জিহাদের নামে ‘হিজরত’ থেকে রক্ষা ৯ তরুণ-তরুণী
স্টাফ রিপোর্টার : জিহাদে আহবান জানানো ৯ তরুণ-তরুণী অবশেষে ফিরল পরিবারে। একটি জঙ্গি গ্রুপ ফেসবুকের মাধ্যমে এদের সংগঠিত করে কথিত হিজরতে নিচ্ছিল। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা নজরদারিতে রক্ষা পেয়েছে তরুণীরা। জানা গেছে, মায়ের স্মার্টফোন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলেন এক নারী শিক্ষার্থী। এরপর ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের ইসলামি পোস্টে লাইক-কমেন্টস করতে থাকেন তিনি। ইসলামের বিভিন্ন খণ্ডিত আলোচনা তুলে ধরে জিহাদে আহ্বান জানানো একটি গ্রুপ থেকে তার পরিচয় হয় আরেক তরুণীর সঙ্গে। মূলত ওই তরুণীর মাধ্যমে কথিত হিজরতে ঘর ছাড়তে উদ্বুদ্ধ হন এ ছাত্রী।
একপর্যায়ে ধর্মের অপব্যাখ্যায় মুগ্ধ হয়ে নির্জনে ইবাদত করতে বান্দরবানের উদ্দেশে হিজরতও করেন তারা। পরে র্যাবের মাধ্যমে নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে ‘হিজরতে’ যাওয়া মোট ৯ তরুণ-তরুণীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে র্যাব।সোমবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন, ‘নব দিগন্তের পথে’ নামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওই তরুণ তরুণীদের নিজ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবারের কাছে ফেরা এ নয়জন হলেন তাজকিয়া তাবাসসুম, আবু বকর সিদ্দিক, ফয়সাল হোসেন, মো. ফারুক হোসেন, মো. আলিফ খান, মুফলিয়া আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস, রুনা আক্তার ও কানিজ ফাতিমা ইফতি।এ সময় তাদের দশ হাজার টাকা, বই ও ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হয়।র্যাব জানায়, এখন পর্যন্ত তারা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ২৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
পরিবারের কাছে ফেরা তাজকিয়া বলেন, ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে ইসলামের বিভিন্ন আলোচনা পোস্ট করা হতো। সেখানে লাইক-কমেন্ট করতাম। একপর্যায়ে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হই। গ্রুপে ইসলামের বিভিন্ন আলোচনা করা হতো। সেখান থেকেই হিজরত সম্পর্কে জানতে পারি। গত ২২ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বের হওয়ার তিন দিন আগে জায়গা নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন আমরা পাঁচ নারী মহাখালীতে একত্রিত হই। সেখান থেকে আমরা বাসে করে চট্টগ্রামে যাই। চট্টগ্রামে যাওয়ার পরে আমাদের সঙ্গে আরো চারজন ছেলে যুক্ত হন।
সবাই মিলে বান্দরবান যাই, তবে সেখানে ভালো স্থান না পেয়ে আমরা আবার চট্টগ্রামে ফিরে আসি। সেখান থেকে ঢাকায় আসার জন্য বাসের টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু এই সময়ে আমাদের সঙ্গে থাকা এক তরুণী অসুস্থ হয়ে যায়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। এরপর হাসপাতাল থেকে যখন ছাড়া পাই, তখন বাস ছেড়ে দেয়। আমরা এসে বাস পাইনি। পরে চট্টগ্রামের এক হোটেলে উঠি। সেখান থেকেই র্যাব আমাদের উদ্ধার করে। পরে তারা আমাদের বাড়ি ছাড়ার পেছনে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও ভুল ধারণা সম্পর্কে বোঝালে আমরা সঠিক পথে আসতে উদ্বুদ্ধ হই।
হিজরত থেকে ফেরা তরুণ-তরুণীদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশ সেবায় অংশগ্রহণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে র্যাব ডিজি বলেন, জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি ডিরেডিক্যালাইজেশনের মতো নতুন পন্থা অনুসরণ করে পথভ্রষ্টদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে এনে তাদের বিভিন্ন পুনর্বাসনের মাধ্যমে সরকারের সন্ত্রাস বিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
র্যাবের এডিজি (অপারেশনস) কামরুল হাসান বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর ওই নয় তরুণ-তরুণী কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছিল। তাদের অনেকের পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। অনেকে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে আমরা চট্টগ্রাম থেকে নয়জনকে আমাদের হেফাজতে নিই। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের আমরা কাউন্সেলিং করেছি। পরে সবাই ভুল বুঝতে পেরে পরিবারের কাছে ফেরত যাওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে।
অভিযান আমাদের সামগ্রিক কার্যক্রমের একটি ক্ষুদ্র অংশ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছি তাদের উদ্দেশে বলব ব্যক্তিগতভাবে আমরা একজন ব্যক্তি হতে পারি, কিন্তু পরিবারের কাছে আমরা কিন্তু গোটা পৃথিবী। পিতার কাছে একজন সন্তান, স্বামীর কাছে স্ত্রী বা স্ত্রীর কাছে স্বামী অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা যদি পরিবারের কাছে থাকতাম তাহলে কখনো ভুল ধারণা থেকে বিপথগামী হতাম না।