ঢালাও চুক্তিভিত্তিক কেন!আপত্তি পশ্চিমাদের
বিশেষ প্রতিনিধি : এবার সরকার প্রশাসন নিয়েও নাক গলাচ্ছে পশ্চিমারা। তারা বলছে, ঢালাও চুক্তিভিত্তিক কেন! এই নিয়োগে সরকার প্রশাসন ক্ষমতাসীন নিজেদের আজ্ঞাবহ করে রাখছে বলে অভিযোগ করছে পশ্চিমারা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দূতাবাসের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বার্তায় পশ্চিমা দেশের কূটনৈতিকরা নির্বাচনের আগে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো পদেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ রয়েছে।
রাষ্ট্রপতির সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে। আর এরকম চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা কর্মকর্তারা কতটুকু অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে পক্ষপাতীন ভূমিকা পালন করতে পারবেন এ নিয়ে কূটনীতিকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা সরকারকে জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও পুলিশের আইজি পদেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ রয়েছে। তবে সেই বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাজ্য কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করেনি। প্রশাসনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে।
বিভিন্ন কূটনীতিদের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে তারা মনে করছেন যে, নির্বাচনের সময় প্রশাসন হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমেই মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রধান যখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সে কারণেই তিনি চাইবেন যে সরকারকে সুবিধা দিতে এবং এ কারণেই তিনি পক্ষপাতপূর্ণ আচরণ করতে পারে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করছে।
তাছাড়া স্বরাষ্ট্র এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এবং রাষ্ট্রপতির মুখ্য সচিবও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকার কারণে তারা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আনুগত্য দেখাবেন না যারা তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন তার প্রতি আনুগত্য দেখাবে এই প্রশ্নও তুলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, বিশেষ প্রয়োজনেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার আগে সরকার যেকোনো সরকারি কর্মকর্তাকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর এবং নির্বাচন কমিশন যেভাবে মাঠ প্রশাসন সাজাতে চাইবে মন্ত্রিপরিষদ সেই ভাবেই সাজাতে বাধ্য। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ পশ্চিমা দেশগুলো অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলছে যে সাধারণত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে প্রশাসনে তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না।
মাঠ প্রশাসনে অনুগত ব্যক্তিদেরকেই রাখা হয় এবং সেই দায়িত্বটি পালন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়। আর এ কারণেই পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে যে, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে গেলে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের দিকে নজর দিতে হবে। অন্তত নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন যেন স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে পারে সেই জন্য একটি সহায়ক প্রশাসন দরকার এবং সেই সহায়ক প্রশাসন নিশ্চিত করার সুযোগ নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন কমিশন যেন নির্বাচনের সময় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলোতে প্রদানের সুপারিশ করতে পারে এবং সুপারিশ যেন সংশ্লিষ্টরা শুনতে বাধ্য থাকেন এমন একটি প্রস্তাবও করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সরকার বলছে, নির্বাচনের তফসিলের আগে নির্বাচনকালীন সরকার বা নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তা ভাবনা প্রশাসনের নেই।
কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে নির্বাচন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তফসিল ঘোষণার আগেই প্রশাসনের নিরপেক্ষতা কতটুকু এবং তারা কি ভূমিকা পালন করবে সেটি যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই তারা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের বিরুদ্ধে।