তেতুঁলতলা মাঠে থানা ভবনের কাজ চলছেই
বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সেখানে পুলিশি পাহারায় সীমানাপ্রাচীরের পিলারের ঢালাইকাজ করতে দেখা যায়। এদিকে তেঁতুলতলা মাঠের জমি কীভাবে থানা ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয়েছে, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের সব বিধি মেনে সরকারি এ সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কলাবাগানের তেঁতুলতলার পরিত্যক্ত জায়গাটি কখনো খেলার মাঠ ছিল না। সেখানে থানা ভবন নির্মাণ করতে ২০১৭ সালে তৎকালীন সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র) আধা সরকারিপত্র (ডিও) দেন। পত্রটি ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারিত হয়। মূল্য নির্ধারণের পর পুলিশ সেই টাকা পরিশোধও করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সব নিয়মকানুন মেনেই থানা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আইনগতভাবে পুলিশ ঠিক জায়গায় আছে।
কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠটি রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামায় গত রোববার ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয় স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না ও তাঁর কিশোর ছেলেকে। প্রতিবাদের মুখে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। এলাকাবাসীর দাবি, মাঠটিতে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে। জানাজা, ঈদের নামাজ, জাতীয় দিবসগুলোতে অনুষ্ঠানসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান হয় ওই মাঠে। এলাকাবাসী মাঠটি খালি রেখে কলাবাগান থানা ভবন অন্য কোথাও নির্মাণের দাবি করছেন।
মাঠটি রক্ষার দাবিতে গত সোমবার ১২টি সংগঠন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে। ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও ৩৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক আলাদা দুটি বিবৃতিও দিয়েছেন। গত সোমবার বিকেলে মাঠটিতে একটি প্রতিবাদ সমাবেশও হয়।
এসবের মধ্যে সোমবার যেমন মাঠে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছিল, তেমনি গতকালও নির্মাণকাজ চলে।মাঠটিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত উপস্থিত থেকে দেখা যায়, সেখানে ৯ জন শ্রমিক কাজ করছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি দল পাহারায় রয়েছে। মাঝেমধ্যে এলাকার কিছু মানুষ মাঠের কাছে যাচ্ছেন। মাঠ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছেন।
নির্মাণকাজ চলাকালে মাঠের ভেতরে চার শিশুকে বসে থাকতে দেখা যায়। নির্মাণশ্রমিকদের উদ্দেশে তাদের বলতে শোনা যায়, ‘আঙ্কেল, কাজ বন্ধ করেন।’ শিশুরা জানায়, তারা আগে মাঠে খেলত। কিন্তু পুলিশ নিষেধ করার পর থেকে আর খেলছে না।
নির্মাণশ্রমিকেরা জানান, সোমবার মধ্যরাতের মধ্যেই সীমানাপ্রাচীরের পিলারের ঢালাই কাজ হয়েছে। পিলারের রডও দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। গতকাল সকাল আটটার পর তাঁরা কাজে যোগ দেন ও ঢালাইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেন। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সেখানকার এক বাসিন্দা মুঠোফোনে জানান, বিকেলে ঢালাইয়ের কাজ চলেছে।
পুলিশের ব্যাখ্যা
ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, তেঁতুলতলা মাঠের জমির মালিক জরিপ অনুসারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। জনস্বার্থে কলাবাগান থানার জন্য ধানমন্ডি মৌজার এই ২০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭-এর সব বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়েছে। সরকারি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে রাজউকের কোনো আপত্তি নেই মর্মে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরেরও অনাপত্তি পাওয়া গেছে।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন তাঁর কার্যালয়ে গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, জমির জন্য ডিএমপি সাড়ে ২৭ কোটি টাকা মূল্য পরিশোধ করেছে। সে হিসেবে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়েছে। সরকার যদি নির্মাণকাজ বন্ধ করতে বলে, তখন ডিএমপি সিদ্ধান্ত নেবে কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণকাজ চলবে কি না।
ফারুক হোসেন আরও বলেন, খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা তিনি অস্বীকার করেন না। থানা ভবনের প্রস্তাবিত জায়গার পাশেই কলাবাগান খেলার মাঠ আছে। সেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে কোথায় খেলার মাঠ থাকবে, সেটা আমাদের এখতিয়ারভুক্ত না। সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নেবে, খেলার মাঠ কোথায় হবে।
অবশ্য এলাকাবাসী বলছেন, ঢাকায় উন্মুক্ত জায়গা ও খেলার মাঠ একেবারেই কম। কলাবাগানের ওই এলাকার এক লাখ মানুষের জন্য উন্মুক্ত জায়গা ও খেলার মাঠ হিসেবে তেঁতুলতলা মাঠটি ব্যবহৃত হয়। সেটা যদি আইনি প্রক্রিয়া মেনে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটাও ঠিক হয়নি।