শান্ত-মিরাজে আফগান বধ
![](https://dainiksottokothaprotidin.com/wp-content/uploads/2023/10/Miraj-santo-dainik-sotto-kotha-protidin-780x470.jpg)
স্পোর্টস ডেস্ক : মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বল হাতে ৩ উইকেট ও ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফিফটি হাঁকিয়ে টাইগারদের জয়ের নায়ক মিরাজ। আগে ব্যাট করতে নেমে সাকিব আল হাসান ও মিরাজের স্পিন বিষে ১২ দশমিক ৪ ওভার বাকি থাকতেই ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। তবে মিরাজ-শান্তর জোড়া ফিফটিতে ৯২ বল হাতে রেখেই দাপুটে জয় তুলে নেয় সাকিব বাহিনী।
শনিবার (৭ অক্টোবর) ধরমশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের দেয়া ১৫৭ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম দুই ওভারে ১৫ রান তুলে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দুই টাইগার ওপেনার লিটন-তামিম। তবে এরপরই ঘটেছে ছন্দপতন। রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন জুনিয়র তামিম। আউট হওয়ার আগে ১৩ বলে ১ বাউন্ডারিতে ৫ রান করেন তরুণ এই ব্যাটার। তামিমের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা মিরাজ।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে ফজলহক ফারুকির বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ২টি চারের সাহায্যে ১৩ রান করেন এই ওপেনার। এরপর উইকেটে এসে মিরাজের সাথে জুটি গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। আফগান বোলারদের বাজে বল পেলেই বাউন্ডারি মেরেছেন মিরাজ। ৫৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। অন্যপ্রান্তে পরিস্থিতি বুঝে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন শান্ত। দু’জনে মিলে ১২৯ বলে গড়েন ৯৭ রানের জুটি। ৭৩ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৭ রান করা মিরাজকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন নাভিন উল হক।
এরপর ক্রিজে এসে ইনিংস বড় করতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দারুণ এক শট খেলেও সাকিব ধরা পড়েন বাউন্ডারি লাইনে। ফেরার আগে অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান। তবে অপর প্রান্তে থাকা শান্ত ৮০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ ফিফটি স্পর্শ করেন। পরের ওভারে নাভিনকে ব্যাক টু ব্যাক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯২ বল আগেই নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের ৬ উইকেটের জয়। শান্ত অপরাজিত থাকেন ৫৯ রানে, মুশফিক ২ রানে।
এর আগে, টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটে ভালো সূচনা করে আফগানরা। ৯ম ওভারের দ্বিতীয় বলে ইব্রাহিমকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশ দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। এরপর বাংলাদেশের পোস্টার বয়ের হাত ধরে দ্বিতীয় সাফল্য পায় টাইগাররা। রহমত শাহকে প্যাভিলিয়নে পাঠান এ টাইগার অধিনায়ক।সাকিবের করা অফ স্টাম্পের বাইরের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়েছিলেন জাদরান। তবে ব্যাটে-বলে না হলে বল চলে যায় স্কয়ার লেগে তানজিদ হাসান তামিমের হাতে। ফলে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটের স্বাদ পায় টাইগাররা।
দ্বিতীয় উইকেটে গুরবাজের সঙ্গে ৩৬ রানের জুটি গড়েন রহমত শাহ। ধীরে ধীরে ভয়ংকর হয়ে উঠছিল এই জুটি। তবে জুটিটা বড় হতে দেননি টাইগার দলপতি। ১৬তম ওভারে আবারও বল হাতে আসেন বাংলাদেশের পোস্টার বয়। সাকিবের করা ওই ওভারের প্রথম বলে টপ এজড হয়ে সিলি মিড অফে থাকা লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন রহমত। আর তাতেই ৮৩ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে আফগানদের। আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে একটি চারে ১৮ রান করেন তিনি।
দুই উইকেট হারানোর পর আফগানদের হাল ধরেন হাসমতউল্লাহ শহীদি ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ। শহীদিকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। এই অফ স্পিনারের করা টসড আপ ডেলিভারিতে বড় শট খেলতে গিয়ে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন শহীদি। পরের ওভারে ৪৭ রান করা গুরবাজকে আউট করে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। সাকিব নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসেই ৫ রান করা নাজিবউল্লাহ জাদরানকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান।
পরের ওভারে মোহাম্মদ নবিকে বোল্ড করেছেন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের স্টাম্প বরাবর বল অফ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন নবি। তবে ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। ১২ বলে ৬ রান করে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। এরপর আফগানস্তানের লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিতে বড় অবদান রাখেন মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম।
৯ রান করা রশিদ খানকে বোল্ড করেন মিরাজ। এরপর মুজিব উর রহমানকেও বোল্ড করেন তিনি। মাঝে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে ২২ রানে ফেরান শরিফুল। শেষ ব্যাটার নাভিন উল হককে শূন্য রানে আউট করে আফগানিস্তানকে গুড়িয়ে দেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল। বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দু’টি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। একটি করে উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ।