অপরাধ

আজরাইলের মত পিটিয়েছে এডিসি হারুন

বুটের লাথি পিটুনিতে হাসপাতালে দুই ছাত্রলীগ নেতা

বিশেষ প্রতিনিধি :  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা আনওয়ার হোসেন নাইম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, থানা হচ্ছে মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল আর সেই থানায় নিয়ে গিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশে মারধর করা হয়েছে। আমি তাদেরকে আমার পরিচয় দিয়েছি কিন্তু তারপরও আমাকে সাক্ষাৎ আজরাইলের মত  মেরেছে। আমি তার সুষ্ঠু বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার মানে এই জোন থেকে ওই জোনে বদলি নয়। তাকে চাকরিচ্যুত করতে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ করছি। নাইমের মা বলেন, আমার বাজানকে তো মাইরা ফেলানোর জন্যই তো সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। আজরাইলের মত ১৫-২০ জন আমার ছেলেকে কেন এইভাবে মারলো আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটার বিচার চাই।

থানা হেফাজতে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের ঘটনায় প্রত্যাহার হওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশিদকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে।রোববার প্রথমে তাকে ডিএমপির রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে সংযুক্ত করা হয় এবং ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।পরে বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, হারুন-অর-রশীদকে এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার করা হয়েছে।প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, তিনি বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্ব অর্পণ করবেন। তা না হলে ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বা স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য করা হবে।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা (ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর) যে করেছে, পুলিশ হোক, যেই হোক, যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি হবে। কেন করেছে, কী করেছে, এটা আমরা তার কাছে জিজ্ঞাসা করি, তার এই ভুল কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, এডিসি হারুন শনিবার রাতে আরেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। নারী কর্মকর্তার স্বামীও একজন সরকারি কর্মকর্তা। এর আগে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন। ওই সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সেখানে যোগ দেন এ দুই নেতাও।

সূত্রটি জানায়, এডিসি হারুন পুলিশ ফোর্স এনে দুই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেন। এরপর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লে ওই দুইজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মারধরে গুরুতর আহত হন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাইম। বর্তমানে তিনি একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

আনোয়ার হোসেন নাঈম বলেন, ‘এই ঘটনার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আমাকে দেখতে এসেছেন। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন উনারা এটা নিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পর্যন্ত কথা বলবেন। রমনা জনের ডিসি মহোদয় এসেছিলেন। উনিও বলেছেন, ডিএমপি কমিশনার স্যার এবং আইজি স্যারের সাথে উনি কথা বলবেন। কিন্তু আমি এখানে ভরসা পাচ্ছি না।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদের পিটুনিতে আহত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসাপাতালে ভর্তি আছেন ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন নাঈম। রোববার বিকেলে একটি গণমাধ্যমকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই সেই ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। কীভাবে তাকে পেটানো হয়েছে, কে ছিলেন এ ঘটনার মূলে- এসব জানিয়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতা।

শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে শনিবার রাতে তিনি ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক মুনিমকে নির্যাতন করা হয়। এরই মধ্যে এডিসি হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে পিওএমে সংযুক্ত করা হয়েছে। আনোয়ার হোসেন নাঈম বলেন, ‘শনিবার রাতে আমি এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক মুনিম (শরীফ আহমেদ মুনিম) শাহবাগের বারডেম হাসপাতাল হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে আসছিলাম। এরপর আমরা বারডেম হাসপাতালের সামনে রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুন ভাইকে দেখতে পাই। আমরা নামতে নামতে দেখি, ভাই লিফটে করে কার্ডিওলজি বিভাগের সামনে চলে যান।

‘৫-৭ মিনিট পরে গিয়ে আমরা দেখি, ভাই এবং এডিসি হারুনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। এরপর আমি এবং মুনিম ঘটনার মীমাংসা করার চেষ্টা করি। পরে সেখানে সেটা মীমাংসা হয়। এর কিছুক্ষণ পর এডিসি হারুন ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী নামক পুলিশকে ফোন দিয়ে সেখানে নিয়ে আসেন। তারা আজিজুল হক মামুন ভাই, আমি এবং মুনিমের ওপর চড়াও হয়। এরপর সেখান থেকে মারতে মারতে মুনিমকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার ৫-৭ মিনিট পর আমি শাহবাগ থানায় যাই। আমি থানায় ঢুকলে এডিসি হারুন উপস্থিত পুলিশদেরকে দেখিয়ে বলে, এ আমাকে মারছে। একে তোরা মার। এরপর থানার ওসির রুমে এডিসি হারুনসহ ১০-১৫ জন এসআই এবং কনস্টেবল আমার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন করে। তারা বুট জুতা দিয়ে লাথি, কিল, ঘুষি যে যেভাবে পারছে আমাকে মেরে আহত করেছে। সারা শরীর আমার এখন ব্যথা। আমার এই পর্যন্তই মনে পড়ছে। এরপরের ঘটনা আমার আর মনে নেই।’

আনোয়ার হোসেন নাঈম বলেন, এই ঘটনার পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আমাকে দেখতে এসেছেন। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন উনারা এটা নিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পর্যন্ত কথা বলবেন। রমনা জনের ডিসি মহোদয় এসেছিলেন। উনিও বলেছেন, ডিএমপি কমিশনার স্যার এবং আইজি স্যারের সাথে উনি কথা বলবেন। কিন্তু আমি এখানে ভরসা পাচ্ছি না।আক্ষেপ করে নাইম বলেন, ‘ছাত্রলীগ এতিমের সংগঠন। আর এই সংগঠনের একজন নেতার সঙ্গে হওয়া এই ঘটনার বিচার করতে পারবেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাচ্ছি।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button