সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় আইনপ্রণয়নের দাবি হিন্দু নেতাদের
স্টাফ রিপোর্টার : ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় কমিশন গঠন এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন হিন্দু নেতারা। এছাড়া বিভিন্ন সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার দ্রুত শেষ করাসহ নানাবিধ সংকটের আশু সমাধানের দাবিও জানান নেতারা।শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সম্মেলনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে এসব দাবি জানানো হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্মেলনের উদ্ধোধন ঘোষণা করেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা। আলাদা দুটি ভূখন্ড সত্ত্বেও দু’দেশের জনগণের সংস্কৃতি ও পরম্পরাও অভিন্ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী সাথে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বেরও রজতজয়ন্তী পূর্ণ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো।’
সম্মেলনে অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এদেশে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করেছিলেন। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই বাঙালী হয়ে যুদ্ধ করেছিল, জয় বাংলা বলে আত্মাহুতি দিয়েছিল। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তি বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িকাতে পুর্নবাসিত করার চেষ্টা করেছে। সংবিধানে এখনো সাম্প্রদায়িকতার ছাপ রয়েছে, সামরিক শাসনের ছাপ রয়েছে। তাই অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিকল্প নেই।’
সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামাতের সাম্প্রদায়িক আস্ফালনের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন ধর্মীয় সংখ্যালঘু কমিশন। সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের সকল ঘটনার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
সম্মেলনে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামানিক বলেন, ‘দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৭.৯ শতাংশে নেমেছে। বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হলেও প্রতিবাদ হয়েছে নামমাত্র। জাতীয় সংসদে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধত্বকারী সদস্যের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংখ্যানুপাতিক তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংসদীয় আসন নির্ধারণ করতে হবে।’
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে গোবিন্দ প্রামানিক বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক নয়, কিন্তু একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ভাবাদর্শ সাম্প্রদায়িক। কমিশন গঠন করে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঘিরে সাম্প্রদায়িক হামলা ঠেকাতে প্রয়োজন কার্যকর আইন।’
সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আগত হিন্দু মহাজোটের চার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করে দেশের বৃহত্তম শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা । এজন্য বসুন্ধরা গ্রুপ ও গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হিন্দু নেতারা। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে এ খাবার হস্তান্তর করেনে, কালের কণ্ঠের উপ-সম্পাদক হায়দার আলী এবং নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের ডেপুটি চিফ নিউজ এডিটর আশিকুর রহমান শ্রাবণ।
এসময় হায়দার আলী বলেন, মানবতার স্বার্থে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে সবময়ই থাকে বসুন্ধরা গ্রুপ। তিনি জানান, ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিধান বিহারি গোস্বামীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কলকাতার দৈনিক আজকাল পত্রিকার জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক তরুণ চক্রবর্তী।