ইসলাম

রমজানে কোরআনের মহিমা


ধর্মপাতা ডেস্ক : হিজরি নবম মাস রমজান। রমজান শব্দের অর্থ প্রচÐ গরম, সূর্যের খরতাপে পাথর উত্তপ্ত হওয়া, সূর্যতাপে উত্তপ্ত বালু বা মরুভ‚মি, মাটির তাপে পায়ে ফোসকা পড়ে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, ঝলসে যাওয়া, কাবাব বানানো, ঘাম ঝরানো, চর্বি গলানো, জ¦র, তাপ ইত্যাদি। রমজানে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় রোজাদার যে আমল করে, তা আগে কৃত সব পাপকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। রোজাদার নিষ্পাপ হয়ে যায়। তাই এ মাসের নাম রমজান। (লিসানুল আরব)।
এ মাসেই আল্লাহতায়ালা তাঁর অবারিত রহমত মহিমান্বিত আল কোরআন নাজিল করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে আল কোরআন; মানুষের জন্য হিদায়াতরূপে এবং পথনির্দেশনার প্রমাণ ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে।’ (সুরা বাকারা : ২৮৫)।
কোরআন শব্দটি আরবি ‘করউন’ শব্দ থেকে নির্গত। করউন মানে হলো পড়া। আর কোরআন হলো এমন একটি ঐশীগ্রন্থ, যা বারবার পড়া ও এর আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। বারবার পড়া থেকে এটাকে কোরআন বলা হয়। (তাফসিরে বায়জাবি)। মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহতায়ালা একটি অতুলনীয় গ্রন্থ দিয়েছেন। যার নাম কোরআন। পবিত্র কোরআন ছাড়াও আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে আরও ছোট-বড় অনেক কিতাব নাজিল করেছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি গ্রন্থ কোরআন।
রমজান মাসের গুরুত্ব, মর্যাদা এবং এ মাসে কোরআন নাজিল হওয়ার কথা মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন। অন্য সব মাসের ওপর রমজান মাসের সম্মান ও মর্যাদার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, এ পবিত্র মাসেই কোরআনুল কারিম অবতীর্ণ হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ইব্রাহিম (আ.)-এর সহিফা রমজানের প্রথম রাতে, তাওরাত ছয় তারিখে, ইনজিল তেরো তারিখে এবং কোরআনুল কারিম চব্বিশ তারিখে অবতীর্ণ হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৪/১০৭)।
ইসলামি থিওলজি অনুযায়ী, রমজান মাসে মহাগ্রন্থ আল কোরআন লওহে মাহফুজ হতে দুনিয়ার আসমান বাইতুল ইজ্জতে নাজিল হয়। ফলে রমজান কোরআন নাজিলের মহিমায় মহিমান্বিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে এ মাসে কোরআন পুনরাবৃত্তি করতেন। উম্মাহকে কোরআনের ছায়াতলে জীবন কাটাতে আহŸান করতেন। কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি এ মোবারক গ্রন্থটি আপনার ওপর নাজিল করেছি। যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহের ব্যাপারে চিন্তা-গবেষণা করতে পারে এবং জ্ঞানবান লোকেরা এর দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’ (সুরা সোয়াদ : ২৯)।
কোরআনের কারণে রমজানের মর্যাদা বেড়ে গেছে। রমজানে যে ব্যক্তি একটি হরফ তেলাওয়াত করবে, সে ৭০টি হরফ তেলাওয়াতের সওয়াব পাবে। রোজা ও কোরআনের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। ‘রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত রেখেছি।’ কোরআন বলবে, ‘হে পরওয়ারদেগার! তাকে আমি রাতের বেলায় নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। কাজেই তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো।’ এমতাবস্থায় আল্লাহ উভয়ের সুপারিশ কবুল করবেন। (মুসনাদে আহমদ : ৬৫৮৯)।
সর্বোপরি কোরআন মানবজাতির হেদায়াতের আলোকবর্তিকা। কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার সঙ্গে সম্পর্ক সমাদৃত। এ কোরআনকে যারা ধারণ করেছে, তারা দামি হয়েছে; যেমন মর্যাদাবান এ মাস। বিখ্যাত মুফাসসির সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করবে, কোরআনের বিধান অনুযায়ী চলবে, আল্লাহতায়ালা তাকে সব ভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন। কেয়ামতের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করবেন। তার প্রমাণ আল্লাহতায়ালার এ বাণী, ‘যে আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না; দুঃখগ্রস্ত হবে না।’ (তাফসিরে তাবারি : ১৮/৩৮৯)।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button