বাংলাদেশি হজযাত্রীদের দেশের মর্যাদা রক্ষার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
বিশেষ প্রতিনিধি : পবিত্র হজ পালনের জন্য সউদী আরবগামী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের হজ পালনের পাশাপাশি দেশের মর্যাদা রক্ষা ও জনগণের কল্যাণে দোয়া করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামকে ‘শান্তির ধর্ম’ এবং ‘সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এর সম্মান রক্ষা এবং হজ পালনকালে সউদী আইন মেনে চলার মাধ্যমে দেশের ভাবমর্যাদা বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকার জন্যও সম্মানিত হজ যাত্রীদের প্রতি আহবান জানান। তার সরকার হজ যাত্রীদের হয়রানি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। হজ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে এর প্রভূত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য হজ যাত্রীদের কাছে দোয়ার আহ্বান তিনি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে চলতি বছরের হজযাত্রার কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে তিনি এ পরামর্শ দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান এবং হজ এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি মো. শাহাদত হোসেন তসলিম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সউদী আরবের আইন এবং হজের সব নিয়ম মেনে চলতে হবে। হজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। হজ যাত্রীদের কাছে দেশের সার্বিক মঙ্গল কামনায় দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, রোড টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ’র মাধ্যমে আমরা আমাদের হজ ব্যবস্থাপনাকে আরো প্রযুক্তি নির্ভর করতে সক্ষম হয়েছি। ইমিগ্রেশন ঢাকাতেই হয়ে যায়, সেখানে কোন হয়রানি হয় না। মালপত্রও যাতে যথাযথ স্থানে পৌঁছে যায় সউদী সরকারের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডেডিকেটেড বিমান সার্ভিস দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতার বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি ইসলামের মূল মন্ত্র যে ‘শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা’, সে সম্পর্কে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তার দেয়া ঐতিহাসিক বেতার ভাষণের কিঞ্চিত অংশ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হযরত নবী করীম (সা.) এর ইসলাম। যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।
তিনি বলেন, তার সরকার সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন’ প্রণয়ন করেছে। যাতে করে হজ যাত্রীরা কোন রকম হয়রানি ছাড়া নউদী আরবে গিয়ে হজ পালন করতে পারেন। বর্তমানের উন্নত হজ ব্যবস্থাপনার অনেক কিছু তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনার ফসল। অতীতে বিভিন্ন সময় ওমরাহ এবং হজ পালন করতে গিয়ে তিনি মিনা’তে হাজীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজ চোখে হাজীদের যে সব সমস্যা দেখেছেন সে সবই পরবর্তীতে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল হজ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করা। যা ধাপে ধাপে আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি এ জন্য সউদী বাদশাহ এবং ‘দুটি বড় মসজিদের খাদেম’ যখনই যিনি ছিলেন এবং যুবরাজদের আমাদের হজ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করায় ধন্যবাদ ও কতৃজ্ঞতা জানান। অতীতের থেকে বর্তমানের হজ ব্যবস্থাপনা আমূল পরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিবর্তন আমার নিজের দেখা এবং সে জন্য আমি সত্যই খুব আনন্দিত।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশে ‘ই-হজ ব্যবস্থা’ প্রবর্তণ করেছে, যার ফলে অতীতের মত আর হাজীদের কষ্ট হয় না। সেই কষ্ট আমরা দূর করতে পেরেছি। যারা হজে যাবেন তারা সউদী আরবের সমস্ত নিয়ম কানুন এবং আইন মেনে চলবেন। কারণ, ইবাদত বন্দেগি করার পাশাপাশি দেশের মান সম্মান রক্ষা করাও সকলের কর্তব্য। পাশাপাশি নিজেরা নিজেদের সুস্থ রাখার চেষ্টা করবেন যাতে সুস্থ থেকে মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে দোয়া করতে পারেন। পরে তিনি হজ যাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে ২০২০ ও ২০২১ এই দুই বছর বর্হিবিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি। করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হওয়ায় এ বছর সারা বিশ্বের ১০ লাখ হাজী নিয়ে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এ বছর ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজযাত্রী হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।