চুরিচামারির টাকা ঢালছে বিএনপি-সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
![](https://dainiksottokothaprotidin.com/wp-content/uploads/2023/10/PM-pressconfarence-dainik-sotto-kotha-protidin.jpg)
বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতকাল চুরিচামারি করে এত পয়সা বানিয়েছিল, আর যত টাকা মানি লন্ডারিং করেছিল, সেগুলোর ব্যবহার হচ্ছে। অন্তত সাধারণ মানুষের হাতে কিছু টাকা তো যাচ্ছে। আমি কিন্তু ওভাবেই বিবেচনা করি। তারা যত আন্দোলন করবে, সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা যাবে।
এই দুঃসময়ে সাধারণ মানুষ কিছু টাকা পেলে তো ভালো। এই টাকাগুলো তো বেরোনোর দরকার। সেই টাকাটাও বের হচ্ছে, মানুষও কিছু পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরে কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা হয়নি এবং এ ব্যাপারে কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি।জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে শুক্রবার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনে যান। তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের দূতাবাস পরিদর্শন করেন। সেদিন সেখানেই মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই সাংবাদিক জানতে চান, জ্যাক সুলিভান কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা বলেছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি।’ ‘এ ব্যাপারে কেউ কথা বলছে?’ পাল্টা প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ওই সাংবাদিক বলেন, এ রকম একটা কথা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কথা হয় নাই। কেউ আমাকে এ ধরনের কথা জিজ্ঞাসাও করেনি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা ২০০৭ সালে ২০০৮ সালে হয়ে গেছে আমাদের। তারপর কেউ এটা চাইতে পারে? এই সিস্টেমটা বিএনপি নষ্ট করে দিয়েছে।’
বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তাদের যে আন্দোলন, আমরা তো আন্দোলনে বাধা দিচ্ছি না। তারা আন্দোলন করে যাচ্ছে, লোকসমাগম করে যাচ্ছে, খুব ভালো কথা। এতকাল চুরিচামারি করে এত পয়সা বানিয়েছিল, আর যত টাকা মানি লন্ডারিং করেছিল, সেগুলোর ব্যবহার হচ্ছে। অন্তত সাধারণ মানুষের হাতে কিছু টাকা তো যাচ্ছে। আমি কিন্তু ওভাবেই বিবেচনা করি। তারা যত আন্দোলন করবে, সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা যাবে। এই দুঃসময়ে সাধারণ মানুষ কিছু টাকা পেলে তো ভালো। এই টাকাগুলো তো বেরোনোর দরকার। সেই টাকাটাও বের হচ্ছে, মানুষও কিছু পাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘তারা আন্দোলনও করতে থাকুক। তবে হ্যাঁ, আমি আগেও বলেছি, যদি মানুষের কোনো ক্ষতি করতে চেষ্টা করে, ওই রকম অগ্নিসন্ত্রাস—ওই ধরনের যদি কিছু করে তখন তো ছাড়ব না। কারণ, আমাদের সাথে তো জনগণ আছে। আমাদের কিছু করা লাগবে না। জনগণকে ডাক দিলে তারাই ঠান্ডা করে দেবে। কারণ, যখন অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, তখন সাধারণ মানুষই ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, এবারও তা–ই হবে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন, বিএনপি এত টাকা কোথা থেকে পায়, সেই খবর যাতে নেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের অনুরোধ করব, এই যে তাদের সোর্স অব মানিটা, এটা কোথা থেকে? সেটা একটু খবর নেওয়া দরকার যে তারা এত টাকা কোথা থেকে পায়। এত টাকা কীভাবে খরচ করে, সেটাও একটু খোঁজ নেওয়া দরকার।’
‘বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আপনি খালি হাতে ফেরত এসেছেন। আবার এটার জবাব দিতে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আপস হয়ে গিয়েছে, তাঁর ভঙ্গিমায় তাঁর মতো করে, পুরো বিষয়টা নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই,’ আরেক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বলেছে খালি হাতে এসেছি, এ নিয়ে কোনো উত্তর দিতে চাই না।
শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই, বিএনপির নেতারা মাইক একখান লাগিয়ে কী হারে মিথ্যা কথা বলে, সেটা আপনারা সবাই জেনে নিন। মিথ্যা বলা যে তাদের অভ্যাস। সবকিছুই যে খাটো করে দেখার চেষ্টা—এটা সম্পর্কে যাতে দেশবাসী সচেষ্ট থাকে। তারা যা বলে, সব মিথ্যা কথা বলে। এই মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথা কেউ বিশ্বাস করবেন না। দেশবাসীর কাছে এটাই আহ্বান। ওদের জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে, টিকেও আছে মিথ্যার ওপরে। আর কোনো শিকড় তো নেই।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বিএনপি তো মাইক একটা লাগিয়েই রাখে। বলে আমাদের কথা বলতে দেয় না। আমরা নাকি তাদের মিছিল মিটিং করতে দিই না। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, বেশি দূর যাওয়ার কথা নয়, ২০০১–এ থাকতে আমাদের সাথে কী আচরণটা করত। আমাদের নেতা–কর্মী এখানে অনেকেই আছে, ধরে নিয়ে যেভাবে দিনের পর দিন তাদের ওপর টর্চার (নির্যাতন) করেছে, অত্যাচার করেছে, আমরা যদি তার একটা কণাও করতাম, তবে ওদের অস্তিত্বই থাকত না। থাকবে অস্তিত্ব, থাকবে না। আমরা তো ওদের খুলে দিয়েছি, যা খুশি করো। নিজেদের কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করে আসো।’
তিনি বলেন, আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে যেমন আরও সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী। সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল বলে আমি মনে করি।যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষ করে বুধবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছিলেন।