কেউ খেতে পায়না কেউ হাজার কোটি মালিক-রাজনীতির অনুমতি পেয়েই কাদের
বিশেষ প্রতিনিধি : আদালতের নির্দেশে রাজনীতির অনুমতি পেয়েই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের একরাশ ক্ষোভ ঝেড়ে বললেন, কেউ খেতে পায়না কেউ হাজার কোটি মালিক! কাদের বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই সমাজে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলেই রাষ্ট্রে প্রজাতন্ত্র সফল হয়। কারণ প্রজাতন্ত্র হচ্ছে- প্রজারাই রাষ্ট্রের মালিক। তারা দেশ পরিচালনার জন্য পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন- আবার প্রজাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করলে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারবেন।
তিনি বলেন, দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বৈষম্য দূর করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেই আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই বৈষম্য হচ্ছে স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থি। দেশে দিনে দিনে বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। এক দল মানুষ তিনবেলা খেতে পারছে না। টাকার অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছে না।
আরেক দল হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। তারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছেন। রোববার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের পরিচালনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জিএম কাদের বলেন, দেশের মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে এলসি খুলে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই চাহিদার তুলনায় কম পণ্য আমদানি হচ্ছে দেশে। এ কারণেই বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী নেই। এ কারণেই হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। আবার কাঁচামাল আমদানি সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কল-কারখানা। বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের আয় বাড়ছে না। তাই দেশের মানুষের মাঝে চাপা হাহাকার বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট বোঝার যেন কেউ নেই।
তিনি বলেন, কথা বলার অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। আমি গণমানুষের পক্ষে কথা বলব, এটা আমার শুধু অধিকারই নয়, কর্তব্যও। সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিলে সরকারের উপকার হয়। মানুষের সমালোচনার অধিকার নিশ্চিত হলে দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ভালো কাজের জন্য মূল্য দিতে হয়। তাই আমাদের প্রতিটি ভালো কাজের জন্যই মূল্য দিতে হবে। সেজন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতেও নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েও সংসদ বর্জন করেছে। দল দুটি সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে। আবার রাজপথে পালটাপালটি কর্মসূচি দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গণমানুষের শান্তি নষ্ট করেছে। জাতীয় পার্টি সব সময় সাধারণ মানুষের শান্তির জন্য রাজনীতি করে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ঠাকুরগাঁও-৬ এর প্রার্থী হাফিজ উদ্দিনের মতো প্রতিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হবেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাবুবুর রহমান লিপটন, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান খান, শফিকুল ইসলাম শফিক, এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, হুমায়ুন খান, কাজী আবুল খায়ের, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এমএ রাজ্জাক খান, আহাদ ইউ চৌধুরী প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।