সিডনি হার্বার গড়বে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স
কেওয়াতখালি সেতু নির্মাণে বদলে যাচ্ছে ময়মনসিংহ
লাবণ্য চৌধুরী : এবার বাংলাদেশের স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে কেওয়াতখালি সেতুর নির্মাণকাজের মাধ্যমে। বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হার্বারের আদলে ব্রিজ নির্মাণ করবে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স। প্রতিষ্টানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মো. আফতাবউদ্দিন দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ১১শ মিটার দীর্ঘ এ ব্রিজ দেখতে ধনুকের মতো হবে। নদীর মধ্যে কোনো পিলার থাকবে না। এটাকে দেশের প্রথম মডেল ব্রিজ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। এ প্রযুক্তির এ স্টিল আর্চ (ধনুক) ব্রিজ নির্মাণ কাজ বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এর ফলে ময়মনসিংহ জামালপুর অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্য, মানুষের জীবনযাত্রা, যোগাযোগ আমূল বদলে যাবে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের কেওয়াতখালি সেতুর নির্মাণ কাজ পেয়েছে বাংলাদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্প্রেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। নির্মাণকাজে স্প্রেক্ট্রার সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার হিসেবে রয়েছে চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড (সিএসসিইসি)। এ জয়েন্ট ভেঞ্চার ২ হাজার ১৩৭ কোটি টাকায় সেতুটি নির্মাণ করে দেবে।সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে সড়ক ভবনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নূর-ই-আলম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মি. সুইয়ান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিপত্রে সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৩২০ মিটার দীর্ঘ স্টিল-আর্চসহ ১১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু, ৬৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি সড়ক ওভারপাস, ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি রেল ওভারপাস, ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেন সড়ক, মূল সেতু সংলগ্ন একটি টোলপ্লাজা ও একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্রসম্বলিত বিশ্রামাগার নির্মাণ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে সরকারি তহবিল থেকে। প্রকল্প ঋণ হিসেবে নেয়া হবে ১ হাজার ৯১০ কোটি টাকা।
সেতুটি ময়মনসিংহের কেওয়াটখালিতে বিদ্যমান রেলসেতুর সন্নিকটে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত হবে। সেতুটি হবে স্টিল আর্চ ধরণের। স্টিল আর্চ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৩২০ মিটার ও প্রস্থ ৪২ দশমিক ১৫ মিটার। মূল সেতুর মোট স্প্যান সংখ্যা ২২টি। স্টিল আর্চ অংশের স্প্যান সংখ্যা তিনটি। মূল সেতুর পিয়ার সংখ্যা ২১টি। প্রকল্পটি আগামী ৩০ জুন ২০২৫ সালে সমাপ্ত হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ জেলাসদরসহ নেত্রকোনা জেলার বিজয়পুর, শেরপুর জেলার নাকুগাঁও, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এবং জামালপুর জেলার ধানুয়া-কামালপুর এর মত গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলের সঙ্গে মূল মহাসড়ক নেটওয়ার্ক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও, বিদ্যমান শম্ভুগঞ্জ সেতুর যানজট নিরসনের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান, স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মো. আফতাবউদ্দিন, পরিচালক আরিফ খানসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।