জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসীবাদ বিএনপিকে রুখতে হবে-কাদের
স্টাফ রিপোর্টার : এখন থেকে বিএনপি যেখানেই সন্ত্রাস-নাশকতা করবে সেখানে প্রতিরোধ করা হবে। দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করলে তাদের ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে আজ বিকালে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশে বক্তারা এ হুঁশিয়ারি দেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের মধ্যে আবু আহমেদ মন্নাফী, এসএম মান্নান কচি, গোলাম আশরাফ তালুকদার প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম এই দেশের মাটিতে। বন্দুকের নলে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না, আন্দোলনেই আওয়ামী লীগের জন্ম। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক এই দলকে রুখতে হবে। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, জঙ্গিবাদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না। আগামী নির্বাচনের দেশের মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে এই দেশে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। বিএনপি গত নির্বাচনে ধরা খেয়েছে, এবারও ধরা খাবে।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা প্রস্তুত তো? খেলা হবে। রাজপথে আন্দোলনে, নির্বাচনে, আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, সেই খেলায় আমরাই জয় লাভ করবো। এজন্য আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশ কোন দিন শ্রীলঙ্কা হবে না, পাকিস্তান হবে না। বাংলাদেশকে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ভাবেন। তিনি জেগে আছেন, আমরা যেন ঘুমাতে পারি।মির্জা ফখরুল গুলশানে বসে পুঁথিপাঠ করেছেন অভিযোগ করে কাদের বলেন, ২০০৬ সালের সাথে ২০২২ সালের তুলনা করছেন। তখন বাজেট ৬৯ হাজার কোটি টাকা। এখন বাজেট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। কিসের সাথে কি মেলান? মির্জা ফখরুল দুদিন হলে মিথ্যাচার করে চলেছেন। বিএনপি হলো নালিশ পার্টি। তারা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে দেশের ভেতরে তদন্ত দাবি করেছেন। তারা জানে না যে জাতিসংঘের কোনো দেশের অভ্যন্তরে তদন্ত করার কোন ক্ষমতা নেই। বিএনপির অপর নাম নালিশ পার্টি। তাদের কাজ বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে। দূতাবাসে গিয়ে, নালিশ করছে।
মঞ্চে দলীয় নেতাকর্মী বেশি বসায় বিরক্তি প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, মঞ্চে এতো নেতা? কোথায় থেকে এলো এতো নেতা? নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা দায়। সবাই নেতা। নেতারা কর্মীদের সাথে বসবেন। নেতা একজন শেখ হাসিনা, আর আমরা সবাই কর্মী।আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) ভেবেছিল সিরিজ বোমা হামলার ভয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। তারেক-খালেদার পদক্ষেপের ঘৃণা প্রকাশ করছে। এই দেশ জঙ্গিবাদের নয়। এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, খুশি সমৃদ্ধ দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশ এগিয়ে যাবে।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপির দেশে জঙ্গিবাদ কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। বিএনপি নেতারা তাণ্ডব করেছিল। আরেকবার বিএনপিকে ঘরে তুলবো। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলা ভাইয়ের নেতা দণ্ডিত তারেক রহমান দেশকে অস্থিতিশীল করার স্বপ্ন দেখে। দেশে শান্তি বিঘ্নিত করতে চায়। মির্জা ফখরুল- কিছু করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতান্ত্রিক ও বাক-স্বাধীনতা আছে বলেই, যা খুশি বলেন। কিন্তু শিষ্ঠাচার বহির্ভূত কিছু করলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ রাজপথের সৈনিক।
আবদুর রহমান বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস বলে, তারা জানে না, আমরা এই মাটিতে জন্মেছি। পাঞ্জা ধরবো, ওদের পরাজিত করে ছাড়বো। বিএনপি বলে ‘তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে আসবে না। শেখ হাসিনা অধীনে আসবে না’। কিন্তু আমরা আর কখনো অসাংবিধানিক পন্থা আনতে দিতে পারি না।অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, এরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। এই অপশক্তিকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে হবে। যতদিন আমরা সেটা করতে পারবো না, ততদিন আমাদের রাজনীতিতে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল। সেই বাংলাদেশকে আজকে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তান বানাতে চায়। কিন্তু দেশের জনগণ তা হতে দেবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে প্রতিরোধ করবো।আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের ৫শ জায়গায় বোমা করেছে তা নয়। আদালতে বোমা, কিবরিয়ার আহসান উল্লাহ শেখ হেলালের জনসভায় বোমা হামলা করেছিল। আজকে অগ্নি সন্ত্রাসীরা মাঠে নেমেছে। আমরাও আজ থেকে মাঠে নামলাম। পেট্রোল বোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেবো না। কাউকে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ দিবো না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশে কোথায় সন্ত্রাস করতে দেবো না। আজ আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। আমরা প্রস্তুত। ঢাকা তো দূরের কথা বাংলাদেশের যেখানে অন্যায় হবে সেখানেই প্রতিবাদ হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করবো এটাই আমাদের অঙ্গীকার।সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, এই রাজপথ সন্ত্রাসীদের নয়। এই রাজপথ জনগণের। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথ দখলে নিতে দেয়া হবে না।
সমাবেশের পূর্ব নির্ধারিত সময় ছিল বিকাল ৪টায়। তবে দুপুরের আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেন। মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতে শুরু করে শাহবাগ থেকে প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল আকারে নেতাকর্মীদের ভিড়ে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। মৎস ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে আসার মিছিল ও যানবহনের কারণে সেগুনবাগিচা, মৎসভবন, কাকরাইল ও শিল্পকলা এলাকার অলি-গলি পর্যন্ত যানটজের সৃষ্টি হয়।
হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সোয়া ৫টায় সমাবেশ শেষ হলে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা-প্রেসক্লাব ও জিরো পয়েন্ট হয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।