কোম্পানি আইনে গিল্টি ড.ইউনূস!
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইনের আওতায়ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অপরাধের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণও তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, দুর্নীতি ও নানা অপরাধ এবং শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে। আদালতে বিচারাধীন কিছু মামলার রায় নিজের পক্ষে আনার জন্য ঘুষ দেওয়ার অপরাধ দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ অনুসারে, ড. ইউনূস পরিচালিত সব প্রতিষ্ঠানে মধ্যযুগীয় কায়দায় শ্রমিক অধিকার, শ্রমিক-কর্মচারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ তাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়নমূলক কর্মকান্ড চালানো হয়েছে। তাঁর পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় রয়েছে স্বেচ্ছাচারিতা, প্রতিনিয়ত আইনের লঙ্ঘন এবং নানা ধরনের তুঘলকি কান্ড। সামাজিক ব্যবসার নামে তিনি দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন এবং সেই টাকা দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত নামে বিভিন্ন দেশে সম্পদ কেনাসহ নানা রমরমা ব্যবসা করছেন। এর কিছু অংশ বিদেশে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজে লবিস্টের পেছনে ঢেলেছেন।
জানা যায়, কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানিকেই তাদের বার্ষিক রিটার্ন রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি)-এর কাছে দাখিল করতে হয়। ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকম অসত্য বিবৃতি দিয়ে আরজেএসসির কাছে তাদের বার্ষিক রিটার্ন দাখিল করেছে। গ্রামীণ টেলিকম তাদের বার্ষিক রিটার্নে বিবৃতি দেয়, এ কোম্পানি থেকে কোনো লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়নি। এ বিবৃতি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কারণ বহু বছর ধরে গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ কল্যাণে হাজার হাজার কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে। বার্ষিক রিটার্নে এ ধরনের মিথ্যা বিবৃতি ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ধারা ৩৯৭ অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর ৩৯৭ ধারায় মিথ্যা বিবৃতির জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি এ আইনের আওতায় আবশ্যকীয় বা এ আইনের কোনো বিধানের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে প্রণীত কোনো রিটার্ন, প্রতিবেদন, সার্টিফিকেট, ব্যালান্স শিট, বিবরণী অথবা অন্য কোনো দলিলে কোনো গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে ইচ্ছাকৃত কোনো তথ্য, বিবরণ বা বিবৃতি দেন, যা সম্পর্কে তিনি জানতেন যে তা মিথ্যা, তা হলে তিনি অনধিক পাঁচ বছর মেয়াদের কারাদন্ড এবং তদসহ অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবেন, এবং উক্ত কারাদন্ড যে কোনো প্রকারের হতে পারে’। ড. ইউনূসের নির্দেশ ও তাঁর অনুমোদনে তাঁর কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা প্রতি বছর আইন লঙ্ঘন করে সম্পূর্ণ মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে আরজেএসসির কাছে তাদের বার্ষিক রিটার্ন দাখিল করে আসছে। তার এ অপরাধ সন্দেহাতীত ও দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এ বিষয়ে আদালত ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোম্পানি আইনের ৩৯৭ ধারার অধীন অপরাধ সংঘটনের কারণে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান কিংবা এ প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির বিরুদ্ধে এখনো আদালতে কোনো মামলা হয়নি। এ বিষয়ে মামলা হলে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, আদালতে অনায়াসেই ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোম্পানি আইনের ৩৯৭ ধারার অধীন অপরাধ দালিলিকভাবে প্রমাণিত হবে এবং ড. ইউনূসসহ অন্য অপরাধীরা পাঁচ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন।
অন্যদিকে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ধারা ২৮-এর অধীনে লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি অলাভজনক কোম্পানি। যদি এটি প্রকাশ করা হতো যে, গ্রামীণ টেলিকম তার লভ্যাংশ অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করেছে, তাহলে এটি কোম্পানি আইনের ধারা ২৮-এর অধীনে অলাভজনক কোম্পানি হিসেবে তার মর্যাদা হারাত এবং ধারা ২৮-এর অধীনে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস গ্রামীণ টেলিকমের লাইসেন্স বাতিল করত।
তবে এ বিধান এখনো গ্রামীণ টেলিকমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ গ্রামীণ টেলিকম তার লভ্যাংশ গ্রামীণ কল্যাণে হস্তান্তর করায় এটি কোম্পানি আইনের ধারা ২৮-এর অধীনে অলাভজনক কোম্পানির মর্যাদা হারিয়েছে এবং ধারা ২৮ অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকমের লাইসেন্স বাতিলযোগ্য। আইন অনুযায়ী এ লাইসেন্স বাতিলের কর্তৃত্ব রয়েছে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি)-এর।