আরসার অবৈধ সাম্রাজ্যে-৬ দেশ থেকে টাকা আসে
বিশেষ প্রতিনিধি : মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) এর অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুসকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরসা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র মজুত, বেচাবিক্রি, অর্থ লেনদেনের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে ইউনুস।
র্যাব বলছে, প্রতি মাসে সৌদি আরব, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার থেকে আরসার জন্য টাকা পাঠানো হয়। প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে অস্ত্র কেনা ও দলের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা বিকেল সাড়ে ৫ টায় কক্সবাজার র্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরীর পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের তাজনিমার খোলা এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় গ্রেফতার করা হয় উখিয়ার ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি/১৩ ব্লকের মৃত হাবিবুল্লাহর ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুসকে। অভিযানে ইউনুসের কাছ থেকে ১ টি বিদেশি রিভলবার, ৬ রাউন্ড তাজা কার্তুজ এবং ১ টি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আরসার অর্থ সম্পাদক এই ইউনুছের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ৫ টি মামলার রয়েছে। এসব মামলা হলো, ১৫ অক্টোবর ২০২২ হেডমাঝি আনোয়ার কুপিয়ে হত্যা, ৩ মার্চ ২০২৩ রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে গুলি করে হত্যা, ১৩ মার্চ ২০২৩ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগনোর নির্দেশদাতা, ১১ এপ্রিল ২০২৩ এবং ৯ জুন ২০২৩ এপিবিএনের আরসা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকালে তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা।
এছাড়াও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ২২ অক্টোবর ২০২১ আরসার সস্ত্রাসীরা ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবাসিক মাদ্রাসায় অবস্থানরত ৬ জনকে হত্যা, ৩ মার্চ ২০২৩ ইসলামী মাহাযের নেতা রফিক এবং ১৮ মার্চ ২০২৩ ইসলামী মাহাযের নেতা হাফেজ মাহবুবকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা র্যাবকে স্বীকার করেছে ইউনুস।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরীর পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস মিয়ানমারে থাকাবস্থায় মংডু টাউনশীপের মেরুল্লা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতো এবং শিক্ষকতার আড়ালে আরসার হয়ে কাজ করতো। ২০১৬ সালে সে ‘আরসা’ সদস্য মৌলভী আরিফুল্লাহ এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘আরসা’ এ যোগ দেয়।
সে আরসার আমীর আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী, ওস্তাদ খালেদ, সমউদ্দিন এর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলেম-ওলামা, হেডমাঝি, সাবমাঝি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিটিং করে আরসা সংগঠনে যোগদানের জন্য উৎসাহ প্রদান করতো। এছাড়াও সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আরসার অর্থ সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।
আরসার অর্থের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা ইউনুস জানায়, তার কাছে প্রতিমাসে সৌদি আরব থেকে আবুল বশর ১ লাখ টাকা, মৌলভী ইসমাইল ১ লাখ টাকা, পারভেজ ১৫ হাজার টাকা, আমেরিকা থেকে জহুর আলম ১ লাখ টাকা, মালয়েশিয়া থেকে হারুন ১ লাখ টাকা, থাইল্যান্ড থেকে হারুন ৬৫ হাজার টাকা এবং সৌদি আরব থেকে মো. ইসলাম প্রতিবছর ১ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠায়।
এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া থেকে অজ্ঞাত রোহিঙ্গা টাকা পাঠায় বলে জানা যায়। প্রতিমাসে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০-১৫ লাখ টাকা আরসার ক্যাম্প জিম্মাদারদের কাছে আসে। প্রাপ্ত অর্থসমূহ দিয়ে অস্ত্র কেনা ও দলের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা/বেতন দিয়ে থাকে। বর্তমানে মাওলা ইউনুসের কাছে তার বিকাশ একাউন্ট আনুমানিক ৩৩ থেকে ৩৭ হাজার টাকা হয়েছে বলে জানা যায়।
মাওলানা ইউনুস আরসার সংগঠনের জন্য গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৩ মাসে ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৬৯৫ টাকা পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ইউনুস জানায়, আরসার গ্রুপে ২০০-২৫০ জন সদস্য রয়েছে। আরসা সদস্যরা গত ২০১৬ সালে মিয়ানমারে তারাশুখ থানায় আক্রমণ করে মোট ৭০টি একে-৪৭ অস্ত্র লুট করে এবং এটি তাদের অস্ত্র সরবরাহের মূল উৎস বলে জানা যায়।
আরসার অন্য সদস্য সমিউদ্দিন (ক্যাম্প-৬) এবং হোসেন (ক্যাম্প-১৭) অস্ত্র ও অ্যামোনিশনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানে। ছোট ছোট অস্ত্র ও অ্যামোনিশন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করে থাকে। আরসা সদস্যরা অস্ত্রগুলো ক্যাম্পে নিয়ে আসার পর সমিউদ্দিন ও ইউনুসের কাছে জমা থাকে এবং পরবর্তীতে তাদের অধীনস্থ সদস্যদের অস্ত্র বণ্টন করে থাকে।এব্যাপারে মামলা করে ইউনুসকে রাতে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।