বিশেষ প্রতিনিধি নওগাঁ থেকে ফিরে : খাদ্যমন্ত্রীর অখাদ্য কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ নওগাঁর মানুষ।ভুক্তভোগীরা বলছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে খাদ্যমন্ত্রীর কোনো কর্মসূচি নেই। নওগাঁর পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলার মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত। অথচ তারা কাছে পান না তাদেরই ভোটে নির্বাচিত খাদ্যমন্ত্রীকে। সেদিকে যেন কোনো ভ্রক্ষেপ নেই খাদ্যমন্ত্রীর। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে সম্পদে ফুলে ফেঁপে উঠছেন খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন এর কথা হয় মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে। মন্ত্রী মহোদয় প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এসব মিথ্যা কথা, ভুয়া কথাবার্তা ছড়ানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আমার এলাকায় আমি সবচেয়ে বেশী যাই। মাঝে আমি আড়াই মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। পোরশার মানুষের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে গলব্লাডারের ব্যথায় আক্রান্ত হই। ওই পেইন নিয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। গত ২৬ মে থেকে এলাকায় নিয়মিত যাচ্ছি। আসলে যারা এলাকার উন্নয়ন চায় না এবং আওয়ামী লীগ বিরোধীরা এসব প্রপাগান্ডা রটিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের চেষ্ঠা করছে।এরা আসলে দেশের উন্নয়ন চায়না বলেই পত্রিকায় অভিযোগ দিয়ে বেড়ায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ মানের ও উপজেলা পর্যায়ের ধান-চালের ব্যাবসায়ী থেকে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করে এখন কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন। রাজনীতির আগে গাড়ী না থাকলেও এখন চড়েন ৬৪ লাখ টাকা দামের গাড়ীতে। আগে পাইক পেয়াদা না থাকলেও এখন রয়েছে ডজন খানেক। ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকা জমা। ধান-চালের চেয়েও রাজনীতিকে পুঁজি করে অঢেল সম্পদ গড়েছেন তিনি। রাজনীতির নামে অনিয়ম করে সম্পদ গড়লেও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
জানা যায়, ১৯৫০ সালে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর বলদাইঘাট গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের। বাবা মৃত কামিনী কুমার মজমুদার ছিলেন শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সে সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিলো না। ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা দিয়ে নওগাঁর নিয়ামতপুরে যেতো হতো সাধারণ মানুষকে। যানবাহন নেই। নৌকা, পায়ে হেঁটে, সাইকেলে, ঘোড়াগাড়ী বা গরুর গাড়ী করে চলাচল করতে হতো। একেবারে পল্লী বলতে যা বোঝায় তাই ছিলো নিয়ামতপুর উপজেলাটি।
সে উপজেলার অধিকাংশ মানুষের কর্ম ছিলো কৃষিকাজ। কৃষির সাথেই জড়িত বলে খাদ্যমন্ত্রী সাধনা চন্দ্রের পিতা ধান চালের ব্যাবসাও করতেন। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে খুব বড় ব্যবসা ছিলো না। সেই পরিবার থেকে উঠে এসে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এখন কোটিপতি। ১/১১ এর পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে ২০০৮ সালে পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এর আগে এই আসন থেকে আরো দুবার নির্বাচন করলেও বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে হেরে যান।
মূলত ১/১১ এর পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনই তাঁর জীবনে আর্শীবাদ। তাতেই হয়ে গেলেন কোটিপতি। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় এখন কান পাতলে শোনা যায় স্কুল মাস্টারের ছেলে ও ধান ব্যবসায়ি সাধন চন্দ্র মজুমদারের এত টাকা ও সম্পদ হলো কি করে। এলাকায় আরো জনশ্রুতি আছে, বেসরকারি নিয়োগ বাণিজ্য, স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য, জায়গা জমির কেনাবেচা, সরকারি কাজের ঠিকাদারি কমিশন বাণিজ্য তাকে এমন সম্পদ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। নামে বেনামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদও গড়েছেন। আছে কালো টাকাও। কিন্তু সেই কালো টাকা কোথায়। লুকিয়ে রেখেছেন তা কেউ জানেনা। জানে শুধু পরিবারের সদস্যরা।