জাতীয়

ভেঙ্গে গেল বিএনপি জোট

ভোটে যাচ্ছেন জেনারেল ইব্রাহিমের যুক্তফ্রন্ট

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : ভেঙ্গে গেল বিএনপি জোট। একের পর এক দল বেরিয়ে আসছেন বিএনপি থেকে। নতুন করে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে এলেন সাবেক মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের দল কল্যাণ পার্টি। দীর্ঘদিন ধরে তারা বিএনপির আন্দোলনসঙ্গী হিসেবে ছিলেন।ইবরাহিমের নেতৃত্বে যুক্তফ্রণ্ট গঠনের দুইদিন আগে দল ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নেতৃত্বে এসেছেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। আসার পথে এক পায় খাঁড়া মেজর অব. হাফিজও।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনএম। দলটি বলছে, তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে এবং অন্তত দুই ডজন সাবেক সংসদ সদস্য তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। বিএনএমের সঙ্গে ইতোমধ্যে রয়েছেন বিএনপির তিনজন সাবেক সংসদ সদস্য। এই তিনজন হলেন–ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাব, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সা্বেক সংসদ সদস্য দেওয়ান শামসুল আবেদীন এবং বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান।তিন দল নিয়ে কল্যাণ পার্টি জোট গঠন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা দিল।

ফাটল স্পষ্ট হয়ে উঠলো। সাবেক মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের দল কল্যাণ পার্টি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির আন্দোলনসঙ্গী হিসেবে ছিলো।হঠাৎ করেই বুধবার আরও দুটি দলকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে আসার ঘোষণা দিয়েছে কল্যাণ পার্টি। যুক্তফ্রন্ট নামের ওই জোটে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে রয়েছে- বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল), বালাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাতপাঞ্জা)।

সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে হরতাল-অবরোধের নামে সহিংস কর্মসূচিতে রয়েছে। কল্যাণ পার্টিসহ সমমনা দল ও জোটগুলোও একই কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। প্রায় ৩৯টি দল এক জোট হয়ে এই আন্দোলন চালাচ্ছে।

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ‘পেরে উঠছেন না’ জানিয়ে কল্যাণ পার্টির প্রধান বুধবার বলেন, ১৬ বছরে অনেকেরই যোগ্যতা ও সাহস থাকার পরও সংসদে যেতে পারেনি। আমাদের সিদ্ধান্ত কারও পছন্দ হবে বা হবে না। আগামী কয়েক সপ্তাহ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সংকটময়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন আছে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জরুরি। যুক্তফ্রন্ট মনে করেছে নির্বাচনে যাওয়ার প্রয়োজন আছে।

২০০৭ সালে ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ পর জরুরি জোটভোটে অংশ নিতে কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে তিন দলীয় জোট ১০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছে। অবস্থার মধ্যে ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’ স্লোগান সামনে রেখে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির জন্ম হয়। যুক্তফ্রন্ট গঠনের আগে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং সর্বশেষ জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোটে ছিলেন।বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমরা মাঠে দাবি আদায়ে সফল না হয়ে, বিকল্প পন্থায় ভোটে অংশ নিয়ে অবদান নিতে চাই। আশা করছি, এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

তিনি বলেন, আমরা জোটগতভাবে নির্বাচনে যাব। জয়ী হলে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে চাইব। বিরোধী দলে থেকে আমরা জনগণের জন্য কাজ করব। জোটের পক্ষ থেকে ১০০ আসনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি রয়েছে।কল্যাণ পার্টি ২০১২ সালে ১৮ দলীয় জোটে ছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়।

এ সম্পর্কে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ওই সময় প্রচণ্ড চাপ থাকার সত্বেও নির্বাচনে যাইনি। ২০১৫ সালে ২০ দলীয় জোট হয়। ওই সময়ে ডাকা অবরোধ স্বাভাবিক ভাবে নিশ্চুপ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের প্রস্তুত্তি নেয়। এই সময়ও নানা প্রস্তার দেওয়া হয়। সেখানে আমরা যাইনি। ওই সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছিলো। ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত করা হয়। ২০২২ সালে ১২ টি দল নিয়ে জোট গঠন করা হয়।

নতুন গঠিত জোটভূক্ত দলগুলোর মাধ্যমে যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে বলে জানানো হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট বলছে, তাদের দরজা খোলা। যখন খুশি যে কেউ যুক্ত হতে পারবে।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করেন সৈয়দ ইবরাহিম। তারা আশা, আগামী নির্বাচন অতীতের তুলনায় শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হবে। অতীতের ‘ভুলগুলি সরকার করবে না’ বলে মনে করে তিনি।

যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে। সংলাপের দাবিও তোলে। ইবরাহিম বলেন, সকল পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার ব্যবস্থা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।জোটের প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানানো হয়েছে।

সরকার পতনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল ও অবরোধ চলার মধ্যে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী দল থেকে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকেও অবসরে যান।গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে চেয়ারপারসন ও বিএনপির আরেক সাবেক নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে মহাসচিব করে তৃণমূল বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। দলটি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button