চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : ডুবছে চট্টগ্রাম ঘুমাচ্ছে সিডিএ! অবস্থাটা যেন এরকম। এরমধ্যে বৃষ্ঠি আরো কয়েক দিন চলবে…! এমনই তথ্য দিলেন আবহাওয়া অফিস।পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, নিম্নচাপের কারণে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত আরও দুয়েক দিন থাকবে। এ অবস্থায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩০৬ দশমিক ১ মিলিমিটার। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর এবং নদীবন্দরে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।
এ অবস্থায় বৃষ্ঠিতে ডুবে আছে চট্টগ্রাম মহানগরী। তলিয়ে গেছে দোকান, গুদাম, অফিস ও বাসা। চরমে পৌঁছেছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। প্রায় দুই দশক ধরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ওইসব প্রকল্পে গত ছয় বছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।
এত টাকা খরচের পরও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা কমেনি। দুর্ভোগের শিকার বাসিন্দারা। চসিক মেয়র জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগের জন্য দায়ী করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)। সিডিএ অবশ্য সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। সংস্থাটি যেন কানে তুলা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। রবিবার অফিস-আদালত খোলা থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
চসিক মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ে কী বলব? সিডিএকে বারবার বলার পরও ওরা কোনো সমন্বয় করছে না। যেই এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করা হবে, সেখানকার কাউন্সিলরের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য বারবার বলেছি। কিন্তু তারা কোনোভাবেই কর্ণপাত করছে না। তাই বৃষ্টি হলেই নগরীতে পানি উঠছে। নগরবাসী এই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে আছেন। এমনকি আমি নিজে এবং আমার পুরো পরিবারও পানিবন্দি।
মেয়র আরও বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ যে প্রকল্পের কাজ করছে, সেটার আওতাধীন নগরীর বিভিন্ন খাল থেকে সাড়ে নয় লাখ কিউবিক মিটার মাটি উত্তোলনের কথা ছিল। কিন্তু তারা এর চার ভাগের এক ভাগও মাটি তোলেনি। এমনকি রাস্তা করার নামে খালের প্রস্থও কমিয়ে ফেলেছে। মাটি না তোলায় খালের গভীরতা কমেছে। ফলে পানি চলাচল স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না। এভাবে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তা ছাড়া যেসব স্লুইচগেট করা হয়েছে সেগুলো খুব ছোট। খালের মুখ যেখানে একশ থেকে দেড়শ ফুটের বেশি সেখানে ২০ থেকে ২৫ ফুট স্লুইচগেটের মুখ দিয়ে কী হবে? এসব বিষয় সিডিএর আরও আগে চিন্তা করা উচিত ছিল। সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি হচ্ছে। তাই নগরবাসী কষ্ট পাচ্ছে, যা কাম্য নয়। বিষয়টি আমি মন্ত্রণালয়ে জানাব।
চসিক মেয়রের অভিযোগে নীরব সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনই মনে করছেন না তিনি। এমনকি চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস এবং জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক আহমেদ মাঈনুদ্দিনও মুখ বন্ধ রেখেছেন। দফায় দফায় ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
গত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত চার দিন টানা বর্ষণে পানির নিচে তলিয়ে থাকা চট্টগ্রাম মহানগরী এখন যেন বন্যাবিধ্বস্ত জনপদ। রবিবার (৬ আগস্ট) ও কোমর পানি ছিল নিম্নাঞ্চলে। এই দিনেই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সর্বোচ্চ ৩০৬ দশমিক ১ মিলিমিটার।
টানা বর্ষণে তলিয়ে আছে বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, ২ নম্বর গেট, পশ্চিম খুলশী, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, জিইসি, প্রবর্তক মোড়, ফরিদারপাড়া, চকবাজার, কাপাসগোলা, ষোলশহর, মোগলটুলি, ফিরিঙ্গী বাজারের একাংশ, আগ্রাবাদের সিডিএ ও শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, ট্রাঙ্ক রোড, বাকলিয়া ডিসি রোড, তালতলা, চান্দগাঁও, খতিবের হাট, সিঅ্যান্ডবি কলোনি, পাইকারি ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চাকতাই, খাতুনগঞ্জ, রিয়াজুদ্দিন বাজারের তিনপুলের মাথা, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, ঈদগাঁও, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর ও হালিশহর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা।
মুরাদপুরের রহমান মাসুদ বলেন, চার দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। মুরাদপুরে তো কোমর সমান পানি উঠেছে এবার। এতে পথচারী ও যান চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা। নালা সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। তাই পানি ঠিকমতো চলাচল না করায় মেইন রোডসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সিটি করপোরেশন ও সিডিএ কী করছে জানি না? কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। যুগ যুগ ধরে এই জলাবদ্ধতার সমস্যা যাচ্ছেই না।
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা শফি রহমান বলেন, অতিবর্ষণে অলিগলি, বাড়িঘর ও দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। খাল-নালা অপরিষ্কার থাকায় বৃষ্টির পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। তাই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বৃষ্টি হলেই পানি উঠছে। কোনো সংস্থাই এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ফলপ্রসূ কাজ করছে না।