উপসম্পাদকীয়

অদৃশ্য সম্পদ দৃশ্যমান প্রভাব

মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
নদীমাতৃক বাংলাদেশে পানি এবং টেকসই উন্নয়ন একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জলবায়ু ও প্রকৃতি- যা আমাদের জীবন ও জীবিকার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত তার স্বাভাবিক প্রবাহের জন্যও পানি অপরিহার্য। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও প্রতিবেশসহ সব ধরনের উন্নয়নের সাথে নদী ও পানি সম্পদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমান সরকার টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা প্রদানসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও পানি দূষণ কমাতে সক্ষম হবে। পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তা যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন সংস্থাসমূহ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে? ‘জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯, বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩, বাংলাদেশ পানি বিধিমালা ২০১৮ এবং বাংলাদেশ ‘ডেল্টা পস্ন্যান-২১০০’ এর মাধ্যমে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সারা বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে এই মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বেড়েছে বহুগুণ; বৃদ্ধি পেয়েছে গুণগত মানও। পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দৃষ্টি ভঙ্গিতেও এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় কাজেও বেড়েছে গতিশীলতা। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করে দুর্নিতীমুক্তভাবে কাজ করা হচ্ছে। আগামী দিনের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পানি সংবেদনশীল টেকসই উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার ফসল ‘বাংলাদেশ ডেল্টা পস্ন্যান-২১০০’ এ বলা হয়েছে দেশে সেচ ব্যবস্থার ৮০ শতাংশ ভ‚গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের ভ‚গর্ভস্থ পানির মজুত ২ হাজার ৫৭৫ কোটি ঘনমিটার যার মধ্যে ১৬৮ দশমিক ৬ কোটি ঘনমিটার উত্তোলনযোগ্য নহে। প্রতি বছর ভ‚গর্ভ থেকে ৩০২ দশমিক ১ কোটি ঘন মি. পানি উত্তোলন করা হয়, যার ৮৬ শতাংশই ব্যবহৃত হয় কৃষির সেচ কাজে। এই মাত্রাতিরিক্ত ভ‚গর্ভস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহারের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহৃত গভীর ও অগভীর নলক‚পগুলো পানি সংকটের মুখে পড়ছে।
বাংলাদেশে ভ‚-উপরিস্থ পানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী, হ্রদ ও জলা, হাওড়, বাঁওড়, খাল, বিল, ঝিল, দীঘি, পুকুর, পস্নাবিত কৃষিজমি, পরিত্যক্ত নদীখাত, শুকনো নদীপৃষ্ঠ, খাড়ি, ঝর্ণা ও ¯্রােতজ বা গড়ান জলাভ‚মি। বাংলাদেশে এরূপ উৎস দেশের মোট ভ‚ভাগের প্রায় অর্ধেক। সামগ্রিক আয়তন বিচারে দেশের নদী এলাকা ৭ হাজার ৪৯৭ বর্গ কি.মি., খাড়িসমূহ ও ¯্রােতজ গড়ান জলমগ্নভ‚মি ৬ হাজার ১০২ বর্গ কি. মি., বিল ও হাওড় ১ হাজার ১৪২ বর্গ কি. মি., বন্যাপস্নাবিত পস্নাবনভ‚মি ৫৪ হাজার ৮৬৬ বর্গ কি. মি., কাপ্তাই লেক ৬৮৮ বর্গ কি. মি., পুকুর ১ হাজার ৪৬৯ বর্গ কি. মি., বাঁওড় ৫৫ বর্গ কি. মি., এবং অন্যান্য মিলিয়ে প্রায় ৭২ হাজার বর্গ কি. মি.। পাশাপাশি, সমগ্র বাংলাদেশে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার মি. মি. বা সাড়ে ৬ ফুট বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ভ‚-উপরিস্থ এ পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
একশ বছরব্যাপী ব-দ্বীপ পরিকল্পনা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা নিশ্চিত করবে। ডেল্টা পস্ন্যানে পানি সম্পদ খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ভ‚-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ১০টি সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ইতোমধ্যে ভ‚-গর্ভস্থ পানির স্তরের উত্তরণ ঘটেছে। দেশের যে কোনো স্থানের মাটি ও ফসলের প্রকৃতি ভেদে কোন সার কী পরিমাণ লাগবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উলেস্নখ করে কৃষকদের ‘সার সুপারিশ কার্ড’ দেওয়া হচ্ছে। সেচের পানির ক্ষেত্রেও এ ধরনের প্রযুক্তি-কৌশল খুঁজে বের করা সময়ের দাবি।
