ফটিকছড়িতে একতারা বাজবে
সনি আউট- সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যানকে নৌকার সমর্থন-
স্টাফ রিপোর্টার /ফটিকছড়ি সংবাদদাতা: ফটিকছড়িতে এবার একতারা বাজবে। সুপ্রিম পার্টির প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে- বুধবার থেকে ফেসবুকে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর শুক্রবার তা সত্যে পরিণত হলো। অথচ বৃহস্পতিবার ২৮ ডিসেম্বর ফটিকছড়িতে এ নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন এমন খবরকে গুজব দাবি করে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা। তিনি শুক্রবার দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিনকে বলেন, আমাকে ফোন দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। শুরুতে তিনি বলেছেন বিষয়টা। পরে ওবায়দুল কাদের সাহেবও ওই ফোন থেকে কথা বলেন। ওনারা বললেন যে, ফটিকছড়িতে একতারা বাজাতে হবে। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত, নেত্রী সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন ওনাদের। ঘোষিত তফসীল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণের দশ দিনেরও কম সময় আগে দলীয় এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে হঠাৎ বদলে গেছে নির্বাচনি সমীকরণ। চট্টগ্রামের একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে দলটির এ সিদ্ধান্তে। এই আসনে একতারা প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারীকে আওয়ামী লীগ সমর্থন জানিয়েছে বলে জানা গেছে। এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি ইস্যু না হলেও ফটিকছড়িতে একতারা বাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে নৌকা পেয়ে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করলেও মাঝপথে এসে আশাহত হতে হচ্ছে সনিকে।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দুই মেয়াদে জোটের মনোনয়ন পান শরিকদল তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের চাওয়া ছিল- এবার অন্তত দলীয় কেউ যেন মনোনয় পায়। নেতা-কর্মীদের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটে মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তেও। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। মনোনয়ন পাওয়ার পরও গুঞ্জন ছিল, শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করলে আসনটিতে মনোনয়ন ফের তরিকত ফেডারেশনের হাতেই যাবে। আসন নিশ্চিত হয়েছে জানিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্যও দিয়েছিলেন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তবে কেউ কেউ অবশ্য আসনটি সদ্য আত্মপ্রকাশ করা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির হাতে যাচ্ছে বলেও ধারণা করেছিলেন।
আপাতদৃষ্টিতে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠকের পর। ভাগাভাগিতে এবার কোনো আসন পায়নি তরিকত ফেডারেশন। প্রতীক বরাদ্দের পর শতভাগ নিশ্চিত হয় সনির টিকিট। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে নির্বাচনি প্রচারণাও শুরু করেন তিনি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রতীক ফুলের মালা নিয়ে মাঠে নামেন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। সনি-নজিবুল ছাড়াও এই আসনে লড়ছেন আরও ৭ জন।
এরমধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাত করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, ফটিকছড়ি আসনে সুপ্রিম পার্টিকে সমর্থন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। পরদিন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনকে গুজব দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ওই সমাবেশের ঘণ্টা দুয়েক পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ আতাউর রহমান আতা এবং ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তাদের নির্দেশ- ফটিকছড়িতে নৌকা নয়, এবার বাজাতে হবে একতারা।
ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরি বলেন, ওনারা কথা বলেছেন, আমাকে পরিস্থিতি কেমন জিজ্ঞেস করেছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনই নেতা-কর্মীরা নাখোশ; সবাই ক্ষুব্ধ। নির্বাচনের মাঝে ভোটগ্রহণের কয়েকদিন আগে এমন সিদ্ধান্ত। কেমনে কী? এতদিন একজনের প্রচারণা করে এখন সবাই কীভাবে ভোটারদের কাছে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে তবে চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে দলীয় সিদ্ধান্তের এই পরিবর্তন বিষয়ে জানতে চাইলে এখনও কিছু জানেন না বলে জানান আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।