মেডিকেলে ভর্তি ক্রিমিনাল নিতিশের গোমর ফাঁস
বিশেষ প্রতিনিধি : অতিরিক্ত সচিবের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁর নাম নিতিশ চন্দ্র সরকার। বর্তমানে তিনি অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটি বা এলপিআরে রয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগে কর্মরত। এস এম আনিস নামে তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। নিতিশ চন্দ্রকেও নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। যেকোনো সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আসলে আনিসের নেতৃত্বে এই চক্রে সদ্য অবসরে যাওয়া সরকারের একজন কর্মকর্তার নাম এসেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি।
গ্রেপ্তার হওয়া আনিসের সঙ্গে পরিচয় থাকার কথা স্বীকার করলেও প্রতারণায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নিতিশ চন্দ্র সরকার। তিনি গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টাকা নেওয়ার তথ্যটি মিথ্যা।’ আনিসের সঙ্গে কীভাবে পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ও আমার কাছে আসত।’ কী কাজে আসত, জিজ্ঞেস করা হলে কোনো উত্তর দেননি নিতিশ চন্দ্র।
আনিসের হেফাজত থেকে ২০২৩ সালের (গতকাল অনুষ্ঠিত) এমবিবিএস পরীক্ষার অনেকগুলো প্রবেশপত্র, আগের এমবিবিএস পরীক্ষার প্রবেশপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক চেক, পুলিশ কনস্টেবল প্রার্থীর প্রবেশপত্র, বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, একাধিক প্যাড, ৫টি ডিজিটাল এবং সনাতন স্ট্যাম্প, সিল এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে ডিবি।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, আনিসের মাধ্যমে মেডিকেলে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে দিতেন নিতিশ চন্দ্র। এ ছাড়া কয়েকজনের সঙ্গে প্রতারণাও করেছেন তিনি। সর্বশেষ এক শিক্ষার্থীকে বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন এই অতিরিক্ত সচিব। তবে এ পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে পেরেছেন, সে তথ্য এখনো জানা যায়নি। মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া ও টাকা লেনদেনের বিষয়ে এই অতিরিক্ত সচিব ও আনিসের কথোপকথনের একাধিক রেকর্ড পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ জানিয়েছে, আনিস ও অতিরিক্ত সচিব ছাড়া আরও একজন এই চক্রের হয়ে কাজ করেন। তাঁর নাম জাহিদ। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছে।
গ্রেপ্তার আনিসের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, এসএসসি পাস করা আনিস একসময় জুট মিলে কাজ করতেন। একসময় ফার্মগেট ও গ্রিন রোড এলাকায় ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম বিক্রি করতেন। একপর্যায়ে তিনি জড়িয়ে যান মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার প্রতারণায়। মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার উদ্দেশ্যে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে একটি কনসালটিং ফার্মও খুলে বসেন আনিস।
আনিসের ভাষ্যমতে, শিক্ষার্থী সংগ্রহের কাজটি করতেন তিনি। আর বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মেডিকেলে ফোন করে বলে দিতেন এসব মেডিকেলের তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব।ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এই প্রতারণার সঙ্গে আরও কারা জড়িত আছে, তা আমরা তদন্ত করছি। সম্পৃক্ততা পাওয়া সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।