ভারত গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে-জাফরুল্লাহ
স্টাফ রিপোর্টার : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, হঠাৎ অতর্কিতভাবে ভারত থেকে আসা পানিতে সুনামগঞ্জ, সিলেট ডুবে গেছে। বাংলাদেশকে না জানিয়ে গজলডোবা বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে। এখানে আমাদের যে কূটনীতিক সমাধান প্রয়োজন সেটি আমরা করতে পারিনি। আজ ২২ জুন ২০২২, বুধবার, সকাল ১১ টায় ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের (মান্নান হলে) এবি পার্টির উদ্যোগে “বন্যা ও জলাবদ্ধতার দায় সরকারের ” মানবিক সংকট মোকাবিলায় সর্বোচ্চ অর্থ ও খাদ্য বরাদ্দের দাবীতে এক “নাগরিক সংলাপের” আয়োজন করা হয়েছে। দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জুর পরিচালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন দলের আহবায়ক ও প্রাক্তন সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আরো উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইনামুল হক, গণ ফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা ও মানবাধিকার কর্মী রুবী আমাতুল্লাহ সহ বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্l, বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক জননেতা বিএম নাজমূল হক, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ এর নির্বাহী সভাপতি ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শাহ আরমান, এনডিপি মহাসচিব মন্জুর হোসেন ঈসা, এবি যুব পার্টির সমন্বয়ক এবিএম খালিদ হাসান, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এফসিএ, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন, সহকারী সদস্য সচিব নাসরীন সুলতানা মিলি, এনডিএম এর সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন হীরা, এবি ছাত্র উইং এর সমন্বয়ক মোহাম্মদ প্রিন্স প্রমূখ।
ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে যতোদিন তিস্তা চুক্তি না হবে ভারত বাংলাদেশের প্রতিটি বাঁধের তথ্য আমাদের দিতে হবে। অন্যতায় তাদের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়া উচিত।বলেন, ভারতের আয়ের চতুর্থ উৎস হলো বাংলাদেশ। এছাড়াও ভারতকে রক্ষা করেছি আমরা। তা না হলে আজকে নকশালবাদী সরকার থাকতো ভারতে। এবি পার্টি উদ্দেশ্যে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, জামায়াতকে অনুরোধ করেন জনসাধারণের সামনে আবারো ক্ষমা চাইতে। মানবাধিকার অপরাধ তারা তো আর করে নাই। পিতৃ পুরুষরা করেছেন। তিনি বলেন, জামায়াতের গোলাম আজমের সঙ্গে আমার একদিন কথা হয়েছিল।
আমি উনাকে বলেছিলাম, ভূল হয়েছে ক্ষমা চাননা কেনো? তিনি বললেন, ক্ষমাতো একবার চেয়েছি। আমি বললাম, আমি তো দেখি নাই। তখন তিনি আবার চাইতে পারি।আমার মনে হয় তিনি বেচে থাকলে ক্ষমা চাইতেন। জামায়াত ক্ষমা চাইলে তাদের শক্তি আরো বৃদ্ধি হবে। সামনে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সব দলকেই শরীক হতে হবে। এতে আন্দোলনের শক্তি বাড়বে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পদ্মার পাড়ে ১০ লাখ লোক জামায়াত করে অর্থ অপচয় না করে সিলেট অঞ্চলের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এতে ওই অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় রোধ করা যাবে। তিনি আরো বলেন, সামনে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সব দলকেই শরীক হতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আমাদের সে সরকার কোথায় যে সরকার জনগণের কথা চিন্তা করবে? রাজনীতিবিদ হলো সে যে মানুষ জনগণের পালস রিফিউ করতে পারে। মানুষ কি চায় সেটা জানতে পারে। তিনি বলেন,সহমর্মিতা ছাড়া কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। গত ৫০ বছর ধরে আমরা শুধু বিভেদ সৃষ্টি করেছি। ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সাল থেকে যে সরকার আমাদের ঘাড়ে বসেছে। তাকে কিছুতে ঘাড় থেকে নামাতে পারছি না। এ জাতীয় সরকারকে সরাতে হলে, জিওপলিটিক্স ওর দিকে নজর দেওয়া, দুই, গণবিস্ফোরণ। বন্যা ব্যবস্থাপনায় এবিপার্টি আয়োজিত (আমার বাংলাদেশ পার্টি) নাগরিক সংলাপে ১৪ দফা প্রস্তাব প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী।
বন্যা ও জলাবদ্ধতা দায় সরকারের মানবিক সংকট মোকাবিলায় সর্বোচ্চ অর্থ ও খাদ্য বরাদ্দের দাবিতে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, আপনারা বিদেশিদের দেখাবেন বস্তায় বস্তায় খাদ্য ফেলেছেন। কিন্তু কয়জন খাদ্য পেয়েছেন? হেলিকপ্টার থেকে খাদ্য প্রদান এ দেশের মানুষের সাথে চরম অবজ্ঞা, অবহেলা। এর জবাবদিহি করতে হবে। সোলায়মান চৌধুরী আরো বলেন, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের শতাধিক নৌকা রয়েছে। যেগুলোকে ট্রলার বা স্পিডবোট বলা যায় না। লম্বায় এগুলো ১০ মিটার প্রস্থ ৬ মিটার। ৩ টণ মালামালসহ ১৫ জন যাত্রী নিয়ে এই নৌযান চলাচল করতে পারে। আমার প্রশ্ন হলো এসব গেলো কোথায়? কোনো কজে লাগে না? যতটূকু জানি, বিভিন্ন সময় এ নৌযান গুলো নিজেদের উৎসবের জন্য ব্যবহার করে নষ্ট করে দিয়ে আমরা এর জবাব চাই।
