ন্যাশনাল ব্যাংকের এই ঋণ বিতরণকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে চট্টগ্রামের অর্থ ঋণ আদালতের বিচারক মো. মুজাহিদুর রহমান দুদককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। দুদক ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ইসি কমিটির বিষয়ে তদন্ত করবে। চলতি বছরের ১৮ মে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে বলে আদালত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় হিসাব খুলেই ফরিদপুরের মোয়াজ্জেম হোসেন ১০০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। কোনো রকম ব্যবসায়িক সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই ছাড়াই অস্বাভাবিক তড়িঘড়ি করে পরদিনই ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির ৫৫০তম সভায় ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। জামানত নেওয়ার শর্ত থাকলেও ১০ দিনের মধ্যে জামানত ছাড়াই ঋণের শত কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। শত কোটি টাকা ঋণ বিতরণের মাত্র দুই মাসের মধ্যে আরও ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয় মোয়াজ্জেমের প্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজকে।
প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তথা ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেখানো হয়েছে মোয়াজ্জেম হোসেনকে আর চেয়ারম্যান তারই স্ত্রী সাদিকা আফরিন দিপ্তী। প্রশ্ন উঠেছে মোয়াজ্জেম এবং সাদিকা এত দ্রুত ঋণ কীভাবে পেয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে এই ঋণ দ্রুত অনুমোদনের নেপথ্যে রয়েছে আরেক বড় ঋণ খেলাপি আশিকুর রহমান লস্কর।
ন্যাশনাল ব্যাংকের এই ঋণ বিতরণকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে চট্টগ্রামের অর্থ ঋণ আদালতের বিচারক মো. মুজাহিদুর রহমান দুদককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। দুদক ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ইসি কমিটির বিষয়ে তদন্ত করবে। চলতি বছরের ১৮ মে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে বলে আদালত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের এই ঋণ গ্রহীতার ঠিকানায়ও গরমিল।ঋণ খেলাপি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ না করে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ১৭৪, দারোগার হাট, সদর-৪০০০, ডবলমুরিং, চট্টগ্রাম এবং ডব্লিউ/ই-১৪ পশ্চিম ফিরোজশাহ কলোনি, আকবর শাহ, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
আদালত এই মামলার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘একদিনের মধ্যেই ঋণ মঞ্জুর হওয়ায় প্রমাণিত হয় যে, ব্যাংকের তৎকালীন এক্সিকিউটিভ কমিটি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্রাস্টি অব পাবলিক মানি হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকের ১১৫ কোটি টাকা আত্মসাতে ব্যাংকের তৎকালীন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভূমিকা দুদক কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে বলে মনে করি।’
আশিকুর রহমান লস্করের বিরুদ্ধে এবি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মুহাম্মদ ইসহাক চৌধুরীর যোগশাসজে ২৭৩ কোটি টাকা মেরে দিয়ে বিদেশের পাচারের অভিযোগে মামলা হয় ২০২১ সালে। যার তদন্তও দুদকের হাতে।
ন্যাশনাল ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার ১১৫ কোটি টাকা সুদ-আদলে ১৭৫ কোটি টাকার হয়েছে। ব্যাংক আদালতে ডিক্রিও পেয়েছে। এই টাকা আদায়ে ব্যাংক আদালতের ধারস্থ হতেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আশিকুর রহমান লস্কর। গত ৫ মার্চ লস্কর তার প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী মোয়াজ্জেম ও তার স্ত্রীর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন। লস্কর দুবাই যাওয়ার বিষয়টি তার স্বজনরা নিশ্চিত করলেও মোয়াজ্জেম ও সাদিকা আফরিন দিপ্তী দেশেই আছেন বলে জানা যায়।