রাঘব বোয়ালরা আতংকে-পানামা প্যারাডাইস দুর্নীতি তদন্ত শুরু
![](https://dainiksottokothaprotidin.com/wp-content/uploads/2023/09/panama-papers.jpg)
আসমা খন্দকার : পানামা প্যারাডাইস দুর্নীতি তদন্ত শুরু হয়েছে অবশেষে। পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা ৬৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে দাখিল করার পর থেকে রাঘব বোয়ালরা আতংকে রয়েছে।
অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে হাইকোর্টকে এ কথা জানান দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত নথি সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে ছয়টি যৌথ অনুসন্ধান টিম কাজ করছে।
গত ২৬ জানুয়ারি পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা ৬৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে দাখিল করা হয়। এর মধ্যে পানামা পেপারসে ৪৩ ও প্যারাডাইস পেপারসে ২৬ জনের নাম রয়েছে। গত বছর ৪৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছিল দুদক। পরে ওই তালিকার ওপর শুনানি করে, গত ৬ ডিসেম্বর, পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এর আগে সিআইডির আর্থিক অপরাধ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ূন কবীর দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা পেয়ে ছয়টি টিম গঠন করে অনুসন্ধান শুরু করেছি।দুদক থেকে কিছু নথিপত্র পেয়েছি। অনুসন্ধান শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মামলা বা অন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সিআইডি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে একটি চিঠি পাওয়ার পর সিআইডি ছয়টি তদন্ত দল গঠন করেছে। প্রতিটি তদন্ত টিমে দুদকের একজন করে মনোনীত কর্মকর্তা যুক্ত থাকার কথা রয়েছে।
দলগুলোর নেতৃত্ব দেবেন আর্থিক অপরাধ শাখার সহকারী পুলিশ সুপার আল আমিন হোসেন ও শেখ সুরাইয়া উর্মি, গুরুতর অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল আহসান, সাইবার অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবু সাঈদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন।
দুদক সূত্র জানায়, যৌথ তদন্তে থাকা দুদকের তিনজন কর্মকর্তা হলেন সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন, উপসহকারী পরিচালক সোমা হোড় ও কামিয়াব আফতাহি উন নবী।২০১৬ সালে পানামা পেপার্স এবং ২০১৭ সালে প্যারাডাইস পেপার্স ফাঁসের পর দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন ব্যক্তির গোপন সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের ৬১ ব্যক্তি এবং আটটি বড় প্রতিষ্ঠানের নাম আসে। তখন থেকেই অনুসন্ধান শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুদক।
বিএফআইইউ প্রতিবেদনে দেখা যায়, তালিকায় দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের নাম রয়েছে। এর মধ্যে প্যারাডাইস পেপার্সে যাদের নাম এসেছে, তারা হলেন বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী ফাতেমা নাসরিন আউয়াল, তিন ছেলে তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল, তাজওয়ার আউয়াল, মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের ফয়সাল চৌধুরীর নাম আছে। আরও আছে ওয়াই ফরিদা মোগল, শহিদ উল্লাহ, সামির আহমেদের নাম।
সেভেন সিজ অ্যাসেটস লিমিটেড, সোয়েন ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ এক্সপ্লোরেশন লিমিটেড, ইউনোকল শাহবাজপুর পাওয়ার লিমিটেড, ইউনোকল শাহবাজপুর পাইপলাইন লিমিটেড, এনএফএম এনার্জি (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক সেভেন লিমিটেড, ইউনোকল শাহবাজপুর লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক ফাইভ লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টেন লিমিটেড, বারলিংটন রিসোর্সেস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লকস থারটিন অ্যান্ড ফরটিন লিমিটেড, ইউনোকল বাংলাদেশ, ব্লক টুয়েলভ লিমিটেড, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ (বারমুডা) লিমিটেড, টেরা বাংলাদেশ ফান্ড লিমিটেডের নামও রয়েছে এতে।
আর পানামা পেপার্সে নাম আসা ৪৩ জনের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফর উল্লাহ, তার স্ত্রী বেগম নিলুফার কাজী, ছেলে কাজী রায়হান জাফর। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডারের সোহাইল হোসাইন (হাসান), স্পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইফতেখারুল আলম, বাংলা ট্র্যাক লিমিটেডের আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক ও তারিক ইকরামুল হক, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের এ এস এম মহিউদ্দিন মোনেম ও আসমা মোনেমের নামও আছে এই তালিকায়।
আরও আছেন বিএপিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ এম এম খান, মমিন টি-এর আজমত মঈন, পাট ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার মোদী, অনন্ত গ্রুপের শরীফ জহির, মার্কেন্টাইল করপোরেশনের আজীজ খান, আঞ্জুমান আজীজ খান, আয়েশা আজীজ খান, জাফের উমায়ের খান ও ফয়সাল করিম খান; সি পার্লের চেয়ারম্যান সৈয়দ সিরাজুল হক, ইউনাইটেড গ্রুপ অফ কোম্পানিজের হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম, আহমেদ ইসমাইল হোসেন, আখতার মাহমুদ, মাসকট গ্রুপের চেয়ারম্যান এফ এফ জোবায়দুল হক, সেতু করপোরেশনের মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও উম্মে রাব্বানা; স্কয়ার গ্রুপের প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী। এ ছাড়া বিটিএল, ক্যাপ্টেন এম এ এফ এম জোবায়দুল হক, সালমা হক, খাজা শাহাদাৎ উল্লাহ, মীর্জা ইয়াহিয়া, সৈয়দা সামিয়া মীর্জা, আমিনুল হক, তারেক একরামুল হক, জাহিদুল ইসলাম, মো. শহীদ, মোহাম্মদ ফয়সাল করিম, নজরুল ইসলাম, সৈয়দ সিরাজুল হক ও জুলফিকার হায়দার।