মন্ত্রণালয়-হাই কমিশনের অসহযোগীতায় মালয়েশিয়া যেতে পারছেনা বাংলাদেশী কর্মীরা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার
স্টাফ রিপোর্টার : মন্ত্রণালয় ও হাই কমিশনের অসহযোগীতায় মালয়েশিয়া যেতে পারছেনা বাংলাদেশী কর্মীরা। অবস্থাদৃষ্টে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। গত ০২ জুন, ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্ৰুপের মিটিং এ মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ উভয় দেশের প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে একমত হয়। মিটিং এর সিদ্ধান্ত সমূহ উভয় দেশের প্রতিনিধিদল সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষর করেন। মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মহোদয় ঘোষণা করেন যে, জুন মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী গমণ শুরু হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্ৰুপের মিটিং এর পর প্রায় ৩(তিন) সপ্তাহ অতিক্রম হলো কিন্তু আজ পর্যন্ত পরিস্থিতির কোন ধরনের উন্নতি হয়নি।
মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তাগণ দূতাবাসে ডিম্যান্ড লেটার জমা করার পর দূতাবাস হতে বলা হচ্ছে ঢাকায় মেডিকেল করার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক মেডিকেল সেন্টার সমূহ অনুমোদন প্রয়োজন, এছাড়া মেডিকেলের রিপোর্ট হাই কমিশনের অনলাইন মডিউলে অন্তর্ভূক্তকরণ, কর্মীগণ নিয়োগকর্তা হতে পলায়ন করলে সেগুলো হাই কমিশনের মডিউলে প্রতিফলন ইত্যাদি। প্রকৃত পক্ষে এর কোনটিই হাই কমিশনের কাজ নয়, শুধুমাত্র প্রক্রিয়াটিকে দেরি করানো বা অভিবাসন প্রক্রিয়াটি বন্ধ রাখার জন্যই এসব শর্ত আরোপ করা হচ্ছে বলে মনে হয়।
কেননা দু’দেশের মধ্যে সকল বিষয়ে যেহেতু ঐক্যমত হয়েছে, সুতরাং হাই কমিশনের কাজ হলো মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীগণের নিকট হতে ডিম্যান্ড লেটার, চুক্তিপত্র জমা গ্রহণ পূর্বক তাদের কোম্পানি প্রোফাইল যাচাই-বাছাই এবং প্রয়োজনে কোম্পানী / ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি সাপেক্ষে প্রকৃত চাহিদা নিরূপন পূর্বক ডিম্যান্ড লেটার ও চুক্তিপত্র সত্যয়ন করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা। মন্ত্রণালয় মেডিকেল ও আনুষাঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের পর দায়িত্ব প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট এজেন্সীকে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পাদনের জন্য অনুমতি প্রদান করবে।
এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, বিগত ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পরও আজ পর্যন্ত ০৬(ছয়) মাস অতিক্রান্ত হলেও মেডিকেল সেন্টারের ব্যাপারে আমাদের মন্ত্রণালয়ে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। একদিকে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন বলছে ডিম্যান্ড লেটার সত্যায়নের পূর্বেই মেডিকেল সেন্টার নির্বাচন করতে অন্যদিকে মন্ত্রণালয় তালিকা চুড়ান্ত করছে না।
এই পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়া সরকার ঢাকা হতে তথ্য যোগাড় করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং নবায়নকৃত মেডিকেল সেন্টারের মনোনয়ন দিয়েছে, সিস্টেম ইনস্টল করেছে এবং মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এখন নতুন করে মেডিকেল সেন্টার অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে একদিকে যেমন পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক পিছিয়ে যাবে আবার মালয়েশিয়া সরকার তাদের অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারের স্থলে নতুন মেডিকেল সেন্টার সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিবে।
এছাড়া মালয়েশিয়া সরকারের নির্ধারিত সিস্টেম প্রোভাইডার কর্তৃক মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে ডিম্যান্ড লেটার, চুক্তিপত্র সত্যয়ন সহ অভিবাসন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সফ্টওয়্যার ও ইকুইপমেন্ট ইনস্টল করেছে এবং আমাদের মন্ত্রণালয়ের সাথেও তাদের মডিউলের সংযোগ স্থাপনের ব্যাপারে অনেক আগেই প্রস্তাব দিয়েছে। এর কোন কিছুর বিষয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ডাটা ব্যাংক এর মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে বাধ্যকতা, কখনও Random Sampling আবার কখনও বা মালয়েশিয়ার কাছে মন্ত্রণালয়ের নতুন সিস্টেম সমন্বয় করার প্রস্তাব করছে।
এভাবে হাই কমিশন এবং মন্ত্রণালয় অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করে পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিলম্ব ঘটাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের এধরনের কর্মকান্ডের ফলে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে এমন একটি বার্তা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর/মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের বিষয়ে এখনও প্রস্তুত নয় বা খুব একটা আগ্রহী নয়। এতে করে বাংলাদেশের অনুকূলে ইস্যুকৃত মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত ডিম্যান্ড লেটার সমূহ পার্শবর্তী অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। মালয়েশিয়া মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর ভাষ্যমতে ১৫ জুন, ২০২২ তারিখ পর্যন্ত ২,৩০,০০০ কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে তার মন্ত্রণালয় ডিম্যান্ড লেটার ইস্যু করেছে।
যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের পাওয়ার কথা হলেও আমাদের ঢিলেঢালা কর্মকান্ড এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে পার্শবর্তী দেশ নেপাল সহ অন্য ১২ টি সোর্স কান্ট্রিতে চলে যাচ্ছে।দু’দেশের মধ্যে সবকিছু চুড়ান্ত হওয়ার পরও উপরিউক্ত জটিলতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারটি হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসকল দিক বিবেচনা করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান এবং দেশের সার্বিক স্বার্থে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃক ডিম্যান্ড লেটার ও চুক্তিপত্র সত্যয়ন শুরু করা আবশ্যক এবং এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় হতে হাই কমিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।