লুটেরা বিএনপি জামায়াতের সাথে লেফটিস্ট’রা কেন : শেখ হাসিনা
বিশেষ প্রতিনিধি : রাজনৈতিক মতাদর্শগত ব্যবধানের পরও দেশে বামপন্থী আর ডানপন্থীরা একই প্লাটফর্মে আসে কীভাবে প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি অবাক করার মতো বিষয় মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, খুব অবাক হয়ে যাই কোথায় লেফটিস্ট আর কোথায় রাইটিস্ট। যারা লেফটিস্ট তারা মনে হলো ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। অর্থাৎ সেই জামায়াত-বিএনপি, বাম, স্বল্প-বাম, তীব্র-বাম, কঠিন-বাম, সব যেন এক হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে!
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে নানা দুর্নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, দেশের টাকা পাচার, এতিমের টাকা আত্মসাৎ। আর সেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামির নেতৃত্বে বড় বড় তাত্ত্বিকরা এক হয়ে যায় কীভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। কোথায় গেলো তাদের আদর্শ?
সরকার উৎখাত করা এত সহজ নয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ ডিসেম্বর আসছে সরকার উৎখাত করতে। সরকার উৎখাত করা এতই সোজা? আওয়ামী লীগ পারে। আইয়ুব খান, এরশাদ ও খালেদা জিয়াকে উৎখাত করেছি। ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করতে পারে। ২০০১-এ ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে বার বার বাধা দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু মানুষের শক্তি হচ্ছে বড় শক্তি। ওপরে রাব্বুল আল-আমিন তো আছেনই। আল্লাহর দয়া আর মানুষের শক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে।
তবে ক্ষমতায় আসা সহজ ছিল না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত সহজে আসতে দেয়নি। জনগণ আমাদের সমর্থন করে, ভোট আমাদের আছে, কিন্তু নির্বাচনে বার বার কারচুপি করে, ষড়যন্ত্র করে, চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে—সরকার জনগণের সেবক। একটি সরকার ইচ্ছে করলে মানুষের উন্নতি করতে পারে। সেটি আওয়ামী লীগ সরকার প্রমাণ করেছে।
বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।’ এসময় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।বিদ্যুতের দাম উৎপাদনের খরচ অনুযায়ী দিতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা ভর্তুকিমূল্যে দিচ্ছি। সামনে আর দিতে পারবো না। আমাদের যেটা খরচ হচ্ছে সেটা কিন্তু দিতে হবে। তাহলে দেবো, না হলে দেবো না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমদানি ব্যয় বাড়ায় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমদানি ব্যয় বাড়ায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অনেক জিনিস আমাদের আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। সেজন্য দামও বেড়ে গেছে।বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্য ও গ্যাসের মূল্য বাড়ায় আমাদের কিছুটা সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে। আমরা সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেবো বলেছিলাম। সেই কথা তো রেখেছি। এখন বিশ্বে দাম বাড়লে আমাদের কী করার আছে।
দেশের মানুষকে পনরায় কৃষিপণ্য উৎপাদনের বিষয়ে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রত্যেককে আগাম সাবধানতা নিতে হবে। সংকটের পরিস্থিতিতে যেন পড়তে না হয়। সেজন্য জমিতে বাগানে বা ছাদে হলেও কিছু উৎপাদন করেন। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা সঞ্চালনা করেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সিমিন হোসেন রিমি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।