জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল তিতাস গ্যাস এমডি’র

দুর্নীতির ষোল কলা-ফের নিয়োগ হারুনুর রশিদ মোল্লাহকে

শফিক রহমান : প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করে তিতাস গ্যাস এর এমডি প্রকৌ. মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ গাজীপুরের রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ”সিলভার নিট কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড” কে অবৈধভাবে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে সংযোগ পাইয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ করা হয়েছে, ”সিলভার নিট কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড” গ্যাস–সংযোগের জন্য প্রতিষ্ঠানটির আবেদনপত্রের ওপরের দিকের কোনায় তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুনুর রশীদ মোল্লাহ মন্তব্য করেছেন, ”মন্ত্রী মহোদয়ের অফিস হতে প্রেরিত, আলাপ করবেন।” এই সেক্টরের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং এর কাজকর্ম দেখভাল করেন একজন প্রতিমন্ত্রী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোনো ধরনের অনুমোদন বা অনুমতি বা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তার নির্দেশনা ছাড়া রীতিমত প্রধানমন্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে সংযোগটি পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ কাজ করেছেন বলে লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রেরিত হয়েছে।অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে করা আবেদনপত্রে তিতাসের এমডি মন্তব্য করেন এক বছর পর গত নভেম্বরে। তিতাসের এমডি আবেদনপত্রটি পাঠিয়েছিলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (গাজীপুর) বরাবর। প্রতিষ্ঠানটি পরে গ্যাস–সংযোগ পেয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

এ ঘটনা (মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে গ্যাস–সংযোগের সুপারিশ) জানিয়ে গত ২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন জনৈক আবদুল লতিফ। তিনি তিতাসের এমডির বিরুদ্ধে আরও কিছু গুরুতর অভিযোগ করেন যা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন দফ্তরে রয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর প্রতিমন্ত্রী হলেন নসরুল হামিদ। এ সম্পর্কে টিআইবি নির্বাহি পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদন্ত করতে বলা হয়ে থাকে, এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তো আর কিছু হতে পারে না। তিতাস নিয়ে প্রায়ই নানা ধরনের দুর্নীতির কথা শোনা যায়। একটা নিরপেক্ষ তদন্ত করে পুরো চিত্র তুলে আনা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

যাহোক, ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে গত ২৯ আগস্ট একটি চিঠি পাঠায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) নাম ব্যবহার করে উৎকোচ গ্রহণ করতঃ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তিতাস গ্যাসের সংযোগ দেওয়াসহ নানাবিধ অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে। ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানোর কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে। এদিকে এ সম্পর্কে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে জ্বালানি বিভাগ। তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পেট্রোবাংলা।

জানা গেছে, গাজীপুরে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য সিলভার নিট কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান গ্যাস–সংযোগের জন্য আবেদন করে। প্রতিষ্ঠানটির আবেদনপত্রের ওপরের দিকের কোনায় তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুনুর রশীদ মোল্লাহ মন্তব্য করেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের অফিস হতে প্রেরিত, আলাপ করবেন।’ পরে ২০২১ সালের নভেম্বরে করা আবেদনপত্রে তিতাসের এমডি মন্তব্য করেন এক বছর পর গত নভেম্বরে। তিতাসের এমডি আবেদনপত্রটি পাঠিয়েছিলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (গাজীপুর) বরাবর। প্রতিষ্ঠানটি পরে গ্যাস–সংযোগ পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলভার নিটের কারখানাটি সরকার নির্ধারিত শিল্পাঞ্চল বা কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চলেও অবস্থিত নয়। অথচ এ প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস–সংযোগ দেওয়ার প্রস্তাব তিতাসের পর্ষদে তুলে অনুমোদন করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট জারি করা জ্বালানি বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘পরিকল্পিত শিল্প অঞ্চল ব্যতীত কোনো স্থানে শিল্প শ্রেণিতে গ্যাস–সংযোগ প্রদানের বিষয়টি স্থগিত থাকবে। এক্ষেত্রে তিতাস গ্যাসের এমডি যে দুর্নীতি করেছেন তা কিছুটা হলেও স্পষ্ট ধরা পড়ে।

জানা গেছে, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চুক্তিভিত্তিক) হারুনুর রশীদ মোল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এক মাসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। পেট্রোবাংলার অধীনে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানি হচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।

জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনার পর গতকাল রোববার পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ জারি করেছে পেট্রোবাংলা। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সংস্থাটির পরিচালক (প্রশাসন) মো. আলতাফ হোসেনকে। তদন্ত কমিটির অন্য চার সদস্যের মধ্যে তিনজন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা আর একজন জ্বালানি বিভাগের। তদন্ত করে ২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।

জানা গেছে, জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের এমডি থাকা অবস্থায় পিআরএল সমর্পণের শর্তে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিতাসের এমডি হিসেবে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান হারুনুর রশীদ মোল্লাহ। ২০২২ সালে তিনি চুক্তিতে আরও এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এখন নতুন করে তাঁকে আরও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক এমডি নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন করেছে জ্বালানি বিভাগ।

এদিকে গত ২২ আগস্ট পাঠানো পেট্রোবাংলার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট জ্বালানি বিভাগের এক অফিস আদেশে বলা হয়, তিতাসের এমডি পদে হারুনুর রশীদ মোল্লাহকে ২৯ সেপ্টেম্বর বা যোগদানের সময় থেকে এক বছরের জন্য পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button