নেত্রীর মূল্যায়নে-নৌকার কান্ডারি সাজু
বিশেষ প্রতিনিধি/ আশুগঞ্জ প্রতিনিধি : এক মাসের এমপি’র টিকিট পেতে চেয়েছিলেন ১৬ জন আওয়ামী লীগার। কিন্তু পেলেন না সেই সাজু ছাড়া আর কেউই। এই সাজু হচ্ছে সেই সাজু যিনি ছিলেন স্বৈরাচার এরশাদ সরকার বিরোধী অন্দোলনের অন্যতম অগ্রসৈনিক। তিনি ঢাকা মহানগর মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য, ঢাকা গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের আহবায়ক ছিলেন।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় কার্যকরী সংসদে দুইবার সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সৃষ্টিশীল গঠনমূলক ছাত্র রাজনীতিতে অনন্য অবদান রাখায় তিনি ‘পালক’ এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে উপনির্বাচন আগামী ৫ নভেম্বর। এ আসনে নৌকার মাঝি হতে রোববার (৮ অক্টোবর) এর মধ্যে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ১৬ জন দলীয় ফরম জমা দিয়েছিলেন । এর মধ্যে সদ্যপ্রয়াত আলোচিত সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাঈনুল হাসান তুষারও ছিল।
জানা গেছে, রোববার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীতে সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচন বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে চূড়ান্ত করা হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী। উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাঈনুল হাসান তুষার জানান, শনিবার আওয়ামী লীগের সদস্যপদ গ্রহণ করে মনোনয়নের আবেদন ফরম সংগ্রহ করেন।
দলের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী মাঈন উদ্দিন মঈন, সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ), সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান আনসারী, আবদুল হান্নান রতন, শাহজাহান আলম সাজু, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, আশুগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা হাজী ছফিউল্লাহ মিয়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডাক্তার আশীষ কুমার চক্রবর্তী, সরাইল আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর কাউসার, শাহ মফিজ, সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, সরাইল যুবলীগ নেতা আশরাফ উদ্দিন মন্তু, আবু শামীম মোহাম্মদ পিয়ার, এমডি জালাল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০ সেপ্টেম্বর এই আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া মারা যান। পরের দিন এই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপরই এ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ৫ নভেম্বর এখানে উপনির্বাচন। এর আগে এই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি এই আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল। ৫ নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে গত ৫ বছরে এ আসনে ৩ বার সংসদ নির্বাচনের স্বাদ গ্রহণ করবেন ভোটাররা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আসনে পোড়খাওয়া আওয়ামী রাজনীতিবিদ স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজুর নাম বেশ জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছিল। সাজু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মেঘনা বিধৌত আশুগঞ্জ উপজেলার বৈকণ্ঠপুর (বড়তল্লা) গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত্র পরিবারে ১৯৬৭ সালের ৩০ জুন জন্মগ্রহণ করেন। সাজু’র পিতা সামসুল হক একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত ছিলেন।
শাহজাহান আলম সাজু আশুগঞ্জ (পশ্চিম) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাজী আঃ জলিল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাঠ গ্রহণ শেষে ১৯৮৪ সালে ঢাকা গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা-ইন-কমার্সে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে হিসাববিজ্ঞানে (বিবিএস সম্মান) এবং ১৯৯০ সালে এমবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।
বর্তমান আধুনিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণ করায় কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহি®কৃত হন। পরবর্তীতে দেশব্যাপী তীব্র ছাত্র আন্দোলনের ফলে কর্তৃপক্ষ তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। ১৯৮৮ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সম্মেলনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোঃ এরশাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দাবি না মেনেই চলে যাবার সময় শাহজাহান আলম সাজু’র নেতৃত্বে ছাত্ররা রাস্তায় শুয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করলে রাষ্ট্রপতি তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন। উক্ত ঘটনা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে শাহজাহান আলম সাজু ছাত্রনেতা হিসাবে প্রশংসার সাথে সারাদেশে আলোচিত হন।
স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাকে চার-চারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। ১৯৮৫ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ময়েজ উদ্দিন হত্যা মামলার রায়ের দিন ঢাকা জজকোর্ট চত্বরে ছাত্রলীগের মিছিলে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। বোমা হামলার সেই ক্ষত চিহ্ন এখনো তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন।১৯৮৮ সালে গাজীপুরস্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতা ইকবালকে বাস চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগ সভাপতি শাহজাহান আলম সাজু’র নেতৃত্বে সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে এরশাদ সরকারের প্রভাবশালী স্থানীয় এম.পি ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হন।
উক্ত ঘটনায় এম.পি’র প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশের সহযোগিতায় কয়েকশত সশস্ত্র বহিরাগত সন্ত্রাসী শাহজাহান আলম সাজুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীরা উক্ত হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে ৫/৬ ঘন্টাব্যাপী উভয় পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ চলে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলাকালীন সময়ে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং তাঁর হস্তক্ষেপে ঢাকা থেকে কয়েকশত দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শাহজাহান আলম সাজু সহ ছাত্রদের উদ্ধার করে।
১৯৯০ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর থেকে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে শাহজাহান আলম সাজু’র নেতৃত্বে সর্বদলীয় প্রতিরোধ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ তাকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াতে পরামর্শ দেন। কিন্তু শাহজাহান আলম সাজু আন্দোলন অব্যাহত রাখলে ৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ-বিডিআর যৌথভাবে ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে শাহজাহান আলম সাজু সহ ১২ ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায় যার ক্ষত চিহ্ন এখনও তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন।
২০০৯খ্রিঃ সালে সরকার রাজপথের পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতা অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু’কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাপূর্ণ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছিল। তাঁর সততা, বিচক্ষণতা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতার জন্য সরকার তাকে পরপর তিনবার উক্ত পদে তাকে পরবর্তী নিয়োগ প্রদান করে। কল্যাণ ট্রাস্টের ইতিহাসে পরপর তিনবার সদস্য সচিব নিয়োগপ্রাপ্তির ঘটনা এটাই পথম। তিনি বর্তমানে এদেশের অবহেলিত শিক্ষক সমাজের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
যাহোক, আলোচিত এই আসনটি সরাইল উপজেলার ৯টি, আশুগঞ্জ উপজেলার ৮টিসহ মোট ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার ১১২। সরাইল উপজেলার মোট ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭। আর আশুগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৫।