৮ বিভাগের খবর

মোবাইল ম্যাসেজে ধরা পড়ল খুনী দেলোয়ার

পিবিআই ধরল নিলুফার খুনীকে

বিশেষ প্রতিনিধি : অবশেষে ধরা পড়লো সেই খুনী দেলোয়ার মিজী। ২০১৯ সালের ১৬ জুন ঢাকার সদরঘাটগামী মিতালি-৭ লঞ্চের কেবিনে খুন হয়েছিল লিলুফা। সেই খুনের তদন্ত করছিল পিবিআই। তদন্তে সূত্র ধরে মোবাইলে আড়ি পাতলে বের হয় দেলেয়ারের সম্পৃক্ততা। দেলোয়ার মোবাইল ফোনে মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ঠতা বেরিয়ে আসে ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেলোয়ারকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। তবে কোনো ক্লু না থাকায় এবং দেলোয়ার স্বীকার না করায় অপেক্ষা আরও বাড়তে থাকে।

এক পর্যায়ে দেলোয়ারের মোবাইল ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে এক প্রতিবেশীকে পাঠানো একটি ভয়েস মেসেজের সূত্র ধরে উদঘাটন হয় রহস্যের। একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডে নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন দেলোয়ার।
এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর ব্রুনেই থেকে বাংলাদেশে ফিরলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তদন্তে জেরায় দেলোয়ার খুনের কথা স্বীকার করে।

পিবিআই জানায়, প্রাথমিকভাবে দেলোয়ার কোনোভাবেই ভিকটিম নিলুফার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক বা হত্যাকাণ্ডের বিষয় স্বীকার করছিলেন না। তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন বলে জানান। ফলে সেটিও খোলা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা র‌্যান্ডম পসওয়ার্ড বসিয়ে ফোন আনলক করতে সক্ষম হন। খুঁজতে খুঁজতে তার হোয়াটসঅ্যাপে এক প্রতিবেশীকে পাঠানো একটি ভয়েস মেসেজে বেরিয়ে আসে ক্লু।

দেশে আসার কিছুদিন আগে পাঠানো ওই ভয়েস মেসেজে নিহত লিলুফা হত্যা মামলার খোঁজ-খবর নিতে বলেন এবং মামলা শেষ করতে যদি টাকা পয়সাও লাগে সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে বলেন। দেশে আসলে সমস্যা হবে না এমন আশ্বাসেই তিনি ব্রুনাই থেকে বাংলাদেশে আসেন। এরপর এ বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দেলোয়ার মিজি নিলুফা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন।

জানা গেছে, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে লিলুফা বেগমের (৫৭) সঙ্গে পরকীয়া ঘনিষ্ঠতা হয় দেলোয়ার মিজির (৪৪)। একপর্যায়ে লিলুফা বিয়ের জন্য চাপ দেন। কিছুদিন যাওয়ার পর বিয়ের কথা বলে লিলুফাকে নিয়ে চাঁদপুর থেকে লঞ্চে ঢাকায় রওনা হন দেলোয়ার। লঞ্চে তাঁদের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দেলোয়ার লিলুফাকে হত্যা করেন। এতেই থামেননি। এ ঘটনায় প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে লঞ্চের বুকিং রেজিস্টারে জাহাঙ্গীরের নাম লিখে এর পাশে লিলুফার মুঠোফোন নম্বর লিখে দেন।
২০১৯ সালের ১৬ জুন ঢাকার সদরঘাটগামী মিতালি-৭ লঞ্চের কেবিনে খুন হন লিলুফা। এ ঘটনায় তাঁর ভাই বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

খুন করার ১০ দিনের মাথায় ব্রুনেই চলে যান দেলোয়ার। খুনের চার বছর পর বিদেশে বসে লিলুফা হত্যা মামলার অগ্রগতি জানতে ভাগনেকে ফোন করেন দেলোয়ার। সেই কথোপকথনের সূত্র ধরে রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয় হত্যা মামলার। গত ২২ সেপ্টেম্বর ব্রুনেই থেকে ফিরলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলাটির তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ বৃহস্পতিবার পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পিবিআইয়ের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার।

পিবিআইয়ের প্রধান বলেন, লিলুফা ও দেলোয়ার চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার মোল্লাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। ২০১৫ সালে লিলুফার স্বামী মারা যান। একসময় লিলুফার বাসায় ফার্নিচারের কাজ করে দিয়েছিলেন দেলোয়ার। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেলোয়ারের স্ত্রী ও মেয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে দেলোয়ারের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগেই লিলুফা দেলোয়ারকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। না হলে মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে সবাইকে ঘটনা বলে দেওয়ার হুমকি দেন। তখন দেলোয়ার লিলুফাকে মেয়ের বিয়ে শেষ হলে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। মেয়ের বিয়ের শেষেই দেলোয়ার লিলুফাকে নিয়ে ঢাকা রওনা হয়েছিলেন।

পিবিআইয়ের প্রধান বলেন, শুরুতে জাহাঙ্গীরকে সন্দেহ করেই মামলার তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। পরে নতুন কৌশল নেয় পিবিআই। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দেলোয়ারের সংশ্লিষ্টতা পেয়ে পিবিআই ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানায়। দেলোয়ার দেশে আসামাত্রই ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

 

 

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button