বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে মনোনয়নপত্র তোলার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা জমা দেওয়ার সময় চাপ প্রয়োগের মতো অনাচার কমবে। আর স্মার্ট নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অ্যাপের মাধ্যমে আসবে ভোটের স্বচ্ছতা।রোববার (১২ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ নামক অ্যাপ ও অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেমের (ওএনএসএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে চার নির্বাচন কমিশনার, বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। ।
সিইসি বলেন, যে পদ্ধতি প্রবর্তন করা হচ্ছে, তা শুধু আমাদের তথ্য সরবরাহ সহজ ও দ্রুত করে দেবে তা নয়, স্বচ্ছতার ক্ষেত্রেও এটি খুবই সহায়ক হবে। অর্থাৎ দুই ঘণ্টা পরে কী (ভোট পড়ার হার) পেলাম, চার ঘণ্টা পরে কী পেলাম, ছয় ঘণ্টা পরে কী পেলাম, হঠাৎ করে আকাশচুম্বী কিছু হয়ে যায়, তখন কিন্তু বিশ্লেষণের একটি সুযোগ হবে। কাজেই এটি স্বচ্ছতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, আমাদের একটু কষ্ট করে শিখে নিতে হবে, অ্যাপের মাধ্যমে কীভাবে বিভিন্ন তথ্য আমরা অবলোকন করব। আর অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয় যেটি বলা হয়েছে, তা কিন্তু বেশ কয়েকটি উপ-নির্বাচনে আমরা করেছি। এটি অসম্ভব কিছু না। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে সহজ হয়ে যাবে।
সিইসি আরও বলেন, নমিনেশন পেপার তুলতে বাধা যেমন দেওয়া হয়, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে জমা দেওয়ার সময় চাপ দেওয়া হয়, প্রত্যাহার করো। এসব অনাচার অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে কমে আসতে পারে এবং টোটাল (পুরো) নির্বাচনী ব্যবস্থা আরও নির্ভরযোগ্য, আরও সহজ এবং আরও পরিশুদ্ধ হতে পারে।
সিইসি বলেন, আমার বিশ্বাস অ্যাপটি নির্ভরযোগ্য হবে। অনলাইন নমিনেশন দলগুলো ব্যবহার করবে। অ্যাপ সাধারণেরা যদি ব্যবহার করেন, উপকৃত হবেন। অ্যাপল, অ্যানড্রয়েড যেকোনো ফোনেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, আগে সশরীরে মনোনয়ন জমা দিতে এসে অনেক লোকসমাগম হতো এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে হতো। এসব কারণেই আমরা অনলাইন সিস্টেম চালু করেছি। আর স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্টের ফলে কার ভোটার নম্বর কত, কোন কেন্দ্রে ভোট দিতে হবে, এগুলোর আর দরকার হবে না। স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্টে জন্ম তারিখ ও মোবাইল নম্বর দিয়েই রেজিষ্ট্রেশন করা যাবে। এ অ্যাপ অধিকতর জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতার টুল হিসেবে ব্যবহার হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, গত কমিশন অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। কিন্তু তা খুব একটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তা আজকে বাস্তবায়ন হলো, সেজন্য আমার খুব ভালো লাগছে। আর স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট যা গত কয়েকটি নির্বাচনে আমরা ব্যবহার করেছিলাম, তা থেকেই আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। সেখান থেকেই এটি করার জন্য বলা হয়েছিল এবং নির্বাচন কমিশন তা করেছে, এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীর তথ্য নিয়ে অপপ্রচার হয়। তবে ভবিষ্যতে কোনো ভোটার যখন প্রার্থী সম্পর্কে জানতে চাইবেন, তখন কিন্তু তারা স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপে সব দেখতে পারবেন। এ অ্যাপে প্রার্থীর সব তথ্য-প্রমাণ থাকবে। অর্থাৎ অপপ্রচারগুলো যাচাই করে নেওয়া যাবে। সেই সঙ্গে নির্বাচনে ভোটের বিষয় নিয়ে মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব থাকে, তাও দূর হবে।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, আমাদের প্রত্যেকের জীবন এখন প্রযুক্তি নির্ভরশীল। প্রযুক্তিকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আমরা যখন এখানে কমিশনার হিসেবে যোগ দিই, তারপর থেকে যতগুলো ইলেকশন হয়েছে প্রায় সবগুলোতেই মনোনয়ন সাবমিশনের দিন থেকে আচরণবিধি ভঙ্গ শুরু হয়ে যায়। মনোনয়ন সাবমিশন করতে এসে অনেকে বিভিন্ন শোডাউন করেন। কিন্তু আইনে বলা আছে, মনোনয়ন জমার সময় শোডাউন করা যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি, এ অ্যাপের ফলে ভোট অনেক স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে এবং সাধারণ জনগণ একে খুব ভালোভাবে নেবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি, প্রথম দিনই মনোনয়ন সাবমিশন করতে প্রার্থীরা শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে আসতেন। এতে তাদের শক্তি প্রদর্শিত হতো। তারা প্রথম দিনেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করতেন। অ্যাপ দুটি তাদের আচরণবিধি ভঙ্গ করতে দেবে না। এ ছাড়া আমাদের সমাজে দেখা যায়, অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বাধা দেওয়া হয় বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বল প্রয়োগ করা হয়। এই অ্যাপের ফলে আর কেউ এরকম সুযোগ পাবে না।