অর্থমন্ত্রী উজিরে খামোখা:শামীম
সংসদ রিপোর্টার : সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দীর্ঘ অনুপস্থিতির সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, অর্থমন্ত্রী উজিরে খামোখা হয়ে গেছেন। বুধবার (১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত সংসদের চলতি অধিবেশনে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বিল পেশ ও পাস হয়েছে। তার কোনোটির সময় অর্থমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। তার সবগুলো বিল পেশ ও পাসের সময় বিকল্প মন্ত্রী হিসেবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে তা উপস্থাপন করেছে।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কোনও কাজে উনাকে (অর্থমন্ত্রী) পাওয়া যায় না। অর্থনৈতিক সংকট চলছে। প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। উনাকে দেখা যাচ্ছে না। উনি উজিরে খামাখা হয়ে গেছেন। স্বেচ্ছায় উজিরে খামাখা হয়ে গেছেন, দফতরবিহীন মন্ত্রীর মতো আছেন। এটা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। দেশের অর্থনীতিবিদের অভাব নেই। দেশের অর্থনীতির সমাধান করতে পারবেন এমন লোক কোথায় আছে জানি না। অথচ এরকম লোকের অভাব নেই।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্রাইসিস আওয়ামী লীগ ভালোমতো মোকাবিলা করেছে এবং সারাজীবনই করেছে। এখনও হয়তো বা পারবে। কিন্তু অর্থিনীতি তো সরকারের একার বিষয় নয়। এটি গ্লোবাল ইস্যু। আমরা লোনের জালে পড়ে যাচ্ছি। আমদানি-রফতানি ঘাটতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। হ্যাঁ, আমরা যদি চীন থেকে তাদের মুদ্রায় লোন পাই সেটা দিয়ে এটা পরিশোধ করতে পারবো। তাদের হয়তো কিছুটা সহায়ক হবে। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে তো কিছু হচ্ছে না।
কতিপয় মালিক নামদারী লোক ব্যাংকগুলোকে খালি করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক। তিনি বলেন, এমন হয়েছে ব্যাংকের মালিক ৪০০ কোটি টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তার সুদ মাফ হয়ে গেছে। অথচ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিলে কৃষকের সুদ মাফ হয় না। এটা খুবই দুঃখজনক। এই অনিয়মগুলো অর্থমন্ত্রী দূর করতে পারেননি।
মুজিবুল হক বলেন, সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এক হাজার কোটি টাকা ঋণের টাকা মেরে বিদেশে চলে গেছেন। জনতা ব্যাংকের এমডি হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন, এটার কোনও বাছবিচার নেই। এরা টাকা মেরে চলে গেছে, সেগুলো দেশে নাই। তারা ডলার কিনে বিদেশে পাচার করেছে। এজন্য রাষ্ট্র ডলারের সংকটে পড়েছে।
তিনি বলেন, অনেকেই মনে করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে টাকাটা ফেরত দেওয়া লাগবে না। না দিলেও সমস্যা হয় না। অর্থমন্ত্রী পাঁচটা বছর কী করেছেন জানি না। এত করে বললাম তদন্ত করেন, প্রয়োজনে সংসদীয় কমিটি করেন। কিন্তু তিনি কানেই নিলেন না।
পরে নিউ ডেভেলপমেন্ট বিল কণ্ঠভোটে সংসদে পাস হয়। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠার চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই বিল পাস করেছে জাতীয় সংসদ। ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বিল–২০২৩’ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে পাসের জন্য প্রস্তাব করেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিস্পত্তি শেষে বিলটি পাস হয়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস জোট ২০১৪ সালে এগ্রিমেন্ট অন দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) নামে একটি বহুজাতিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে ৫টি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরসহ মোট ৮টি দেশ এর সদস্য। ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ এনডিবির সদস্য লাভ করে। এনডিবির আর্টিকেল অব এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এগ্রিমেন্ট অন দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অনুসমর্থন করা প্রয়োজন।