বাংলাদেশে সত্তরের দশকের শুরুতে কৃষি কাজের জন্য প্রথম ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু হয়, আশির দশকে যার ব্যাপকতা পায়। ষাটের দশকে ৫০ ফুট নিচ থেকে গভীর নলক‚পের মাধ্যমে পানি উঠানো গেলেও এখন ১৫০ ফুট নিচ থেকে পানি তুলতে হয়। শুধু বোরো মৌসুমে প্রতি বছর যে হারে পানি সেচের জন্য ভ‚-গর্ভ থেকে তোলা হয়, সে পরিমাণ পানি মাটির নিচে যায় না। ফলে পানির স্তর আরও নিচে নেমে যায়। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাকে আরও সুসংহত করতে দেশের ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমিতে বাড়াতে হবে শস্যের নিবিড়তা তথা আবাদের পরিমাণ। আবাদযোগ্য কিন্তু পতিত জমিকেও আনতে হবে আবাদের আওতায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন হবে বাড়তি সেচ, বেড়ে যাবে ভ‚-গর্ভস্থ পানির উত্তোলন। এ ক্ষেত্রে ভ‚-উপরিস্থ পানির ব্যবহারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
দেশের সবকটি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রায় ৪ হাজার ৪৩৯ কি. মি. নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন করা হচ্ছে। ফলে ১০০টি ছোট নদী, ৩৯৬টি খাল ও ১৫টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে। জলাশয়, খাল ও নদীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপিত হবে। শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে, নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং বন্যার প্রকোপ হ্রাস পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আনুমানিক ৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর এলাকায় জলাবদ্ধতা, বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় হতে জনসাধারণের পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের ফলে বার্ষিক প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটির ২য় পর্যায়ে ২১২টি ছোট নদী, ২ হাজার ৪টি খাল ও ৯৯টি জলাশয় পুনঃখনন করা হবে যার মোট দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ৮৪৩ দশমিক ২৯ কি. মি.। দেশে ১৩৭টি সেচধর্মী প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে প্রায় ৬৫ দশমিক ১২ লাখ হেক্টর জমিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এতে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ১১১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে।
দেশের প্রধান প্রধান নদীসমূহে ড্রেজিং, সমন্বিত নদী ও মোহনা ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের ফসল। ২০০৯-২০২১ মেয়াদে অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় পুনঃখননসহ মোট ৩ হাজার ৮১ কি. মি. নদী ড্রেজিং সমাপ্ত হয়েছে এবং ৫শ’ কি. মি. দৈর্ঘ্যরে নদী ড্রেজিং/পুনঃখনন কার্যক্রম চলতি অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে। ড্রেজিং কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন সাইজের ৩৫টি ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক জলযান এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য প্রণীত প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশের উপক‚লবর্তী ১৩টি জেলায় ১৩৯টি পোল্ডারের মধ্যে ৬১টি পোল্ডারে বর্তমানে পুনর্বাসন কাজ চালু আছে। তন্মধ্যে, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন ‘উপক‚লীয় বাঁধ উন্নয়ন (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় ১০টি পোল্ডারের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে শক্তিশালীকরণ কার্যক্রম চলমান আছে। ‘উপক‚লীয় বাঁধ উন্নয়ন (২য় পর্যায়)’-এর আওতায় আরও ২০টি পোল্ডারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সমীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে ‘আন্তর্জাতিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অস্থায়ী ভবনে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৯০টি স্কিমে ৮১৯ কি. মি. ডুবন্ত বাঁধ পিআইসি’র দ্বারা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করার ফলে বেশ কয়েক বার বিপর্যয় ব্যতিরেকে হাওড় এলাকায় বোরো ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে। হাওড় এলাকাকে আগাম বন্যামুক্ত রেখে