![](https://dainiksottokothaprotidin.com/wp-content/uploads/2023/10/khalada-tarek-780x470.png)
কোর্ট রিপোর্টার : নির্বাচনে অযোগ্য বিএনপির খালেদা জিয়া তারেক রহমানসহ দন্ডে আনফিট আরো অর্ধশত নেতা। দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের বেশি সাজা পাওয়া আসামি সাংবিধানিকভাবেই সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হবেন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট। সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে বিএনপির ৫ নেতার আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায়ের বিস্তারিত প্রকাশ পাওয়ায় নির্বাচন করতে পারবেন না বিএনপির বহু নেতা। যাদের কেউ কেউ জামিনে থাকলেও আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের উপায় আগেও ছিলো না। এই রায়ের মাধ্যমে সেই বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হলো।
রোববার এ বিষয়ে দেওয়া আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। রায়ে বলা আছে, সাজা কখনও স্থগিত হয় না। হয় নিষ্পত্তি, নয়তো দণ্ড হয়। দুর্নীতি মামলায় দণ্ড পাওয়া কিছু ব্যক্তি বিচারাধীন আপিলে একটি দরখাস্ত দিয়েছেন সাজা স্থগিতের জন্য। কারণ, সাজা স্থগিত হলে তারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা দেখছিলেন। রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো- আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড বহাল থাকবে, যার অর্থ সাজা কখনও স্থগিত হয় না।
আদালতের এই পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ বেশ কিছু নেতা ইতিমধ্যে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য হয়ে গেছেন।
বিএনপির দাবি, সারা দেশে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এই সংখ্যা অর্ধশতাধিক। শুধু তা-ই নয়, দলটি আশঙ্কা করছে দলের আরও বেশ কিছু জ্যেষ্ঠ নেতাকে আগামী নির্বাচনের আগে বিভিন্ন মামলায় সাজা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই তালিকায় আছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে আপিলকারীদের সাজা স্থগিত করার কোনও সুযোগ নেই। আবেদনকারীরা হলেন– ওয়াদুদ ভূঁইয়া, আব্দুল ওহাব, মশিউর রহমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আমান উল্লাহ আমান। এই পাঁচ আবেদনকারীর বিষয়ে বলা হয়েছে, আবেদনকারীদের জামিন দেয়া হয়েছে, তবে এটি বলা যায় না যে, তারা খালাস পেয়েছেন, বা তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, বা তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, বা শেষ পর্যন্ত তারা দোষী সাব্যস্ত ও সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন।
ফলে সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডিতদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তা উপযুক্ত আদালতে স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানই এখানে প্রাধান্য পাবে।
বিএনপির দপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং আমানের স্ত্রী সাবেরা আমানের আপিল খারিজ করে বিচারিক আদালতের সাজার রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট।
৯ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার ভাটারা থানায় ৮ বছর আগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির ১৫ নেতা-কর্মীকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেত্রীর উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান এবং কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আহসান হাবিব লিংকন।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ায় আমরা এখন বলতেই পারি যে, কোনও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি জামিনে থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্য হবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত উপযুক্ত আদালতে তার সাজা বাতিল হয়। ফলে সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বা আপিল বিচারাধীন এমন কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বাইরেও অনেক নেতা নির্বাচনের উপযোগিতা হারাবেন। এমনকি রাজধানীতে আট বছর আগের নাশকতার একটি মামলার রায়ে ৯ অক্টোবর হাবিবুর রহমান হাবিব, মো. শাহজাহান, আহসান হাবিব লিংকন, বেলাল আহমেদ, শামীমুর রহমান শামীমসহ ১৫ জনকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তারাও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হলেন।
জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আগেও কখনও সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন না। যেহেতু সাজা স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল, ফলে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাঝপথে সাজা কখনও স্থগিত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না, নিষ্পত্তি হতে হবে।