টসটসে যশোরের আঙুর
লাবণ্য চৌধুরী : না এটা কোনো বিদেশী বাগানোর আঙুর গাছ না। এটা বাংলাদেশের যশোরের মনসুর আলীর আঙুর বাগান। টসটসে আঙুর যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। সোনার দেশের সোনার ফসল ফলিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মনসুর। সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোরের মনসুরের ক্ষেতে থোকায় থোকায় আঙুর ফল ঝুলছে ।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আবু তালহা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, এর আগে কেউ যশোরে এমন বাগান করতে পারেনি। লেবুতলা গ্রামের চাষি মুনসুর আলী ৩৩ শতক জমিতে আঙুরের চাষ করেছেন। ভালো ফলনও হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত মিষ্টি আঙুরের চাষ হয় না। কিন্তু মুনসুর আলী ভারত থেকে চারা সংগ্রহ করে আঙুর চাষ করেছেন। সফলও হয়েছেন। আমরা তার ক্ষেত সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি।
কথা প্রসঙ্গে মনসুর আলী দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানালেন, ইউটিউব দেখে মিষ্টি আঙুর চাষ করেছি। যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের কৃষক মুনসুর আলীর বয়স ৫৫। তার এই আঙুরের চাষ পদ্ধতি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন আঙুর ক্ষেতে। অনেকে আবার আঙুরের চারাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে কলম বা চারা কিনে লাগালেও ভালো ফলন পাননি কৃষক মুনসুর আলী। কিছু ফলন পেলেও তা ছিল খুবই টক এবং পরিমাণেও কম। সর্বশেষ ইউটিউবে আঙুর চাষের পদ্ধতি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০ মাস আগে তিনি ৩৩ শতক জমিতে ভারতীয় চয়ন ও ইটালির সনিকা জাতের ১২০টি আঙুরের চারা রোপণ করেন। চারা রোপণের ৭ মাস পর গাছে ফল আসে।
কৃষক মুনসুর আলী জানান, ভারতের কাস্মীর থেকে চারা কিনে চাষ শুরু করেন। প্রথমবার সাত মাসের মাথায় গাছগুলোতে আঙুর ধরেছিল প্রায় ৫ থেকে ৭ মণ। তবে প্রথম ফল পাওয়ায় একটিও বিক্রি না করে এলাকার মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারের ফলনেও গাছে আঙুরের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৩৩ শতাংশ জমিতে ২০০ মণের বেশি আঙুর হবে বলে আশা করছেন তিনি। এই গাছে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে।
আঙুর চাষের সফলতা নিয়ে মুনসুর আলী বলেন, আমি ইউটিউব দেখে চিন্তা করি বাহিরের দেশে আঙুর চাষ হলে আমাদের দেশের মাটিতে হবে না কেন? এখানে যা চাষ করা যায় তাই হয়। অতএব আঙুরও হবে। তবে ইউটিউব দেখে চাষ করতে আমার বেশ খরচ হয়েছে। এ বছর আরও দেড় বিঘা জমিতে নতুন করে চাষ শুরু করছি। তিনি জানান, আঙুর গাছ ৮ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়েছে। এ গাছ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে প্রতিটি গর্তে পাঁচ কেজি বিভিন্ন উপাদান দেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে ইটের গুঁড়া, মোটা বালু এবং জৈব সার। এগুলো ৩ ফুট গর্ত করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্তে দেওয়া হয়। প্রতিটা গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করা যাতে গোঁড়ায় পানি না জমে। আঙুর গাছ যাতে দ্রুত লম্বা হতে পারে এর জন্য উঁচু করে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে মাচা তৈরি করেছেন। এর ফলে ঝড়-বৃষ্টিতে গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম।
সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, মুনসুর ভাই যখন আঙুরের চারা রোপণ করেন তখন এলাকার অনেকেই তাকে নিয়ে ঠাট্টা করতো। আমরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে সে একজন কৃষক হয়ে এতো বড় ঝুঁকি কীভাবে নিল। তবে মুনসুর ভাই এখন সফল। এক দর্শনার্থী বলেন, আমার বাড়ি পাশের কোদালিয়া বাজারে। আমি দেখতে এসেছি, চারাও কিনে নিয়ে যাব, জমিতে লাগাবো। বর্তমান সময়ে আমাদের মতো যুবকেরা চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরা কিছু করার চেষ্টা করলে তা সম্ভব।