রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষেও এমপির নিরবতা!
শফিক রহমান : নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ ছাত্রদের মধ্যে চরম রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই জন নিহত এবং বহু আহত, বিপুল অংকের ক্ষয়ক্ষতি হলেও স্থানীয় এমপি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন কে কোথাও দেখা যায়নি। তিনি ব্যবসায়ী কিংবা ছাত্র কিংবা আহত নিহতদের কোনো সহায়তা করেননি। ওদিকে পুলিশের ওপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জখম ও ভাঙচুরের অভিযোগে নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনকে প্রধানসহ ২২ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ ছাত্ররা চরম ক্ষুদ্ধ এমপি মহিউদ্দিনের ওপর।
এলাকায় চরম রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই জন নিহত এবং বহু আহত, বিপুল অংকের ক্ষয়ক্ষতি হলেও স্থানীয় এমপি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন কাউকে সাহায্য করা দূরে থাক কোনো স্বান্তনা পর্যন্ত দেননি।
এ নিয়ে খোদ ব্যবসায়ীমহল ও ঢাকা কলেজের ছাত্ররা চরমভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন ঘটনা সম্পর্কে জানানোর পরও মহিউদ্দিন এলাকায় আসেননি। এমনকি পরবর্তী সময়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন। এ সম্পর্কে জানতে এমপি মহিউদ্দিন এর সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি হোয়াটস এ্যাপে ম্যাসেজ সিন করেও প্রতিউত্তর দেননি। এতে তার ভূমিকা নিয়ে রহস্য সৃষ্ঠি হয়েছে।
কলকাঠি নেড়েছে
বিএনপি নেতা মকবুল
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জখম ও ভাঙচুরের অভিযোগে নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনকে প্রধানসহ ২২ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। তবে, এ ঘটনায় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তবে পুলিশে বলেছে, নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নেড়েছে মকবুল।নিউমার্কেটে তার দোকন থেকেই ঘটনার সূত্রপাত হয়। অথচ মকবুল একবারও খোঁজ নিলো না তা কি করে হয়? আসলে মকবুল সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রের ঘোর পাকাতে নিজেকে আড়ালে রেখে অপকান্ড-বিপুল যান মালের ক্ষতি করে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়েছে। এ মামলায় আসামি হয়েছেন নিউমার্কেটের অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিনশ জন ব্যবসায়ী ও কর্মচারী এবং ঢাকা কলেজের ছয় থেকে সাতশ ছাত্র।
গোয়েন্দা তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এজাহারে আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন নিউমার্কেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ উপকমিশনার শাহেন শাহ মাহমুদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল নামে যে দুটি ফাস্ট ফুড দোকানের কর্মচারীর মধ্যে বিরোধের জেরে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সেই দোকান দুটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ নিয়েছিলেন মকবুল হোসেন। পরে দোকান দুটি তিনি ভাড়া দেন। গত চার মাস নিউমার্কেট এলাকায় যাননি মকবুল হোসেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আমিও এ রকম একটা মেসেজ পেয়েছি। কিন্তু গত চার মাস আমি ওই এলাকাতেই যাইনি। ইটপাটকেল নিক্ষেপ, জখম, ভাঙচুরের প্রশ্নই আসে না। নব্বইয়ের দশকে আমি সিটি করপোরেশন থেকে দোকান দুটি ভাড়া নিই। তিনি নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি বলেও জানান।
এই মামলায় নাম উল্লেখ করা অন্য আসামিরা হলেন আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, মিজান ব্যাপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, হেহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল।
মকবুল হোসেনকে আসামি করায় আপত্তি তুলেছেন ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম।
তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মকবুল হোসেনের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কিন্তু তিনি তো শুধু তার নামে বরাদ্দ হওয়া দোকান ভাড়া দিয়েছেন। সেই ভাড়া দেওয়া দুই দোকানের কর্মচারীদের বিরোধে যদি তিনি আসামি হন, তাহলে তো সমস্যা।
ঢাকা কলেজের যে তিন ছাত্র ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুডের দোকান কর্মচারীদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটিতে জড়িয়েছিলেন, তাদের ব্যাপারেও পুলিশ খোঁজখবর করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা শাহেন শাহ মাহমুদ। সোমবার রাত ১২টায় নিউমার্কেট ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ান। পরদিন মঙ্গলবার দিনভর সংঘর্ষ চলে। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার মামলাটি ছাড়াও ডেলিভারিম্যান নাহিদের মৃত্যুর ঘটনায় অজ্ঞাতনামা দেড়শ থেকে দুইশ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা এবং দেড়শ থেকে দুইশ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা হয়েছে।