বোরো ফসল রক্ষা করা হয়। বিগত অর্থ-বছরসমূহে সুনামগঞ্জ জেলায় এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় নদী ড্রেজিং করার ফলে হাওড় এলাকায় প্রাক-মৌসুম আগাম আকস্মিক বন্যার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রভ‚ত উন্নতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ এলাকায় ১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি নদী খননের মাধ্যমে হাওড় এলাকাকে বন্যামুক্ত রাখার জন্য ১টি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হাওড় অঞ্চলে নৌ-চলাচলের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত কজওয়ে নির্মাণ প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব থাকা সত্তে¡ও এ মন্ত্রণালয়ের মোট ৩৩টি প্রকল্প জুন, ২০২১ এ সমাপ্ত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২২টি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫১১ কি. মি. নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন, ১৮৫ কি. মি. সেচ খাল পুনঃখনন, ৯০ কি. মি. বাঁধ নির্মাণ, ১ হাজার ১৭১ কি. মি. বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ, ৯২ কি. মি. নদী তীর সংরক্ষণমূলক কাজ, ১৯৪টি হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার নির্মাণ এবং ৩১৯টি হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার মেরামত সমাপ্ত করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যার মোট পানির চাহিদার ৭৮ শতাংশই তোলা হচ্ছে মাটির নিচ থেকে। ঢাকা মহানগরে ওয়াসার বসানো গভীর নলক‚পের সংখ্যা ৯শ’ পেরিয়েছে অনেক আগেই। আর বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন গভীর নলক‚পের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। এই বিপুলসংখ্যক গভীর নলক‚প দিয়ে মাটির নিচ থেকে দিনরাত অবিরাম পানি তোলা হচ্ছে এবং পানির অপচয়ও হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা দুই দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ, যার ফলে আমরা গুরুতর সংকটে পড়ে যেতে পারি। তা হচ্ছে ভ‚গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যায়, এতে প্রাকৃতিক পরিবেশে বা ইকোসিস্টেমে ভারসাম্য ক্ষুণœ হয়। প্রত্যক্ষভাবে যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তা হলো, পানির স্তর ক্রমাগত নেমে যাওয়ার ফলে পানি তোলার ব্যয় বেড়ে যায় এবং পানির প্রাপ্যতা কমে যায়, এমনকি ভ‚গর্ভস্থ পানিতে দূষণের ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে এবং ভ‚মিধসের ঝুঁকি বাড়ে। সরকার ঢাকা শহরে ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভ‚-পরিস্থ উৎস থেকে পানি ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পদ্মা নদী হতে ঢাকা শহরে পানি সরবরাহের কার্যক্রম অচিরেই শুরু হবে। এর ফলে শহরের যে ৭৮ শতাংশ ভ‚গর্ভস্থ পানির চাহিদা ভ‚-পরিস্থ উৎস থেকে পূরণ হবে।
আমাদের দেশে অদ্যাবধি পৃথকভাবে ‘ভ‚গর্ভস্থ পানির টেকসই নীতি’ তৈরি করা হয়নি। তবে ‘জাতীয় পানি নীতি, ১৯৯৯’-এ ভ‚-উপরিস্থ ও ভ‚গর্ভস্থ পানির সংযোজক ব্যবহার, পানি সংকটাপন্ন এলাকায় ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষার জন্য পানির উত্তোলন নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে; ‘বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩’ এর ধারা-১৯ এ ‘ভ‚গর্ভস্থ পানিধারক স্তরের সর্বনিম্ন আহরণ সীমা নির্ধারণ ও ভ‚গর্ভস্থ পানি আহরণে বিধিনিষেধ’ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা রয়েছে।
‘বাংলাদেশ পানি বিধিমালা, ২০১৮’- এ ভ‚গর্ভস্থ পানির সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা রয়েছে। ভ‚-উপরিস্থ পানির দূষণ যত কমাতে সক্ষম ও সচেতন হব এর ব্যবহার তত বৃদ্ধি পাবে ফলে ভ‚গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ হ্রাস পাবে। পানি সম্পৃক্ত সকল নীতি, আইন, বিধির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অমূল্য ভ‚গর্ভস্থ পানির টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা সম্ভব।
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব।

মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন : পিআরও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button