‘গোলাপে’ সরকার বিব্রত
বিশেষ প্রতিনিধি : সরকারের শেষ সময়ে এসে এমপি গোলাপের কার্যকলাপে ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড দারুণ বিব্রত বোধ করছেন। অনেকের অভিমত এমপি গোলাপ সবকিছু খোলাসা করে মিডিয়ায় বললে ভাল হতো। কিন্তু তিনি তা না করে মিডিয়াকে এড়িয়ে চলায় দেশে বিদেশে সরকারের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে। সর্বশেষ গোলাপের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট তদন্তের নির্দেশ দেয়ায় সরকারের বিব্রত’তা আরো ঘনিভূত হলো।
যাহোক, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ি ক্রয় ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। নির্দেশনায় আগামী চার মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে দুদককে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত।
এর আগে, রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে ৯টি বাড়ি কেনার বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন হাইকোর্টে রিট করেন। রিট আবেদনে আবদুস সোবহান মিয়ার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।
আবদুস সোবহান গোলাপ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। ঢাকার আদালতে করা এই মামলায় তিনি ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আরজি জানিয়েছেন।
ঢাকার মহানগর তৃতীয় যুগ্ম জজ আদালতে এই মামলা করেন মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য গোলাপ।
যুক্তরাষ্ট্রে গোলাপের ‘বাড়ি’ নিয়ে দুদকে সুমন অভিযোগ দেওয়ার পর এই মামলা হল। আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন সুমন, গত বছর সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছিলেন সুমন; এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথাও বলেছিলেন তিনি। অভিযোগে তিনি বলেন, আবদুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক এবং অন্যান্য দেশে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় এ তথ্য গোপন করেছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। দুদকে অভিযোগ দেওয়ার পর সুমন বলেছিলেন, মাদারীপুরের সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, যার বিষয়ে আমি একটা ভিডিও করেছি।
ওদিকে ‘অরগানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের একটি প্রজেক্ট। যেখানে বলা হয়েছে, আব্দুস সোবহান গোলাপ নিউ ইয়র্কে ৯টা প্রপার্টিজ করেছেন। যেগুলো তার নিজের নামে আছে এবং এখন পর্যন্ত তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেননি।এদিকে ভিডিও প্রচার এবং দুদকে মামলার কারণে মানহানি হয়েছে উল্লেখ করে আবদুস সোবহান গোলাপ গনমাধ্যমে কে বলেন, সুমনকে আমি উকিল নোটিস দিয়েছি, এর কোনো জবাব পাইনি। এর ফলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ৫০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি জাতীয় সংসদের সদস্য, আমি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট মেম্বার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছি। আমাকে নিয়ে দেশে-বিদেশে ভিডিওর মাধ্যমে এবং দুদকে গিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে মিথ্যা অপপ্রচার করেছে, এতে করে সামাজিকভাবে আমার মানহানি হয়েছে।
আমি সেই কারণে ৫০০ কোটি টাকার মামলা করেছি। উকিল নোটিসের কথা তুলে ধরে গোলাপ বলেন, মামলা করার আগে আমি উকিল নোটিস দিয়েছি, সেখানে বলেছিলাম, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের জন্য আবার লাইভে এসে ক্ষমা চাইতে হবে, সব স্থানে মিথ্যাচারের জন্য মাফ চাইতে হবে। আমি কোন উত্তর পাইনি। মামলার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সুমন বলেন, কোনো উকিল নোটিস আমি পাইনি।