রিহ্যাবের বিষফোঁড়া লিয়াকত-নামা
তদন্তে মিলেছে নানা লুটপাট রিহ্যাব বিরোধীতা হাউব্রিড রাজনীতি সহ অপতৎপরতা
বিশেষ প্রতিনিধি : অবশেষে রিহ্যাবের বিষফোঁড়া ’লিয়াকত-নামা’র তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে। তদন্তে মিলেছে নানা লুটপাট হাউব্রিড রাজনীতি অপতৎপরতা ফিরিস্তি। রিহ্যাব বলেছে, একটু অপেক্ষা করেন সব দেখতে পাবেন।রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সাবেক সহ সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন এর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে রিহ্যাব এর তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
২০১২-২০২০ সাল প্রায় আট বছর রিহ্যাবে এর সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন লিয়াকত আলী ভূইয়া। এই দীর্ঘ সময়ে তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে রিহ্যাব এর (২০১৮-২০২০) পরিচালনা পর্ষদ এর ১৩ তম বোর্ড সভায় আলোচনা করা হলে, তিনি তার অপরাধ সমূহ দালিলিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে ২০২০ সালের আগস্টে মাসে রিহ্যাব এর ১৪ তম বোর্ড সভায় নিজ থেকে পদত্যাগ করেন রিহ্যাব এর এই সাবেক নেতা।
তার বিরুদ্ধে রিহ্যাব থেকে বিভিন্ন কার্ক্রমের নামে বিধিবহির্ভূতভাবে টাকা-পয়সা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠে। দীর্ঘ দিন ধরে বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রিহ্যাব এর পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয় ।
অভিযোগে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন দল থেকে অসংখ্য লোকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনে। সুযোগ সন্ধানি লিয়াকত আলী ভুইয়াও এই সুযোগ নেন। এই সব হাইব্রিড নেতারা বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে কৌশলে নৈরাজ্য-বিভেদ তৈরি করে সরকারকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। রিহ্যাব এর সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া তাদের মধ্যে অন্যতম।
শুরুতে এফবিসিসিআই এর বিএনপিপন্থী পরিচালক ব্যবসায়ী নেতা নারায়নগঞ্জ বিএনপির এক সময়ের কিং মেকার সাবেক বিএনপি এমপি মোহাম্মদ আলীর ছত্রছায়ায় এফবিসিসিআই এ রাজনীতি শুরু করেন। এফবিসিসিআই এ ট্রেড রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পেরে বিএনপি পন্থী রিহ্যাব এর সাবেক সভাপতি ক্যাপিটাল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর এমডি মোকাররম হোসেন খান এবং তার সাবেক স্ত্রী বিএনপির সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জেবা আমিনা খান এর ছত্রছায়ায় ও জামায়াতের সহযোগীতায় রিহ্যাব এ রাজনীতি শুরু করেন লিয়াকত আলী ভূঁইয়া। নিজের স্বার্থ উদ্ধারে কখনও বিএনপি আবার কখনও আওয়ামী লীগের লোক হয়ে যান লিয়াকত আলী ভূঁইয়া। স্বার্থের প্রয়োজনে একেক সময় একেক জনের ছায়া তলে আশ্রয় নেন এমন অভিযোগ লিয়াকত আলী ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে।
তার আপন বোন মগবাজারের বিএনপিপন্থী সাবেক কমিশনার/ কাউন্সিলর শর্মিলা ইমাম। লিয়াকত আলী ভূইয়া রিহ্যাব এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী পদে আসীন হয়ে নিজ স্বার্থে নানাবিধ অপকর্ম চালিয়ে গিয়েছেন। তদন্তে উঠে এসেছে, কোইফিসিয়েন্ট ডিজাইন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিঃ, এর রোড-৯/এ, বাড়ি -৫৫ ধানমন্ডিস্থ শামীম গার্ডেন নামে প্রকল্পটি নাম মাত্র মূল্যে বুকিং দিয়ে পরবর্তীতে নানাবিধ জটিলতা তৈরি করে ডেভেলপারকে উক্ত প্রকল্প হতে উৎখাত করে সেই প্রকল্পটি হাতিয়ে নেন এবং সেখানে নিজের বাড়ি তৈরি করেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময় রিহ্যাবে ডিরেক্টর হওয়ার জন্য লিয়াকত আলী ভূইয়া অনেকের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজার এলাকায় ‘অত্যাধুনিক ও পরিকল্পিত অবকাশ যাপন কেন্দ্র’ শীর্ষক কাজের জন্য সরকারি ভাবে কোন প্রকার চিঠি, আদেশ বা প্রঙ্গাপন পাওয়া যায়নি। অথচ, উল্লেখিত কাজের জন্য রিহ্যাব থেকে লিয়াকত আলী ভূইয়া নিজে সরাসরি মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করেন। কোথায়, কাকে ও কিভাবে সেই টাকা খরচ করা হয়েছে, তা রিহ্যাব হিসাব বিভাগে লিয়াকত আলী ভূইয়া প্রদান করেন নাই ।
এছাড়া জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে মিরপুরের কালশি এলাকায় প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ৬ একর জমিতে রিহ্যাবের সাধারণ সদস্যদের যৌথভাবে ডেভেলপমেন্টের বিষয়ে ভুল বুঝিয়ে রিহ্যাবকে সম্পৃক্ত করেন এবং নানা ভাবে রিহ্যাব থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। উক্ত প্রকল্পে রিহ্যাবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই প্রকল্পে রিহ্যাব কার্যনির্বাহী পরিষদের কেউ অংশ নিতে পারবেন না। এতে রিহ্যাবের সাধারণ সদস্যদের যৌথভাবে সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু টেন্ডার চলাকালে লিয়াকত আলী ভূইয়ার অপতৎপরায় রিহ্যাবের জনৈক কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যকে কাজটি পাইয়ে দেন এবং লিয়াকত আলী ভূইয়া নিজে লাভবান হন।
এছাড়া তিনি রিহ্যাব প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান থাকার সময় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের নামে নিজ নামে স্বাক্ষর করে মোটা অংকের টাকা আত্মসাত করেছেন। তিনি যে সংগঠনেই যান সেখানেই বিভক্তি তৈরি করার ষড়যন্ত্র করেন। মিথ্যা জিডি, মিথ্যা মামলাসহ মানুষকে হয়রানি করা তার নেশা এমন অভিযোগ অনেকের। এক সময় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিলস ও পাওয়ার লুম এসোসিয়েশন কাজ করেছেন। সদস্যদের চাপে সেখান থেকেও বিতাড়িত হন । রিহ্যাব এর দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় ৮ বছর। বিভিন্ন কার্যক্রমের নামে লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বিধিবহির্ভূতভাবে রিহ্যাব থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা সরিয়ে নেন বলে অভিযোগ এসেছে। এছাড়া অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ এসেছে সেগুলোর পর্যালোচনা শেষ পর্যায়ে খুব শীঘ্রই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে রিহ্যাব সুত্রে জানা গেছে।