মহান স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ
ডেস্ক রিপোর্ট : মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গতকাল রবিবার জাতি উদযাপন করেছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের চেতনায় দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট ও সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় উচ্চারিত হয়েছে দেশজুড়ে।
একাত্তরের গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতির পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার দাবিও জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে এক বার্তায় দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট ও সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান।
গতকাল ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দেশের ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সূচনা হয়। ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় (তেজগাঁও) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩০ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির ছয়টি গান ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি স্যালুট প্রদর্শন করে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল এ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে।
শেখ হাসিনা পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আরো একবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদ উপনেতা ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
এরপর একে একে জাতীয় সংসদের স্পিকার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদসচিব, তিন বাহিনীর প্রধানরা, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।
গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও ঢাকা মহানগরীতে দৃশ্যমান উঁচু ভবনগুলোয় জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সাজানো হয়। এ দিবসে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বেতারে প্রচার করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান ও ক্রোড়পত্র। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতকায় সজ্জিত করা হয়। ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদকদল বাদ্য পরিবেশন করে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করে।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করা হলে বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের ভিড়। তবে রমজান মাসের কারণে আগের তুলনায় ভিড় কিছুটা কম ছিল। এর পরও শহীদবেদি ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। লাল-সবুজের পতাকায় ছেয়ে যায় সৌধ প্রাঙ্গণ। সবার হাতে ছিল ফুল। পোশাকে লাল-সবুজের ছোঁয়া।
এ সময় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং সব বয়সী মানুষকে স্মৃতিসৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে একে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, গণফোরাম, জাসদ, বাম দলসহ বিভিন্ন দলের পক্ষে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা প্রতি নিবেদন করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা এবং শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষও এসেছিল। সবার চোখেমুখে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা বিনির্মাণের অবিচল আস্থার ছাপ। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে স্মৃতিসৌধ ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয়েছে উত্সবের নগরীতে।
স্মৃতিসৌধ এলাকায় ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নিরাপত্তার কঠোর ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরাসহ সাদা পোশাকেও পুলিশের নজরদারি রাখা হয়।
বিভিন্ন দলের নেতারা বললেন : স্মৃতিসৌধে বীর শহীদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার। তিনি এ সময় গণহত্যা নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাধীনতার এই মহান দিনে আমরা শপথ গ্রহণ করছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনব। দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব।