ভোটে নানা শংকা আছে-দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ-
রংপুরে জিএম কাদের
স্টাফ রিপোর্টার রংপুর : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, সরকার এক ধরনের নির্বাচন করতে চাচ্ছেন, সরকারের বিপক্ষ আরেক ধরনের নির্বাচন করতে চাইছেন। কোন পদ্ধতিতে আসলে নির্বাচন হবে, সেটাই আমরা জানি না। নির্বাচন ভোট সঠিক পথে সঠিক সময়ে হবে কি না, এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক কানাঘুষা আছে, সন্দেহ আছে, আশঙ্কা আছে।শুক্রবার বেলা পৌনে ১টায় রংপুর নগরীর দর্শনাস্থ পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমার মনে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যবস্থা আমি (বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালীন) নিয়েছিলাম। যখন দাম বেড়েছে, তখন জনগণ জানত যে বেড়েছে। যখন কমেছে বা কমা উচিত ছিল তখনো তা জনগণ জেনেছে। তখন মানুষের আস্থা ছিল। এখন নানা অজুহাতে দাম একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, দাম যেটা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, আমি মনে করি এটা কখনোই সফল হওয়া সম্ভব নয়। দাম বেঁধে দেওয়ার একটা নিয়ম ছিল। কতটুকু দাম যুক্তিসংগত হতে পারে হিসাব-নিকাশ করে সেটা জানানো হয়। যুক্তিসংগত দামের বাইরে কেউ নিলে একটা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। সহনীয় সেটা হবে, যা যুক্তিসংগত দাম। সেটার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়, যথেষ্ট ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়, ডাটা নিতে হয়, এমনকি চাহিদা ও জোগানের ওপর তা নির্ধারণ হয়। যদি সেটা ঠিক না থাকে তাহলে আমি যতই চাপাচাপি করি এটা স্বাভাবিকভাবে ঠিক হবে না।
জিএম কাদের বলেন, সিন্ডিকেট সরকারকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে বলে আমি মনে করি না। যেখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার কথা সেসব জায়গায় তারা সঠিকভাবে কিছু করছে-এ ধরনের কোনো প্রমাণ আমরা পাই না। সে কারণে দ্রব্যমূল্য সরকার যাই বেঁধে দিয়ে থাকুক, বাজারে এর চেয়ে দাম বেশি। কৃষকরা অনেক সময় কম দামে পণ্য দিচ্ছে। কিন্তু শহরে তা অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এবং সেটা করা হচ্ছে অযৌক্তিকভাবে। তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো বন্দোবস্ত বা পদক্ষেপ জনগণের চোখে পড়ছে না। দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। এটা একটা দুর্বিষহ অবস্থা।
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত চিন্তা করছি ৩০০ আসনে নির্বাচন করব। ভবিষ্যতে কী করব, ভবিষ্যতের অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে। যেহেতু এখনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক অস্থিতিশীল, অনিশ্চিত, অস্বচ্ছ। সবকিছু জেনে বিবেচনায় নিতে হবে। সবাই আমার মনে হয় এই অনিশ্চয়তার দিকে তাকিয়ে আছে। সরকার এক ধরনের নির্বাচন করতে চাচ্ছেন, সরকারের বিপক্ষ আরেক ধরনের নির্বাচন করতে চাইছেন।
কোন পদ্ধতিতে আসলে নির্বাচন হবে, সেটাই আমরা জানি না। নির্বাচন সঠিক পথে সঠিক সময়ে হবে কি না, এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক কানাঘুষা আছে, সন্দেহ আছে, আশঙ্কা আছে। সব মিলিয়ে আমরা এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না সঠিকভাবে। শেষ পর্যন্ত কে লড়বেন আর কে থাকবেন সেটাও অনিশ্চিত। রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরিফা কাদের এমপি, অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান আদেলুর রহমান এমপি, রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াসির, জেলার সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাফিউল ইসলাম সাফি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য লোকমান হোসেন, জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল মামুন প্রমুখ।
এর আগে সকালে ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুরে আসেন জাপা চেয়ারম্যান। সেখানে তাকে জাতীয় পার্টির রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছায় অভ্যর্থনা জানান। তিনি দুদিনের সফরে রংপুর ও লালমনিরহাটে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।