জাতীয়

৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটির বাজেটে দাম বাড়তি আতংক

 

সংসদ রিপোর্টার : আগামী অর্থবছরের (২০২৩–২৪) জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা ২ মিনিটে তিনি বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। এর আগে জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। সেখানেই প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি পঞ্চম বাজেট। ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতায় তিনি ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করছেন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড়। বাজেটটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকার প্রাক্কলিত জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ।এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বেশি।

স্মার্ট বাংলাদেশে’র জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করতে চায় সরকার; এজন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনমুখী শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ তৈরি ও সম্প্রসরণে কাজ করা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে তরুণ-তরুণীদের কাজের সুযোগ বাড়ানো হবে। প্রথাগত কর্মসংস্থানের ধারণা থেকে বের হয়ে তারা যেন বিভিন্নমুখী ও উদ্ভাবনী উদ্যোগে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে, নিজের ও সমাজের পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে পারে; সরকার তরুণদের মধ্যে সে ধরনের প্রণোদনার সঞ্চার করতে চায়।নতুন অর্থবছরের বাজেটেও অন্যান্য উন্নয়নের পাশাপাশি তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাগত উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্রের মাধ্যমে ৮০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন উপযোগী অবকাঠামো গঠন ও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে সেসব সম্পর্কেও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।তিনি বলেন, সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ‍ও বৈদেশির মুদ্রার বিনিময়র হার স্থিতিশীল রাখাই এ মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ।

স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ল ১২ শ কোটি টাকা

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন অর্থবছরে এ খাতে এক হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

প্রতিরোধযোগ্য রোগগুলো থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে চলমান রাখা হয়েছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। ১৯৮৫ সালে ইপিআই কভারেজ ছিল মাত্র ২ শতাংশ, যা বর্তমানে ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ১০৬টি উপজেলায় মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার (এমএইচভি) কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির (এসএসকে) আওতায় টাঙ্গাইল জেলার ১১টি উপজেলায় আন্তঃবিভাগীয় রোগীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বেনিফিট প্যাকেজের অধীনে ৭৮টি নির্ধারিত রোগের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, গ্রামীণ জনগণের কাছে সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর কার্যকর মাধ্যম হিসেবে আমরা এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩৮৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারত্বে পরিচালিত হয়। ক্লিনিকের জন্য জমি প্রদানের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনায়ও ভূমিকা রাখেন। ক্লিনিক পরিচালনা ও ওষুধ-চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব সরকারের। ক্লিনিকে মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা (আইএমসিআই), প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, সাধারণ আঘাতের চিকিৎসা ছাড়াও পুষ্টিসেবা প্রদান করা হয়।

এছাড়া, ক্লিনিকে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়। বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া হয়। ক্লিনিক থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়াও শিশুদের অনুপুষ্টিকণার প্যাকেট দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনা পয়সায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দৈনিক গড়ে ৪০ জন সেবাপ্রার্থী সেবা গ্রহণ করে থাকেন, যার ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। সারা দেশে প্রায় ৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবসেবা দেয়া হয়।

মোবাইল ফোন: প্রতি বছর মোবাইলফোন পাল্টানো ফ্যাশনের অংশ, যা শখে পরিণত হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে আইএমএফ-এর পরামর্শে মোবাইলফোনকে বিলাসীপণ্য বিবেচনায় নিয়ে বাজেটে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইলফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে, সেখানে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। আর সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে মোবাইলফোনের দাম বাড়তে পারে।

গৃহস্থালি সামগ্রী: বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী উৎপাদনে থাকা ৫ শতাংশ ভ্যাটকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। একইহারে বাড়ানো হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী ও তৈজসপত্রের (হাঁড়িপাতিল, থালাবাসন) ভ্যাট। কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে টিস্যু পেপারের দাম বাড়তে পারে। হরে বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত বাড়িতে খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করা হয়।

শুল্ক ফাঁকি রোধে বাজেটে সব ধরনের মাইক্রোওয়েব ওভেন আমদানির শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়াচ্ছে। এর ফলে মাইক্রোওয়েব ওভেনে মোট করহার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ হচ্ছে। এতে বিদেশি গৃহস্থালি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

দাম বাড়তি-

বাসমতি চাল: রসনা বিলাসে বিরিয়ানি-তেহারির প্রধান উপকরণ বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে চালের দাম বাড়তে পারে। বাসমতি চালের দাম বাড়ায় বাড়তে পারে বিরিয়ানি কিংবা কাচ্চির দামও।

নির্মাণসামগ্রী: বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। বিদেশি টাইলস আমদানিতে এতদিন কর রেয়াত ছিল, যা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশি টাইলসের দাম বাড়তে পারে।

ফ্ল্যাট বেঁচা কেনায় দাম বাড়বে-

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ) এলাকায় জমি নিবন্ধনের ট্যাক্স বিদ্যমান ৩ শতাংশ ও ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৫ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া ফ্ল্যাট বিক্রিতে বিদ্যমান গেইন ট্যাক্স বাড়তে পারে। ফলে আগামী অর্থবছর থেকে উভয় ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ গুণতে হবে।

কলম: কলম উৎপাদনে বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে কলমের দাম বাড়তে পারে।

সিগারেট: বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (যেমন-হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যমস্তরের (স্টার, নেভি) ১৩৪, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) ২২৬ এবং অতি উচ্চস্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে জর্দা-গুলের দামও। তবে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।