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গত দুই সংসদ নির্বাচনে প্রদানকৃত হলফনামা থেকে জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি হলফনামায় কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় দেখান ৩০ হাজার টাকা। কৃষি জমির পরিমান দেখান লিজসহ ২৩ বিঘা। ব্যবসা থেকে আড়াই লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র / ব্যাংক আমানত (এফডিআর) দেখান ৪৯ লাখ টাকা। নিজনামে ব্যাংকে নগদ টাকা দেখান ২১ লাখ ৪১ হাজার ৮০৫ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ছিলো ১০ লাখ ৫০০ টাকা। পোস্টাল সেভিং, সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৩৯ লাখ টাকা। গাড়ী ছিলো দুটি একটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, অপরটি করমুক্ত ৪১ লাখ ৬৯ হাজার টাকার। বিয়ে সূত্রে পেয়েছেন ১২ ভরি সোনা। এই হলফনাফায় তিনি স্বাক্ষর করেন ২ ডিসেম্বর ২০১৩ ইং সালে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি হলফনামায় কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় দেখান ৩৫ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র / ব্যাংক আমানত (এফডিআর) দেখান ১ কোটি ৮৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। নিজনামে ব্যাংকে নগদ টাকা দেখান ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ছিলো ২৪ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা। পোস্টাল সেভিং, সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৭৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮৩ টাকা। এই নির্বাচনের সময় মাত্র একটি গাড়ীর তথ্য হলফনামায় তুলে ধরেন। হলফনামা মতে গাড়ীটির মূল্য ধরা হয়েছে ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৪২ টাকা। গত দুই সংসদ নির্বাচনে ১২ ভরি সোনাই রয়ে গেছে।
জমিও লিজসহ ২৩ বিঘায় রয়ে গেছে। এছাড়া ১১ কাঠার একটি অকৃষি জমির কথা বলা হয়েছে যার মূল্য ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩২ টাকা। তবে ২০১৩ সালের হলফনামায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক নওগাঁ শাখা থেকে সিসি ঋণ দেখান ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৮ টাকা। পরের নির্বাচনে তিনি এই ঋণটি সমন্বয় দেখান। ২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানি ভাতা পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। আয়ের উৎসে অন্যান্য / এফডিআর থেকে প্রাপ্ত সুদ হিসেবে দেখান ৪ লাখ ১০ হাজার ৫০৯ টাকা। এর আগের নির্বাচনের হলফনামায় সেটা দেখানো হয়নি। ফ্রিজ একটি, ফ্যান ৩টি, খাট ২টি, ড্রেসিং টেবিল ১টি, ডাইনিং টেবিল ১টি দেখানো হলেও এসির হিসাব তুলে ধরা হয়নি।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের হলফনামার হিসেবেই কোটি কোটি টাকা দেখা যায়। এক সংসদ নির্বাচন থেকে অপর সংসদ নির্বাচনের মধ্যেকার মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র এই কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েন। দুই নির্বাচনের হলফনামা দৃশ্যত হলেও অদৃশ্য সম্পদ কত আছে সে বিষয়ে তার লোকজন কোন মুখ খুলছে না। তার নির্বাচনী এলাকার সাধারণ ভোটারদের কাছে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলেও কেউ সাক্ষাতকারও দিতে রাজী হয়নি। নিয়ামতপুরের কয়েকজন বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায়, খাদ্যমন্ত্রীর ভাই আছেন মনোরঞ্জন মজুমদার মনা। তিনি এগুলো দেখাশোনা করেন। তিনি জানতে পারলে নির্যাতন করা হবে। এই নির্যাতনের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেনা। তারা জানান, দখল, টেন্ডার ম্যানেজ, জমি বেচাকেনা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে খাদ্যমন্ত্রীর ভাই মনা মজুমদারের বিরুদ্ধে।
পোরশা, নিয়ামতপুর ও সাপাহার উপজেলা সদরের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, খাদ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা হলেও তিনি এলাকায় নিয়মিত যাননা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে তিনি জেলা পর্যায়েই থাকেন। তাই এলাকার মানুষের অভাব, অনাটন, দাবী দাওয়া তিনি শোনেন না। নিজের সুবিধামত তিনি এলাকায় আসেন। আর নির্বাচন কাছে এলে তাকে এলাকায় দেখা যায়। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ভাই ও তার সিন্ডিকেট সদস্যরা এলাকায় এলাকায় টহল দিয়ে থাকে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজস্ব সিন্ডিকেট দিয়ে তার নির্বাচনী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। ভোটাররা ভোট দিয়েছিলো উন্নয়নের আশায় কিন্তু এখন সে সব গুড়েবালি। খাদ্যমন্ত্রী নানা অনিয়ম করে নিজ এলাকায় এখন বিষফোড়া। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, তাদেরকে মূল্যায়ন না করে মন্ত্রী ভাইলীগ ও সিন্ডিকেট লীগ তৈরি করেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন এর কথা হয় মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে। মন্ত্রী মহোদয় প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এসব মিথ্যা কথা, ভুয়া কথাবার্তা ছড়ানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আমার এলাকায় আমি সবচেয়ে বেশী যাই। মাঝে আমি আড়াই মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।
পোরশার মানুষের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে গলব্লাডারের ব্যথায় আক্রান্ত হই। ওই পেইন নিয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। গত ২৬ মে থেকে এলাকায় নিয়মিত যাচ্ছি। আসলে যারা এলাকার উন্নয়ন চায় না এবং আওয়ামী লীগ বিরোধীরা এসব প্রপাগান্ডা রটিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের চেষ্ঠা করছে।এরা আসলে দেশের উন্নয়ন চায়না বলেই পত্রিকায় অভিযোগ দিয়ে বেড়ায়।