অপরাধ

সাজ্জাদের ইয়াবা তেলেসমাতি

নারীকে ফাঁসাতে গিয়ে ধরা মাদক কর্মকর্তা

কোর্ট রিপোর্টার : স্বপ্না আক্তার নামে এক নারীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে উল্টো ফেঁসেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। স্বপ্নাকে অবৈধভাবে আটক এবং মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে মামলা করে আদালতকে অবগত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের আদালত রোববার (৮ আগস্ট) এ আদেশ দেন। এ সময় স্বপ্নাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সোমবার (৯ অক্টোবর) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উত্তরের প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।স্বপ্নাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা তদন্ত কর্মকর্তা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুর রহমানকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়ে সিআইডিকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

স্বপ্নার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিদর্শক রোকেয়া আক্তার, সহকারী উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ও রুবেল হোসেন, সিপাহী শরিফুল ইসলামসহ তিনজন পুলিশ ফোর্সের সমন্বয়ে গঠিত রেইডিং টিম স্বপ্নার খিলক্ষেতের বাসায় তল্লাশি চালায়। মামলার বাদী সাজ্জাদ হোসেন রোকেয়া আক্তারের মাধ্যমে আসামির দেহ ও শয়ন কক্ষ তল্লাশি করে পাঁটটি স্লিপারযুক্ত পলিপ্যাকেটে রক্ষিত অ্যামফিটামিনযুক্ত মোট এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলে জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেন ও সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করেন।

মামলার তদন্তভার পড়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুর রহমানের ওপর। তিনি সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এ সময় রোকেয়া আক্তার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গুলশান সার্কেলের অভিযানে তার নাম যুক্ত করা হয়েছে। ওই তারিখে তিনি অফিসের কার্যক্রম শেষে সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে তার বড় ছেলেকে নিয়ে বনশ্রীতে ফরাজী হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন।

সহকারী উপ-পরিদর্শক জিয়াউর রহমানও লিখিতভাবে তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন, ওই অভিযানে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আরেক সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. রুবেল হোসেন তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে লিখিত বক্তব্যে জানান, আসামির ফ্ল্যাট ও দেহ তল্লাশিকালে ও আলামত উদ্ধারের সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাহী মো. শরিফুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত বক্তব্যে বলেন, অভিযান পরিচালনার সময় তাকে মামলার বাদী একটি ফাঁকা জায়গায় অবস্থান করতে বলেন। তল্লাশিকালে ও আলামত উদ্ধারের সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। পরে বাদীর ফোন পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান ও দু’জন পুলিশের সহযোগিতায় আসামিকে গাড়িতে তোলেন।

জব্দ তালিকার পাবলিক সাক্ষী রিপন মিয়া লিখিত জবানবন্দিতে জানান, তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি অফিস শেষে রাত সাড়ে ১০টায় বাসায় আসেন। বাসায় ঢুকতেই দোতলার ভাড়াটিয়া স্বপ্নার ফ্ল্যাটের ভেতর ৪-৫ জন পুরুষ সরকারী লোকজনকে দেখতে পান। তাকে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করতে বললে তিনি একটি কাগজে স্বাক্ষর করেন।

জব্দকৃত ইয়াবা তার সম্মুখে উদ্ধার করা হয়নি। এছাড়া তল্লাশির জন্য ওই টিমে কোনো নারী সদস্য ছিল না।
এরপর তদন্ত কর্মকর্তা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুর রহমান স্বপ্নাকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।এদিকে সার্বিক দিক বিবেচনায় আদালতের পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হওয়ায় স্বপ্নাকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button