরই তারা পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে প্রথমেই মোটা টাকা দিয়ে কোচিংয়ে ভর্তি হয়।
তারপর মাস দুয়েক ভর্তি কোচিং শেষ করে ভর্তি পরীক্ষায় অবর্তীণ হয়। এই সময়ে যাদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল তারা এই কোচিং করার সুযোগ পায় না। প্রচলিত ধারণা এটাই যে কোচিং ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায় না। অবশ্য প্রচলিত ধারণাই আজ ধ্রæব সত্যি। অভিভাবকদের মধ্যে তাই নামী দামী কোচিং এ সন্তানকে ভর্তি করাতে রীতিমত প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায়।
যেকোন পদ্ধতি প্রয়োগে সমস্যা আসতে পারে তবে তা সমাধান করেতে আলোচনা করতে হবে। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সময়ও লাগতে পারে। তবে গুচ্ছ পদ্ধতিই ছাত্রছাত্রীর পূর্বের এই ভোগান্তি লাঘব করতে পারে। আমরা কেবল গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ঝামেলা লাঘব করতে চাই। তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে। একসময় শুধু মেডিকেল কলেজগুলোতে এই পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা প্রচলিত আছে। কয়েক বছর ধরেই কতৃপক্ষ চেষ্টা করেছে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। এবং সেটা শুরুও হয়েছে। এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক মত থাকলেও আমাদের বিরাট এই কর্মযজ্ঞ যে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয় তাদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে হবে। অপরিচিত স্থান, আবাসন অনিশ্চয়তা, যাত্রার যানবাহন সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। আশা করি আগামীতে গুচ্ছ পদ্ধতিতেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো রয়েছে সেসবেরও সমাধান হবে।

(অলোক আচার্য শিক্ষক ও মুক্তগদ্য লেখক পাবনা)

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button