বিশেষ প্রতিনিধি/কোর্ট রিপোর্টার : রাজধানীর মগবাজারের সাবেক এমপি আসমা জেরিন ঝুমুর মামলায় স্থানীয় ফকির মাহমুদ ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি লুটপাটকারী ৩ ভাসানীসহ চার জনকে এক বছর কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে বিজ্ঞ আদালত। এই ভাসানীরা হচ্ছে নাসির ভাসানী, সাহিদ ভাসানী, শুকুর ভাসানী ও আসাদুজ্জামান। এরা মগবাজারের ফকির মাহমুদ ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি লুটপাট করে খাচ্ছিল।
এর প্রতিবাদ করায় এরা এমপি ঝুমুর বিরুদ্ধে উল্টো সম্পত্তি দখলের অভিযোগ এনে ওয়াকফ প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানব বন্ধন করে এমপি ঝুমুর মানহানি করে।
এই ক্রিমিনালরা ওয়াকফ কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে তাদের ভাড়া করা লোকজন দিয়ে। এরা ব্যানার, প্লাকার্ডে- ‘ফকির মাহমুদ ওয়াকফ এস্টেটের জমি জবর দখলকারী মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আসমা জেরিন ঝুমুরের বিচার চাই, বিচার চাই’ উল্লেখ করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আদালতে মানহানি মামলা দায়ের করেন সাবেক এমপি আসমা জেরিন ঝুমু। এরপ্রেক্ষিতে আদালত ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে আজ বুধবার আসামীদের বিচার অন্তে জেল দেন।
সরেজমিনে আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আসমা জেরিন ঝুমুর করা মানহানির মামলায় চারজনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, সাহিদ ভাসানী, মো. আসাদুজ্জামান, নাসির ভাসানী ও শুকুর ভাসানী। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর আসামিপক্ষে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১ মার্চ এই মামলা দায়ের করেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আসমা জেরিন ঝুমু। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ‘৪ নং নিউ ইস্কাটন রোড ফকির মাহমুদ ওয়াকফ এস্টেটের জমি জবর দখলকারী মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আসমা ঝুমুরের বিচার চাই, বিচার চাই’- ব্যানার টানিয়ে তার মান-সম্মানের উপর চরম আঘাত হেনেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
আদালত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে হাতিরঝিল থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সুব্রত দেবনাথ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ নভেম্বর চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর চার মাসের মধ্যে বিচার শেষ হয়। বিচার চলাকালে পাঁচজনের তিনজন আদালতে জবানবন্দি দেন।
এ সম্পর্কে সাবেক এমপি আসমা জেরিন ঝুমু দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, আদালতের রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এই ক্রিমিনালরা দীর্ঘদিন ধরে ফকির মাহমুদ ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি লুটপাট করে খাচ্ছিল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে ক্রিমিনালরা উল্টো তাঁকে অভিযুক্ত করে ওয়াকফ প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে তাঁর মান-সম্মানের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। আসলে এই ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি আমার দাদি সুবুর বিবির ছিল। তার চার কন্যা ওয়ারিশ সূত্রে প্রায় ৯০ বছর যাবত ওয়াকফ আওলাদ হিসেবে ভোগদখলে আছে। তখন থেকে ওয়ারিশরা সম্পত্তি ক্রমান্বয়ে ভোগদখল করে যাচ্ছে এই সম্পত্তি।
সুবুর বিবির বাবা দাতা ফকির মাহমুদ নিজের চার কন্যাকে সুবুর বিবি, জহুর বিবি, নাজির বিবি ও শবলা বিবিকে সম্পত্তি ভোগদখল করার জন্য নিজে ঘর তুলে দেন। তখন থেকে ওয়ারিশরা সম্পত্তি ভোগ দখল করে যাচ্ছে। তারপর এই সম্পত্তি ৪০ সালে ওয়াকফ হয়। এখানে আসমা জেরিন ঝুমু ওয়ারিশ সূত্রে মালিক। তিনি কারো সম্পত্তি দখল করে নাই।