১. উপকূলীয় এলাকার বাধগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধি ও মানসম্পন্ন করে তৈরি করা বর্তমানে অত্যাবশ্যকীয়, আম্পানের সময় প্রায় ১০-১৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস এসেছে। তাই এ পরিমাপ মাথায় রেখে বাধগুলোকে কমপক্ষে ১৮-২০ উচ্চতা বিশিষ্ট করে নির্মাণ করা উচিত। ২. নদী ব্যবস্থাপনা, নদীরক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দূর্গত পুনর্বাসনসহ সার্বিক বন্যা উত্তর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাধুনিক উন্নত প্রযুক্তি, ধারণা ও উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যবহারিক- অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা করা জরুরী। দরকার স্থায়ী ও কার্যকর টাস্কফোর্স/ কমিশন। ৩. বনায়ন এবং পুনর্বনায়নের সমন্বিয় কর্মসূচি গ্রহণ ও তার যথাযথ সংরক্ষণ করা যাতে পরিশোষণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্যা পানির উচ্চতা হ্রাস ঘটতে পারে। ৪. ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন ও বিল্ডিং কোডের যথাযথ প্রয়োগ, শস্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ তথা বন্যা প্রতিরোধী বা বন্যা সহিষ্ণু শস্য চিননিতকরণ ও রোপণ করা এবং শস্য রোপণ মৌসুমের অভিযান করতে হবে।
৫. প্লাবন ভূমিসমূহকে বিভিন্ন জোনে বিভক্ত করা এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভূমি ব্যবহার জোন তৈরি করা। নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সকল খাল, নালাকে অবৈধ দখল ও বর্জ্যমুক্ত করা। ৬. জরুরি তহবিল গঠনে সরকার, ব্যবসায়ী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাত ও এনজিওদেরকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ৭. বন্যার পূর্বাভাস ও আগাম সর্তকমূলক ব্যবস্থা আরো দ্রুত ও আধুনিক ও শক্তিশালী করতে হবে। সঠিকভাবে আবহাওয়া পূর্বাভাস পেতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের মডেল বিশ্লেষণ করে আমাদের উপযোগী ও কার্যকর সতর্কীকরণ মডেল প্রস্তুত করতে হবে। ৮. আশ্রয়ণ বা গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মতো উদ্যোগের আওতায় বাধের ওপর অবৈধভাবে বসবাসরত মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে যেন কৃষিভূমির পাশাপাশি প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয়।
৯. সশস্ত্র বাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে বন্যা প্রবণ অঞ্চলগুলোতে দিন দশ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষণ দেয়া যাতে যে কোন দুর্যোগে জরুরি সেবায় নিয়োজিত বেসামরিক সংস্থা ও বাহিনীর পাশাপাশি তারা বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাড়াতে পারে। ১০. কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলাকে সংযুক্তকারী ২৯,৭৩, কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ভেঙ্গে আধুনিক মানের জল- যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে ঢলের পানি হাওর থেকে দ্রুত নদীতে নামতে পারে। ১১.চীন ও ভারতের সাথে অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা নিয়ে সমতার ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে অবিলম্বে, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ফোরামে যেতে হবে।
১২. বর্ষার অতিরিক্ত সুপেয় পানি বৃহৎ জলাধার করে সংরক্ষণ করতে হবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতে শুল্ক ও শীত মৌসুমে ব্যবহার করা যায়। ১৩. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিগত 50 বছরে ঘটে যাওয়া দেশে বন্যার সংখ্যা৷ সময় ও কাল, অঞ্চল ভেদে এর প্রকৃতি ও ধরন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ নিয়ে ব্যাপক আকারে সমীক্ষা ও গবেষণা প্রকাশ করতে হবে। এই বছরের মধ্যে যাতে আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বে যথাযথ পরিকল্পনা হাতে নিতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ১৪. দিন শেষে একটি বাধ রক্ষার দায়িত্ব বা বন্যা থেকে বাচা কেবল রাষ্ট্রের একার হাতে ছেড়ে দিলে হবে না, ঐ এলাকার মানুষেরও একটি আলাদা দায়বদ্ধতা রয়েছে। অঞ্চল ভেদে এর প্রকৃতি ও ধরন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ নিয়ে ব্যাপক আকারে সমীক্ষা ও গবেষণা প্রকাশ করতে হবে। এই বছরের মধ্যে যাতে আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বে যথাযথ পরিকল্পনা হাতে নিতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।