বিশেষ প্রতিনিধি : নিউমার্কেটে সংঘর্ষে জড়িত খুনী হেলমেটধারীরা চিহ্নিত হলেও এখনও ধরা পড়েনি। পুলিশ ও গোয়েন্দারা
চলছে ধীর গতিতে। একাধিক ভিডিও ফুটেজে মিলেছে সংঘর্ষের সময় নূরজাহান সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাথে কালো ও সাদা স্টিপ রঙের পলো টি-শার্ট ও জিন্সপ্যান্ট পরা এক তরুণ নাহিদকে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে দৌড়ে চলে আসেন। তার পেছন থেকে দৌড়ে যান ওই সংঘর্ষে থাকা মাথায় কালো হেলমেট ও ধূসর টি-শার্ট পরা এক তরুণ। তিনি ধারালো লম্বা ছোড়া নিয়ে এসে নাহিদকে নির্বিচারে কোপাতে থাকেন। তাদের দুজনের মুখমণ্ডল দেখা যাচ্ছিল। ওই সময় লাল টি-শার্ট ও হেলমেট পরা আরেকজন তরুণ তাকে বাধা দিতে আসেন। এরপর তারা ফিরে যান ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশে। তবে লাল টি-শার্ট পরা হেলমেটধারীকে চেনা যাচ্ছিল না। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যটি ধরা পড়েছে।
ওদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের কাছে নাহিদের খুনিরা শনাক্ত। তবে চেহারা চেনা গেলেও গত পাঁচ দিনে এখনও অধরা রয়েছে ওই খুনিরা। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে ওই দিনের ঘটনা কতটা নৃশংস ও ভয়াবহ ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেকে বলছেন, এটি সংঘাত নয়, নাহিদ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ওইদিন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা গ্লোব শপিং সেন্টার ও নূরজাহান মার্কেটসহ কলেজের আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখানো হয়েছে। তারা বলেছেন, হেলমেট পরা যুবকরা রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে সেদিন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন। সেদিন হেলমেটের কারণে কাউকেই শনাক্ত করা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, তারা ঢাকা কলেজের অনেক শিক্ষার্থীকে চেনেন। অনেকেই ঢাকা নিউমার্কেটে এসে কেনাকাটা করেন। তবে ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে এবং যারা নাহিদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের মধ্যে একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা হেলমেট পরা অবস্থায় লম্বা ছুরি ও রড নিয়ে নূরজাহান মার্কেটের ভেতরে দোকানদারদের ধাওয়া করে। ছাত্ররা যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিল, তখন সিঁড়ির গোড়ায় ব্লু টি-শার্ট পরা এক যুবককে পায় এবং বেধড়ক মারধর করে। এরপর কিছুটা দূরে গিয়ে সে পড়ে যায়। ‘হেলমেট পরা ওই যুবক নাহিদকে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় কোপাতে থাকে।
ওই সূত্র আরও বলে, নাহিদ যখন রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন, তখন ব্যবসায়ী পক্ষের দুইজন লোক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় তার মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তখনও ঢাকা কলেজের হেলমেটধারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিল। দক্ষিণ পাশ দিয়ে ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র আরও জানায়, সোমবার রাতে যখন দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল তখন পুলিশ ওই রাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করল। পরদিন মঙ্গলবার যখন সংঘর্ষ শুরু হয়, তখন পুলিশের কোনো উপস্থিতিই দেখা যায়নি। যার কারণে পুরো নিউমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ জানান, হামলাকারী অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হামলায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী ছাড়াও তৃতীয় কোনো পক্ষ উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে শুরু, সেখানে থাকা দুই কর্মচারী ও তিন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন গোয়েন্দা জালে রয়েছে। তিন শিক্ষার্থীকে খোঁজা হচ্ছে। ঘটনার পর তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাদের বাড়িতেও খোঁজ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা বাড়িতেও নেই।
গত ১৭ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, পুরো এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এতে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
এ ঘটনায় চারটি মামলা করা হয়। তার মধ্যে দুটি হত্যা মামলা ও অন্য দুটি মামলা হয়েছে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায়। তিন মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪২৪ জনকে। পুলিশের করা একটি মামলায় এক নম্বর আসামি নিউমার্কেট থানার বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনকে গ্রেফতারের পর তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মুরসালিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই নুর মোহাম্মদ হত্যা মামলা করে।