লাবণ্য চৌধুরী : পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক মহিয়সী নারীর ভালোবাসা, ত্যাগ ও মহত্ত্ব’র উদাহরন রয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে স্বাধীনতার রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা তাদেরই একজন মহিয়সী নারী। বঙ্গবন্ধু, বাঙালিও বাংলাদেশ যেমন একই সূত্রে গাঁথা, তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য নাম। এরকম মহীয়সী নারী পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘সে (রেণু) তো নীরবে সকল কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু কিছু বলে না। কিছু বলে না বা বলতে চায় না, সেই জন্য আমার আরও বেশি ব্যথা লাগে।’ প্রিয়তমার জন্য কতটা ভালোবাসা হলে হৃদয়ে এমন রক্ত ক্ষরণ হয় তা অনুমান করা অসম্ভব। জাতির পিতার সেই ‘রেণু’ হলেন বাংলার মহীয়সী নারী বেগম শেখ ফজিল্লাতুন্নেছা মুজিব। যিনি প্রজ্ঞা, ধৈর্য, সাহসিকতা, মায়া মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে পালন করেছেন নারী জীবনের সকল দায়িত্ব। বঙ্গমাতার এই প্রতিচ্ছবি
আমাদের জননেত্রী মাদার অব হিউম্যানিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল চার বিশিষ্ট নারী ও জাতীয় নারী ফুটবল দলকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২৩ প্রদানকালে বক্তাদের কন্ঠে বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের এসব তথ্য উঠে আসে।
মঙ্গলবার ৮ আগস্ট সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এই পদক প্রদান করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের আজ (৮ আগস্ট) ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে এই পদক বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বঙ্গমাতার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর সর্বোচ্চ পাঁচজন নারীকে এই পদক দেওয়া হয়। দেশের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় নারী ফুটবল দল এবং চার বিশিষ্ট নারীকে এ বছরের পদকের জন্য নির্বাচিত করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সাফ ফুটবল ২০২২-এ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় জাতীয় নারী ফুটবল দল এবারের এই পদক লাভ করে। এ ছাড়া যে চার বিশিষ্ট নারী এবারের পদক পেয়েছেন তাঁরা হলেন- রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (মরণোত্তর); শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় নাসিমা জামান ববি ও অনিমা মুক্তি গোমেজ এবং গবেষণায় ডা. সেঁজুতি সাহা (মলিকুলার বায়োলজিস্ট)।অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বেগম চেমন আরা তৈয়ব।পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্য প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আর্থিক অনুদান ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। সারা দেশের ৪ হাজার ৫০০ দুস্থ নারীর মধ্যে সেলাই মেশিন এবং ৩ হাজার দুস্থ নারীর প্রত্যেককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়।