জাতীয়

বিএনপি-জামায়াত শুধু ধ্বংস জানে

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

 

কক্সবাজার প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত শুধু ধ্বংস করতে জানে, কল্যাণ করতে জানে না। আমরা সৃষ্টি করি, ওরা ভাঙে, ওরা নস্যাৎ করে। ওদের থেকে সাবধান থাকবেন। শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের মহেশখালীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র-সংলগ্ন টাউনশিপ মাঠে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো মানুষের মধ্যে যদি মনুষ্যত্ববোধ থাকে তাহলে জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারে না। বিভিন্ন জায়গায় জীবন্ত মানুষগুলোকে ওই বিএনপি-জামায়াত পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করছে। গাড়িঘোড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, সম্পদ পুড়িয়ে নষ্ট করা এটাই তাদের কাজ।

এই বাংলাদেশের মানুষকে নিয়েই নিজের পরিবার বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের মাঝে আমি আমার বাবা, মা, ভাইয়ের স্নেহ পেয়েছি। আপনাদের জন্য আমি আমার বাবার মতো জীবন দিতেও রাজী। দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া খ্যাত কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।শনিবার প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ি জনসভা মঞ্চে গিয়ে পৌঁছেন ৩ টা ৪০ মিনিটে। এর পর উদ্বোধন করছেন ১৩ প্রকল্প। যে উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। একই সাথে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ প্রকল্পের কাজ।সভা মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য প্রদান শুরু করেন ৪ টা ৫ মিনিট।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর যারা ক্ষমতা এসেছেন তারা কেউ এলাকার উন্নয়ন করেনি। পাশে দাঁড়াইনি উপকূলের মানুষের পাশে। বিরোধী দলের থাকাকালিন এসব এলাকায় এসে দেখেছি এখানে লবণ চাষ ছাড়া কিছুই হত না। সেই লবণ চাষীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা দেখতে মাতারবাড়িতে এসেছি। শুনেছি এসব এলাকার মানুষের সার্বিক দাবি। তাই ক্ষমতায় আসার পর এসব এলাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করি।

তিনি বলেন, আজ রেল লাইন উদ্বোধন করলাম। এখন রেল যোগে চট্টগ্রাম, ঢাকায় যাওয়া সহজ হবে। এখানে উদ্বোধন করা প্রকল্প ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে ওই এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিককে পাশে ডেকে জনতার হাতে তুলে দেন। এসময় বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা মূল্যে লেখা পড়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বয়স্ক, বিধবা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একটা মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। কেউ থাকলে জানাবেন গৃহ ও ভূমি দেয়া হবে। প্রতিটি মানুষ নিজের জমিতে খাদ্য ও সবজী উৎপাদন করুণ।ইন্টারনেট প্রযুক্তির সহজলভ্যতার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুন এটা আমরা চাই। আমরা দেশের মানুষের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছি। এদেশের মানুষ না খেয়ে থাকবেন না। মানুষ যাতে কোন ভাবেই কষ্ট না পায় সেটা আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হবে একটি দৃষ্টি নন্দন বিমানবন্দর।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লবণ চাষীরা যাতে লবণ চাষ করতে পারে তার জন্য জমি, বাসগৃহ হারানো মানুষকে ঘর দেয়া সহ সকল কিছুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।লবণ চাষ অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লবণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লবণ চাষ অব্যাহত রাখতে হবে। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হয়েছে। ফুটবল স্টেডিয়াম হবে। ক্রিড়া কমপ্লেক্স হবে। প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম হচ্ছে। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা এসে স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন হয়েছে। কক্সবাজারের মানুষ সমুদ্রের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। তাদের কথা বিবেচনা করে সব করা হচ্ছে। তাই আজ মহেশখালী দ্বীপ আলোকিত একটি দ্বীপ।

তাই আগামী নির্বাচনের নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনতার কাছে হাত তুলে অঙ্গিকার চান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমি অঙ্গিকারবদ্ধ। আমি পিতা, মা, ভাই, সকলকে হারিয়েছি। তাদের সকলকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এদেশের মানুষের মঙ্গল ছাড়া আর কিছুই চাই না। জিয়াউর রহমান আমাকে দেশে ফিরতে বাঁধা দিয়েছেন।

সকল বাঁধা উপেক্ষা করে এদেশে এসেছি এদেশের মানুষকে ভালোবেসে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জাতি হবে এটা আমার একান্ত চাওয়া ছিল। তার জন্যই কাজ করছি। তাই নৌকায় ভোট প্রদান করতে হবে। যারা এদেশের মানুষকে ভালোবাসে না তারা বাসে আগুন দিচ্ছে। মানুষকে পুঁড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এরা সব ধ্বংস করতে জানে। সৃষ্টি করতে জানে না। তাদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এই বাংলাদেশের মানুষ আমার পরিবার। আপনাদের মাঝে আমার বাবা, মা, ভাইয়ের স্নেহ পেয়েছি। আপনাদের জন্য আমি আমার বাবার মতো জীবন দিতেও রাজী।

প্রধানমন্ত্রী ৪ টা ৩২ মিনিটে তার বক্তব্য শেষ করেন। ওই সময়ও আবারও আশেককে জনতার হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী যে ১৩ টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তাতে রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনে নির্মিত মাতারবাড়ি ১২ শত মেগা ওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযুক্ত। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গর্ডার ব্রিজ নির্মাণ, কক্সবাজার সদরের খাল লাইনিং এপ্রোচ রোড ও ব্রিজ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪ টি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪ টি, প্রবাসি কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন ৬৭ কোটি টাকার টেকনাফ মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর নন্দাখালী ১৮৪ মিটার আর্চ আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ, প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প।এদিকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সংযোগ হওয়ার বিষয়টি গৌরবের বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে রেল সংযোগ একটি নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলাবাসির দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে।

এশিয়ান বৃহৎ এবং ঝিনুক আদলে তৈরি আইকনিক রেল স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার এখন থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।শনিবার ১১টা৩ মিনিটের সময় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ১২ টা ১৫ মিনিটে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান শুরু করেন।প্রধানমন্ত্রী সুধি সমাবেশ পৌঁছার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া শেষে শিশুদের সাথে ছবি তুলেন। এরপরই মঞ্চে উঠে বসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানের আগেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন একটি শুভেচ্ছা স্মারক। রেলমন্ত্রী ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব নুরুল ইসলাম সুজন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রেলকে আগামী ৩ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের করতে কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা মাহমারিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিশ্বের নানা দেশে যুদ্ধের কারণে কিছু মূল্য বেড়েছে। তাই প্রতিটি মানুষকে খালি জায়গায় খাদ্য উৎপাদন করতে অনুরোধ করছি।তিনি বিএনপি ও জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চোখ থাকতে অন্ধরা উন্নয়ন দেখে না। তাদের পরামর্শ ১০ টাকায় ঢাকায় চক্ষু চিকিৎসা নেয়া।

যারা আগুন সন্ত্রাস করে। আগুন দিয়ে বাস পুড়িয়ে দেয়া, মানুষ হত্যা করে তাদের চোখ না মনও অন্ধ। তারা ধ্বংস করে সৃষ্টি করে না। এদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলওয়েকে নিজের সম্পদ মনে করে ব্যবহার করতে হবে। এটা পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সকলের। চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত রেল সংযোগ হবে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে দেশবাসী ব্যবহারে যত্নবান হবেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। এটার সাথে থাকতে হবে সকলকে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button