সারা দেশের মানুষ শেখ হাসিনার সঙ্গে-বসুন্ধরা চেয়ারম্যান
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ পরিচালনায় যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাতে করে আগামী দিনেও তাকেই প্রয়োজন। শেখ হাসিনার বিকল্প শুধুই শেখ হাসিনা। আর এজন্য ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শনিবার (১৫ জুলাই) বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতিতে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা আজীবন আপনার সঙ্গে থাকবো।আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ব্যবসায়ীদের ম্যান্ডেট তো আমার মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পেয়ে গেছেন। এখানে যে কজন ব্যবসায়ী আছেন- তারা এ দেশের মেরুদণ্ড বলেন, চাবিকাঠি বলেন, তারা এ দেশ পরিচালনা করেন। এখন তো আপনার ম্যান্ডেট সম্পর্কে আমার মনে হয় না কারো কোনো সংশয় আছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য কী কী করেছেন তার সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, ওনার সম্বন্ধে যদি বলতে হয় তাহলে সাতদিনেও শেষ হবে না। যদিও ওনার সংস্পর্শে খুব কম যাই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যতদূর জানি, যদি সাত দিনও বলি তবুও বলার শেষ হবে না। উনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রথমেই কাজ করেছেন আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি নিয়ে। শহর সম্বন্ধে প্রথম দিকে তিনি কম চিন্তা করেছেন। গ্রামের অর্থনীতিকে উন্নত করার জন্য পাঁচ কোটি মানুষকে ভাতা দিয়েছেন। বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিকলাঙ্গ ভাতা- এ ধরনের বিভিন্ন ভাতা দিয়ে বছরে ৫৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছেন। এসব কিছুর সুফল ভোগ করছেন আমাদের দেশের গ্রামীণ গরীব জনসাধারণ। সবাই বলেছে শেখ হাসিনা বার বার। আমি বলবো, আমরা যেমন বঙ্গবন্ধুর কোনো বিকল্প পাইনি। আজকে শেখ হাসিনার বিকল্পও শুধু শেখ হাসিনা।
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা একটা অনুরোধ জানাবো সবাইকে, ব্যবসায়ীরা চায় সব সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা থাকি, শান্তিপূর্ণভাবে আমরা ব্যবসা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে প্রতিটা দিন…, এক সময় আমরা দেখেছি আগুন সন্ত্রাস। আবার শুরু হয়েছে হরতাল, অবরোধ। আমরা মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ- মিছিল করুক, মিটিং করুক; জনজীবনকে বিচ্ছিন্ন করে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে কোনো রাজনীতি হতে পারে না।
আমাদের সব রাজনীতির মূল লক্ষ্য অর্থনীতি। এ দেশের কোটি মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। গণতন্ত্র মানে এই না যে যা খুশি তাই করবো। মানুষের যান-মাল রক্ষা করতে হবে। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে। এক সময় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বলতো, এখন বঙ্গবন্ধু প্লাস শেখ হাসিনার বাংলাদেশ বলে। সি ইজ এ ব্র্যান্ড ওব দ্য ওয়ার্ল্ড। সারা দেশ আজকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে কী এমন জাদুর কাঠি আছে সেটা দিয়ে সারা বিশ্বকে তিনি আকর্ষণ করেন। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আজকে কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
আমার মনে হয় এ দেশের চার কোটি মানুষ ট্যাক্স দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমাদের ট্যাক্স শুধু ৩৫ লাখ মানুষ দেয়, যারা বিত্তবান। আমাদের ট্যাক্সে আরও জোর দেওয়া উচিত। সরকার, জনগণ, ব্যবসায়ী সবাইকে হাত মিলিয়ে চলতে হবে।
বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, আজ আরেকটা কথা আমার বলতে হয়। এখানে যারা আছেন তারা অনেকেই ওয়ান-ইলেভেনে জেলে গেছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন। আমার সৌভাগ্য আমি বাংলাদেশে ছিলাম না। তবু আমার কর্মচারীদের জেলে নিয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে আবার সেই ১-১১ এর সরকার। এই স্বপ্ন যদি কেউ দেখে, আমার মনে হয় আমাদের এই ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট, এটাকে কীভাবে প্রতিহত করতে হবে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বপ্ন দেখে আর কারো কোনো লাভ নাই।
ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আবার ততত্ত্বাবধায়কের নামে ১-১১ এর সরকার নিয়ে আসবো এবং যত বিত্তশালী, ১৫ বছর, ২০ বছর, ৫০ বছর ধরে যারা আজ সমাজে একটা প্রতিষ্ঠিত অবস্থানে গেছেন তাদের ওপর একটা জুলুম-অত্যাচার হবে। আমাদের প্রয়াত যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান জেলে ছিলেন, আমাদের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জেলে ছিলেন। এদেশের যত নামি দামি ব্যবসায়ী সবাইকে তারা জেলে নিয়েছিল। কী ছিল তাদের উদ্দেশ্য? আমি ধন্যবাদ জানাবো আমাদের সমস্ত ব্যবসায়ীকে যে আমি তখন লন্ডনে ছিলাম। আমিও সেখান থেকে বলেছিলাম সব বন্ধ করো, সমস্ত কিছু বন্ধ কর। বিভিন্নভাবে আমাদের ব্যবসায়ীদের কাছে ম্যাসেজও দিয়েছি, তোমরা মুভ করো। আমি জাতিসংঘে একাধিক চিঠি দিয়েছি- কী হচ্ছে বাংলাদেশে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আজকে এসব ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন, সেই অনুযায়ী যদি আমরা এগিয়ে যাই তাহলে এদেশে গরীব মানুষ বলে কোনো শব্দ থাকবে না। আমাদের ১৭ কোটি মানুষ একটা শক্তি। আজকে চীনের শক্তি তার মানুষ। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি মানুষ। আজকে ইউরোপ-আমেরিকা সবাই এখানে কেন, সবাই এখানে কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বলেছে। ওদের আন্ডার সেক্রেটারি বলে গেছেন যে আমরা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বাংলাদেশে এসেছি। তারা এমন কিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়নি যে তোমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার করো, তোমরা এই করো, সেই করো।
আমাদের নেত্রীও চান, আমরা সবাই চাই একটা সুন্দর নির্বাচন হোক। এই ব্যাপারে তো কারো কোনো অপোস নেই। আমি সরাসরি রাজনীতির মাঠে জড়িত নই, কিন্তু এই কথা মনে হলে আমার ইচ্ছা হয় আবার রাজনীতির মাঠে আমিও আসি। কারণ, আমরা এখানে ভুক্তভোগী। যারা ভুক্তভোগী তারা জানি। আমার নয় জন অফিসারকে নিয়ে গেছে। দুই মাস তাদেরকে জেলে আটকে রেখেছে এবং তাদেরকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ানো হয়েছে। এমনকি মার্ডার কেসেরও সাক্ষী দেওয়ানো হয়েছে জোর করে। কিছু কিছু লোককে ৮-৯ মাস জেলে রেখে দিয়েছে। এর যদি আমরা পুনরাবৃত্তি চাই, তাহলে আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে পারেন। আমি নিশ্চিত আপনারা আর কেউ চান না সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসুক।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এখানে একশভাগ মানুষ বর্তমান সরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ম্যান্ডেট দিয়েছেন। আমরা ব্যবসায়ীরা আছি। আজীবন আপনার সঙ্গে থাকবো, আমৃত্যু আপনার সঙ্গে থাকবো। কারণ, আপনার ব্যতিক্রম তো আপনি। আজ সারা দুনিয়ার চমক শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সারা দুনিয়াকে আকৃষ্ট করতে পারেন।
ইউরোপ-আমেরিাকা-ভারত এবং কূটনীতির দিকে তিনি আমাদের দেশকে একটা মিডল অবস্থানে রাখছে। আমাদের সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক। কারো সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক নেই। তার যে একটা অভিজ্ঞতা, ২০-২৫ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে অভিজ্ঞতা, এটা আরেক জনের ২০ বছর লাগবে। সুতরাং আমাদের সার্বক্ষণিক ওনার সেবা নিতে হবে। আমাদের টাইম টু টাইম ওনার সঙ্গে বসতে হবে। এতে করে কিছু সাজেশন তো দিতে পারবো।
তিনি বলেন, সব থেকে একটাই কথা, সারাদেশ, সারাদেশের মানুষ, ব্যবসায়ী আপনার সঙ্গে আছে। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। দ্বিমত থাকার কারো কোনো অবকাশ নেই। ইনশাল্লাহ আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে যেন কেউ এক ইঞ্চিও ব্যত্যয় না ঘটায় তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার ১৮ ঘণ্টা আপনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন জানিয়ে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, ৬ ঘণ্টা হয়তো বাবা-মা-ভাইবোন সবার কথা ভাবতে হয়। আপনাকে বিনিদ্র রজনীও কাটাতে হয়। আমরা যদি সেই সব চিন্তা করি তাহলে ঘর থেকে বের হতাম না। আপনার দুঃখ আমরা শেয়ার করতে পারবো না, কিন্তু আমরা সবাই, সারা বাংলাদেশের মানুষ বলি আপনি কীসের নেশায় বাংলাদেশে আছেন। আপনি বঙ্গবন্ধুর যে প্রতিশ্রুতি তা বাস্তবায়নের জন্য আপনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন।
সব শেষে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমি আশা করি, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বুঝবে, আগামী দিনে তার ফল পাবে। আজ পদ্মাসেতু, পদ্মাসেতুর ওই সময় এয়ারপোর্টটা হওয়ার কথা কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়ার কারণে হলো না। আজকে পদ্মাসেতুর সুবিধাভোগী কারা আজকে মংলা থেকে তরকারি (সবজি) নিয়ে বিক্রি করে যাচ্ছে। আগে যে তরকারি বিক্রি করতে পারতো না আজকে সেই তরকারি অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে পারছে। এই সেতু নিয়ে কত রকমের ষড়যন্ত্র। তারপরেও আমাদের নেত্রী সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। আল্লাহ ওনাকে দীর্ঘজীবী করুক। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ওনার বিকল্প শুধু উনি। আপনারা সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন।
ব্যবসায়ী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দেশের ব্যবসায়ী নেতা, বিভিন্ন চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।