মোবাইল ফোন বিদেশি ফল এর দাম বাড়বে-

দেশে কাজুবাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে এ ফলটি আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই আমদানি করা কাজু বাদামের দাম বাড়তে পারে। বাজেটে তাজা ও শুকনা খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এর ফলে বেড়ে যাচ্ছে বিদেশি এ ফলটির দাম। বাজেটে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করায় অন্যান্য বিদেশি ফলের দামও বাড়তে পারে।

বাড়বে চশমার দাম-
চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে সব ধরনের চশমার দাম বেড়ে যেতে পারে।

বিদেশ ভ্রমণে কর আরোপ-
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাড়তি করের চাহিদা মেটাতে বিদেশগামী যাত্রীদের ওপর ৩০০-৫০০ টাকা বাড়তি কর আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। এতে বিদেশে যাওয়া-আসা খরচ বেড়ে যেতে পারে। তবে হজ কিংবা চিকিৎসার জন্য যারা বিদেশ ভ্রমণ করবেন, তারা আগের মতোই কর সুবিধা পাবেন।

চলন্ত সিঁড়ি-লিফট আমদানি ট্যাক্স ৩ গুণ বাড়বে-

লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি আমদানির ক্ষেত্রে বাড়তি ব্যয় গুণতে হবে। দেশে লিফট উৎপাদন হওয়ায় দেশীয় পণ্যের ব্যবহার গুরুত্ব দিতে আমদানির ওপর শুল্ক তিনগুণ বাড়ানো প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে। বিদেশ থেকে লিফট আনার ক্ষেত্রে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চায় সরকার।আর চলন্ত সিঁড়ি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে।বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, বর্তমানে কিছু দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান লিফট উৎপাদন শুরু করেছে।

কিন্তু সম্পূর্ণ অবস্থায় আমদানি করা লিফট এবং উত্তোলক যন্ত্র আমদানিতে ৫% আমদানি শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। দেশে ভারী শিল্পের প্রসারের স্বার্থে এসব পণ্য আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।তিনি চলন্ত সিঁড়ি আমদানিতে শুল্ক ১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। বলেছেন, পণ্যটি মূলধনী যন্ত্রপাতি নয়; তাই এর আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ১% থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।

টিন থাকলেই ট্যাক্স ২ হাজার

আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ন্যূনতম আয়কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে অথচ সরকার থেকে সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে এমন সব করদাতার ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেন তিনি।

এই প্রস্তাব পাস হলে করমুক্ত আয়সীমার নিচে আয় থাকলেও নির্ধারিত সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সব সেবাগ্রহিতাকেই ন্যূনতম কর দিতে হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। তা সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের পঞ্চম বাজেট, টানা ১৫তম এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট।

বাড়ছে ইট-সিমেন্টের দাম

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ইটে ভ্যাট ও সিমেন্টে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়বে। এতে দুটি পণ্যের দাম বাড়বে।যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া তৈরি সাধারণ ইটে ভ্যাট (নন-রিফ্লেকটরি বিল্ডিং ব্রিকস) প্রতি হাজারে ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ করা হয়েছে। তবে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটি ‘ফেসিংয়ে’ ব্যবহৃত ইটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

সিমেন্টের মূল কাঁচামাল ক্লিংকারের আমদানি শুল্ক প্রতি টনে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য ক্লিংকারে শুল্ক একই হারে বেড়ে ৯৫০ টাকা হবে।‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বাজেটে এসব প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।উল্লেখ্য, বাজেট ঘোষণার দিনই সাধারণত আমদানি শুল্ক ও করসংক্রান্ত প্রস্তাব কার্যকর হয়।

দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের-

আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে বেশ কিছু পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানোর সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে কিছু পণ্যের দাম কমতে পারে।

ওষুধ
এবারের বাজেটে ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা ও ক্যানসারের কিছু ওষুধে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ওষুধের কাঁচামাল আমদানিকে শুল্ক মওকুফের আওতায় আনা হবে। ফলে দাম কমতে পারে কিছু ওষুধের।

বিস্কুট
হাতে তৈরি বিস্কুটের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি সীমা প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা এবং কেকের ভ্যাট অব্যাহতি সীমা ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। ফলে বিস্কুটের দাম কমবে।

মিষ্টি
বাজেটে দাম কমার তালিকায় রয়েছে মিষ্টি। কারণ মিষ্টির ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে মিষ্টি জাতীয় আরও কিছু প্যাকেটজাত পণ্যেও ভ্যাট কমানো হচ্ছে। ফলে কমতে পারে মিষ্টির দাম।

সাবান ও শ্যাম্পু
সাবান ও শ্যাম্পুর কাঁচামালের উৎপাদন পর্যায়ে বর্তমানের হ্রাসকৃত পাঁচ শতাংশ ভ্যাট সুবিধা আরও এক বছর বাড়ানো হতে পারে। ফলে সাবান ও শ্যাম্পুর দাম কমতে পারে।

কনটেইনার
আমদানি ও রপ্তানিতে ব্যবহৃত কনটেইনারের দাম কমতে পারে। কনটেইনার আমদানিতে কর কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগে ৩১ থেকে ৩৭ শতাংশ ছিল।

অপটিক্যাল ফাইবার-
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল উৎপাদনে করছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেটে। ফলে অপটিক্যাল ফাইবারের দাম কমতে পারে।এ ছাড়া উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, টার্বো ইঞ্জিন, মাইক্রোবাস, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, কৃষি যন্ত্রপাতি ও উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশের দাম কমতে পারে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button