স্টাফ রিপোর্টার : রহস্যজনক কুকুর নিধন চলছে মিরপুর রাকিন সিটিতে । একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সংঘবদ্ধ হয়ে মিরপুর বিজয় রাকিন সিটিতে ঘোষণা দিয়ে কুকুর নিধন করছে। সিটি করপোরেশনের আদিম নৃশংসতায় পিটিয়ে কুকুর নিধন করার রেওয়াজ থাকলেও ২০১২ সালে উচ্চ আদালত নির্বিচার কুকুর নিধনকে অমানবিক উল্লেখ করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন।
এরপর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে কুকুরকে বন্ধ্যা (প্রজননক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া) করে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা দেয়া হয়। আদালতের এ নিষেধাজ্ঞার পর ২০১২ সালের ১ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ‘অভয়ারণ্য’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাতঙ্ক প্রতিরোধ টিকা দেয়ার জন্য চুক্তি/সমঝোতা করে। ২০১৪ সালে চুক্তির/সমঝোতার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) আর মেয়াদ নবায়ন করেনি। এরপর থেকে রাজধানীতে চলছে কুকুর নিধন নিয়ে নানা কান্ড কারখানা। যা ঘটছে মিরপুরের রাখিন সিটিসহ বিভিন্ন এলাকাতেই।
কুকুরকে রক্ষা করতে চাওয়ায় ও নিয়মিত খাদ্য প্রদান করায় প্রাণী প্রেমীদেরকে হত্যার হুমকি দেবার অভিযোগও উঠেছে এদের বিরুদ্ধে। গত কিছুদিন ধরে রাত হলেই মিরপুর রাকিন সিটির বাসিন্দা রেজাউর রহমানের নেতৃত্বে আবুল কাশেম, তাজুল ইসলাম, মাহমুদ হাসান, মাহমুদ এ খোদা, শহীদ হোসেন এই কুকুর নিধনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন রাকিন সিটির বাসিন্দা ও প্রাণী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘অ্যানিম্যাল প্লানেট বাংলাদেশ’।
সর্বশেষ শুক্রবার রাতেও এরা কুকুর নিধনে মহড়া চালানোর একটি ভিডিও হাতে এসেছে। এছাড়া এই সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর হোয়াইট অ্যাপ গ্রুপের কথপোকথন ও কুকুর হত্যার একাধিক ভিডিও হাতে এসেছে। গত ৪ জুলাই বিকালে কুকুরগুলো ভ্যাকসিনের আক্রান্ত হয়েছিল অ্যানিমেল প্ল্যানেট বাংলাদেশের দুই স্বেচ্ছাসেবী অভিজিৎ দাস ও আজিজুল হাকিম হানি। যারা কুকুরদের ভ্যাক্সিনেশন করতে গিয়েছিল।
এই বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে কাফরুল থানায় অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি করেছেন মিরপুর বিজয় রাকিন সিটির বাসিন্দা স্বপ্ন চৌধুরী।পরবর্তীতে মিরপুর বিজয় রাকিন সিটির বাসিন্দা ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী আইজিবি বেনজির আহমেদের কাছে কুকুর নিধন না করা ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি না করার বিষয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী বলেন, কোভিডের সময় সবকিছু যখন বন্ধ ছিল তখন কুকুরগুলো খাবার না পেয়ে চিৎকার করতো। তারপর আমার স্ত্রীকে বলে এদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করি। কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিনেশনও করা। কিন্তু বাইরে থেকে আসা একটি কুকুর ৪ জুলাই এখানের এক বাচ্চাকে আক্রমণ করেছে অভিযোগ তুলে সংঘবদ্ধ হয়ে রাতে কুকুর মেরেছে। ঠেকাতে গেলে আমার ছেলেকে হুমকি ধামকিও দিয়েছে। প্রত্যেক প্রাণীর বাঁচার অধিকার আছে, দেশে আইন আছে, চাইলেই এভাবে মারা যায় না।
স্বপ্ন চৌধুরী বলেন, ঘটনা ঘটে ঠিক রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে(৪ জুলাই)। আমাকে বিকেলে খবর দেয়া হয় দারোয়ানকে দিয়ে যে একটা কুকুর বলে একটা বাচ্চাকে কামড়েছে, তখন আমি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত ভলেন্টিয়ার এনে প্রাণিকল্যান আইন ২০১৯ অনুযায়ী কুকুরটাকে ধরার চেষ্টা চালাই। চারঘন্টা টানা চেষ্টার পরও প্রাণীটাকে ধরা যায় নি। হামলাকারীরা আমাদের মারতে উদ্যত হচ্ছিল তার আগেই কয়েকজন লোক এসে আমাদের সরিয়ে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এরপর থেকে তারা উৎসব করে কুকুর নিধন শুরু করে আর আমার সহ এলাকার বাকি প্রাণীপ্রেমী মানুষদের বাসার সামনে গিয়ে সপরিবারে হত্যার হুমকি দেয়। এলাকায় এখনও মানুষের মনে ত্রাস বিরাজ করছে, খুব বেশি কেউ নিচে নামছে না। এসব ঘটনায় অভিযোগ উঠা রেজাউর রহমানের বক্তব্য নিতে তাকে ফোন করা হলে বলেন, ‘আপনাকে আমি চিনি না।
আপনার সাথে কথা বলবো না। পরে কথা বলবো।’ এ কথা বলে ফোন কেটে দেন।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভেটোনারি কর্মকর্তা খোকন হোসেন বলেন, প্রাণীহত্যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে সিটি করপোরেশন যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।কাফরুল থানার ডিউটি অফিসার সাদ্দাম হোসেনকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ সম্পর্কিত কোন ব্যাপার তার জানা নেই।