০০ যাচাইয়ে বাদ ১০ সংসদ সদস্য
০০ বাদ আ’ লীগ মনোনীত একাধিক প্রার্থী
০০ কপাল খুলছে নতুন দল ও মিত্রদের
বিশেষ প্রতিনিধি : মনোনয়ন বাছাইয়ে বেহাল দশায় পড়েছেন নেতারা। নানা ধরনের জাল জালিয়াতি করে ভুল তথ্য দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় তা বাছাইয়ে ধরা পড়ছে। এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন ১০ জনের মতো সংসদ সদস্য ও একাধিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা। বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত একাধিক প্রার্থীও। তাদের বাদ পড়ায় কপাল খুলতে পারে আওয়ামী লীগের একাধিক নতুন মিত্র দলের। বাছাইয়ে বাদ পড়া সংসদ সদস্যদের আসনে তৃণমূল বিএনপি, কল্যাণ পার্টির একাধিক নেতাকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখা যেতে পারে।
যেসব সংসদ সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তারা হলেন- বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরী, গণ ফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বি এইচ হারুন, দিদারুল আলম, মামুনুর রশীদ কিরণ প্রমুখ।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া নেতারা নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। আপিল নিষ্পত্তির পর বোঝা যাবে গতকাল মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না।
বিকল্প ধারা বাংলাদেশ গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দুটি আসনে জয় পায়। দলের মহাসচিব আব্দুল মান্নান নোয়াখালী-৪ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য হন। এবারও তারা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তবে গতকাল দুই নেতার মনোনয়নপত্রই বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ঋণখেলাপির অভিযোগে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সন্তান মাহী বি চৌধুরী এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার আশায় ছিলেন। কিন্তু গতকাল খেলাপি ঋণের জামিনদার হওয়ায় মাহীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এ আসনে তৃণমূল বিএনপির নির্বাহী চেয়ারম্যান অন্তরা সেলিমা হুদা প্রার্থী হয়েছেন। তার মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে এ আসনে অন্তরা সেলিমা হুদাকে সমর্থন দিতে পারে আওয়ামী লীগ।
বিকল্পধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নানের আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি নোয়াখালী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। এবার কপাল খুলতে পারে একরাম চৌধুরীর।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ আসনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ মনোনয়ন ফিরে না পেলে আসনটিতে মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে সমর্থন দিতে পারে আওয়ামী লীগ। কল্যাণ পার্টি দীর্ঘদিন বিএনপি জোটে থাকলেও সম্প্রতি তারা জোট থেকে বেরিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। দলের নির্বাহী সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিলেও তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ দাখিল না করায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইয়াহইয়াহ চৌধুরীর মনোনয়নপত্র স্থগিত হয়েছে। কর-সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা না দেওয়ার কারণে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এ আসনটি বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
পটুয়াখালী-১ আসনে মনোনয়নপত্র স্থগিত হয়েছে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন।
নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আসনটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি জাকের পার্টি ও সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থীর মনোয়নপত্র বৈধ হয়েছে।
ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ওই আসনে সদ্য বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বেশির ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী বাদ পড়েছেন এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন পূরণ করতে না পারা এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির কারণে। আর বেশির ভাগ দলীয় প্রার্থী বাদ পড়েছেন হলফনামায় তথ্য গোপন ও ঋণখেলাপির কারণে। দেশের ৪০টি আসন থেকে খবরের কাগজের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে বিষয়টি নিশ্চত হওয়া গেছে।
ঝালকাঠি-১ আসনে ভোটারদের স্বাক্ষর গরমিলে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির, ইসমাইল হোসেন, নুরুল আলম ও ব্যারিস্টার আবুল কাশেম মো. ফকরুল ইসলাম।
বরগুনা-১ আসনে মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর পাওয়ায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খলিলুর রহমান এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নুরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
বরগুনা-২ আসনে ভোটারদের স্বাক্ষরে গরমিল পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ঝালকাঠি-২ আসনে আয়কর জমা না দেওয়ায় জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দীন ইমরানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
ভোলা-১ আসনে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের তথ্য ঠিক না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
সাতক্ষীরা-২ আসনে ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আব্দুল আজিজের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রাজশাহীর ছয়টি আসনে ৬০ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া ৭ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগই বাদ পড়েছেন ১ শতাংশ ভোটারদের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে।
রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, আগে কখনো নির্বাচিত হননি, আবার দলীয় প্রার্থীও নন এমন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। তারা প্রার্থীদের দেওয়া এই স্বাক্ষর থেকে ১০ জন করে ভোটারের তথ্য যাচাই করেছেন। এতে কারও কারও তালিকায় গরমিল পাওয়া গেছে। আবার কারও মামলা কিংবা ঋণসংক্রান্ত সমস্যা আছে। সেই কারণে ১৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৭ জনের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। অন্য ৩৬টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর-১ আসনে ঋণখেলাপির অভিযোগে জাতীয় পার্টির নেতা এম এম নিয়াজ উদ্দিনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। জামালপুর-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির গোলাম মোস্তফা হলফনামা সঠিকভাবে দাখিল না করায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক ও মাহবুবুল হাসানের প্রদান করা ১ শতাংশ ভোটার তালিকা সঠিক না থাকায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী আব্দুল হালিম মণ্ডল হলফনামা সঠিকভাবে দাখিল না করায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক জিয়া, এম এম শাহিনুজ্জামান ও শাহজাহান আলী মণ্ডলের প্রদান করা ১ শতাংশ ভোটার তালিকা সঠিক না থাকায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলামের প্রদান করা ১ শতাংশ ভোটার তালিকা সঠিক না থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ভোটারদের স্বাক্ষরে গরমিল থাকায় শরীয়তপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা এবং শরীয়তপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. খালেদ শওকত আলীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
নড়াইল-২ আসনে ভোটার স্বাক্ষরে গরমিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু ও নুর ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মেহেরপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত পাঁচ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম জুয়েল, নুরুল ইসলাম রিন্টু, জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, ডক্টর আশরাফুল ইসলাম ও গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মুকুল।
তারা ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের শর্ত পূরণ করতে পারেননি।
ফরিদপুর-১ আসনে হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আরিফুর রহমান দোলনের ফরমে মনোনীত প্রার্থীর ঘরে স্বাক্ষর না থাকায় তা বাতিল বলে ঘোষণা দেন রিটার্নিং অফিসার।